এমএম নাজমুল হাসান
Advertisement
আজ ৫ আগস্ট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনে দ্যুতি ছড়ানো ক্ষণজন্মা শেখ কামালের ৭৪তম জন্মদিন। পিতা স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছায়া থেকে বের হয়ে স্বীয় মেধা ও যোগ্যতায় উদ্ভাসিত হয়ে মেলে ধরা নাম শহীদ শেখ কামাল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় এবং জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের এই দিনে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে শাহাদতবরণ করেন শেখ কামাল।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল শাহীন কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে বিএ অনার্স পাস করেন এবং মাস্টার্সের পরীক্ষার্থী থাকাবস্থায় ১৫ আগস্ট রাতে ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত হন।
Advertisement
শেখ কামাল ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেন এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দেশ স্বাধীনের পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি দিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজে সাংস্কৃতিক আবহ গড়ে তোলার জন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সংগঠন গড়ে তোলেন। এছাড়া তরুণ সমাজকে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধ থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শহীদ শেখ কামাল ছিলেন একাধারে ছায়ানটের সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র, দক্ষ সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠক, নাট্যাভিনেতা। এর বাইরে শেখ কামাল ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মঞ্চনাটকের পাশাপাশি শিল্পী বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন’ শিল্পীগোষ্ঠী। এছাড়া তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
Advertisement
মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠক এবং বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম ফুটবল ক্লাব ‘আবাহনী ক্রীড়াচক্রের’ প্রতিষ্ঠাতা। জাতির এই সূর্যসন্তান দেশের নান্দনিক ফুটবলসহ অন্যান্য খেলার মান্নোয়নে যে অবদান রেখেছে তা লাল-সবুজের এই স্বাধীন ভূখন্ডের জনগণ অবনত মস্তকে স্মরণ করবে।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার একজন দক্ষ সংগঠকের বাইরেও ছিলেন একজন দক্ষ রাজনৈতিক কর্মী। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
শেখ কামাল ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘‘ব্লু ’’ খ্যাতিপ্রাপ্ত দেশসেরা অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের মতো একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারীকে হত্যা করে শুধু একটি পরিবারকে ধ্বংস করা হয়নি, ধ্বংস করা হয়েছে স্বাধীন বাংলার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনকে। আজও দেশের ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এমন একজন চৌকস শেখ কামালের বড় প্রয়োজন। জাতির এ অপূরণীয় ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। জাতির এই সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: প্রতিবেদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)|
এইচআর/জিকেএস