দেশজুড়ে

নওগাঁয় চাল নিয়ে বিপাকে চালকল মালিকরা

নওগাঁয় প্রায় ৭০ ভাগ চালকল-চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদিত চাল পাইকারের অভাবে অবিক্রিত থাকায় ও ব্যাংক ঋণের সুদে জর্জড়িত হয়ে পড়ায় মালিকরা চালকল-চাতাল বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। খেলাপি ঋণের দায়ে পড়েছেন অন্তত ৬শ মিল মালিক। ব্যাংকের লেনদেনে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক চালকল মালিক জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমেও বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানি, ব্যাংকের উচ্চ সুদের ঋণ আর দেশে উৎপাদিত চালের সরকার নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে আমদানিকৃত চালের মূল্যের সমন্বয় না থাকাই ব্যবসায়ীদের লোকসানের মূল কারণ। নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, উচ্চ সুদে ব্যাংক ঋণ আর বিদেশ থেকে ভরা মৌসুমে চাল আমদানি করার কারণে দেশের চালকল ব্যবসায়ীরা পথে বসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে নওগাঁর ৬শ মিল মালিক ব্যাংক ঋণ খেলাপি হয়েছেন। শ্রমিক কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়েছে। এখন আমন মৌসুম চলছে, এ সময় বিদেশ থেকে চাল আমদানি করার কোনো প্রয়োজন দেখছি না। নওগাঁ জেলা ধান চাল ও আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরন সাহা চন্দন জানান, নওগাঁ দেশের বৃহৎ চালের বাজারে পাইকারদের আগমন নেই। মিল মালিকরা লোকশান গুনতে গুনতে বাধ্য হয়ে মিল বন্ধ করে দিচ্ছে। একদিকে আমদানিনির্ভর চালের বাজার মূল্য তার সঙ্গে ব্যাংক ঋণের উচ্চহারে সুদ সব মিলে চাল ব্যবসায়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। কৃষক, শ্রমিক, মধ্যম ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিশেষ করে যারা চাল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত তাদের বাঁচাতে হলে ভরা মৌসুমে বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সারোয়ার আলম কাজল জানান, সরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অবশ্যই চাল বিদেশ থেকে আমদানি করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কৃষক বাঁচাতে দেশে উৎপাদিত চালের মূল্য পুনরায় নির্ধারণ করার বিষয়ে জরুরি ভাবে সরকারকেই বিবেচনা করতে হবে। আমন ধান এবার আশানুরূপ উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। তারা উৎপাদন ব্যয় উঠাতে পারবে না। সরকারি ভাবে এবার দেশে উৎপাদিত চালের মূল্য ৩২ টাকা প্রতি কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ বিনা শুল্কে আমদানি করা চাল সরকার নির্ধারিত দেশী চালের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি। নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় পৃথক পৃথক দিনে বিভিন্ন দাবি নিয়ে মিল মালিকদের র‌্যালি, সভা, মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করার কর্মসূচি অব্যাহত আছে। আগামী ৩০ নভেম্বর নওগাঁয় ওই কর্মসূচির দিন ধার্য করা হয়েছে। নওগাঁ জেলায় আটোমেটিক রাইস মিলসহ প্রায় ১৫শ চালকল রয়েছে। এতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক জড়িত। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ চালকল চাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, তার ব্যাংকে চাল ব্যবসায়ীদের লেনদেনের বিষয়টি খুবই খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক চাল ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে। কিন্তু চাল ব্যবসায়ীরা ভালো বাজার না পেয়ে ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে সুবিধা করতে পারছেন না।

Advertisement