পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশীতে দেশের সর্ববৃহৎ রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এমন ভাঙন এখানে দেখা যায়নি। মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে ব্রিজের ৩নং পিলার (গার্ডার) থেকে ২নং পিলার পর্যন্ত নদীর চর ভেঙে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন সেতুরও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সরেজমিন পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিজের নিচে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ব্রিজের নিচে অস্থায়ী গড়ে ওঠা ফুসকা ও চটপটি বিক্রেতা জিয়া বলেন, চলতি বছরের শুরুতে ৪নং পিলারের কাছে চর ছিল এখন চর ভাঙতে ভাঙতে তা ২নং পিলারের কাছে চলে এসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুরা ব্রিজের নিচে চরের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে আসেন। অস্থায়ী দোকানপাটে তারা কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়া করেন। এভাবে নদীর তীর ভাঙতে থাকলে এখানে আর মানুষজন আসবে না। আমাদের ব্যবসাও থাকবে না। এ চর ভাঙন রোধে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর মাঝে প্রায় ২৫ একর জমিতে আখ ও কলাসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করেছেন রূপপুর গ্রামের আরব আলী ও জবান আলী। তারা জানান, দ্রুত গতিতে ভাঙছে পদ্মার চর। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে প্রায় তিন দশক ধরে আবাদ করছি। এমন তীব্র ভাঙন কখনো দেখিনি। এরই মধ্যে কলার বাগানসহ বেশকিছু জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতা দেখে মনে হচ্ছে ব্রিজের আশপাশের চর ভেঙে নদীতে বিলিন হয়েছে।
পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেজ রিডার হারিফুন নাঈম ইবনে সালাম বলেন, গত ১০ দিনের ব্যবধানে পদ্মায় পানি বেড়েছে দুই মিটারের বেশি। ২৫ জুলাই পানির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। আর বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টায় পানির পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার। প্রতিদিনই পদ্মায় গড়ে ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বাড়ছে। একই সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মার চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
Advertisement
পাকশী রেলওয়ে বিভাগের সেতু প্রকৌশলী নাজিব কাওছার জাগো নিউজকে বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পিলারের আশপাশের স্থান নদীতে ভেঙে গেলেও ব্রিজের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ ব্রিজের পিলার নদীর গভীরে পাইলিং করে স্থাপন করা হয়েছে।
নদী রক্ষা বাঁধের ক্ষতির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার আমার কথা হয়েছে। যৌথভাবে নদীর তীর পরিদর্শন করে নদী ভাঙন রোধে একটি নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন জাগো নিউজকে বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আশপাশের এলাকাসহ সাঁড়ায় ভাঙন রোধে গত বছর জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। এবার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি জেনেছি। পানি কমতে শুরু করলে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে ভাঙন প্রসঙ্গে বলেন, এ ভাঙনে ব্রিজ বা নদী রক্ষা বাঁধের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। নদীর চর ভাঙবে ও জাগবে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমরা এ বিষয়টি নজরে রেখেছি। কোনো ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement
শেখ মহসীন/এমআরআর/জেআইএম