দেশজুড়ে

টিসিবিতে পচা পেঁয়াজ বিক্রির অভিযোগ

রাজশাহীতে ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে পচা পেঁয়াজ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বিরুদ্ধে। পেঁয়াজ না কিনলে ক্রেতাদের টিসিবির অন্য কোনো পণ্য দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ ভেজা ও দুর্গন্ধযুক্ত এ পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Advertisement

একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ এক কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি পেঁয়াজ ও দুই লিটার তেল কিনতে পারছেন। প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, ডাল ৬৫ টাকা ও পেঁয়াজ ২০ টাকা দরে এবং তেল লিটারপ্রতি ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য পেয়ে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন উপকারভোগীরা। তবে পেঁয়াজের অবস্থা খুব একটা ভালো না হওয়ায় পেঁয়াজ নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখা গেছে ক্রেতাদের মধ্যে। তবে ডিলাররা বলছেন, একটি পণ্য বাদ রেখে অন্য পণ্যগুলো দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগরীর ১০টি ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শহরের ৩০টি ওয়ার্ড এবং জেলার প্রত্যেক উপজেলা পর্যায়েও ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হবে।

আগের মতো এখন আর ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে না। পরিবেশকের দোকান কিংবা নির্দিষ্ট স্থান থেকে পণ্যগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। নিজের ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে গিয়ে নিম্নআয়ের মানুষ সেখান থেকে পণ্য কিনতে পারছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছিল রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে। সেখানে পচা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল। মহানগরীর অন্য স্থানগুলোতেও খোঁজ নিয়ে পচা পেঁয়াজ বিক্রির কথা জানা গেছে।

মহানগরীর ১নং ওয়ার্ডের কাশিয়াডাঙ্গা মোড়ে লম্বা লাইনে মুখে কাপড় দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নারীরা। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই সাবিনা বেগম বললেন, ‘নাক নাই? দেখতে পাচ্ছেন না পেঁয়াজের কী গন্ধ!’

সাবিনার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জরিনা বেগম। বললেন- ‘এ পেঁয়াজ তো খাওয়া যাবে না। সব পচা! আবার পেঁয়াজ না নিলে তেল, ডাল, চিনি দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে এ পেঁয়াজও নিতে হচ্ছে।’

কাশিয়াডাঙ্গায় পেঁয়াজ বিক্রি করছিল টিসিবির পরিবেশক সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ। এর স্বত্বাধিকারী হামিদুল ইসলাম সুজন বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের যা দিচ্ছে আমরাও তাই দিচ্ছি।

Advertisement

তিনি জানান, প্যাকেজ হিসেবে চাল, চিনি, তেল ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। একটি রেখে অন্যটি কেনার সুযোগ নেই। ক্রেতাকে একসঙ্গে সবই কিনতে হচ্ছে।

মহানগরীর ২নং ওয়ার্ডে পণ্য বিক্রি করছিল মেসার্স গোলাপ স্টোর। সেখানে গিয়ে পেঁয়াজের মান আরও খারাপ দেখা যায়। এখানেও পরিবেশকের কর্মচারী আনসার আলী বিক্রি করার সময় হাতে পেঁয়াজ স্পর্শ করছিলেন না। বোমা (পেঁয়াজ তোলার পাত্র) দিয়ে পেঁয়াজ তুলে ব্যাগে ঢোকাচ্ছিলেন। আনসার বলেন, পচা পেঁয়াজ শরীরে ঠেকলেই চুলকাবে।

পেঁয়াজ কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হড়গ্রাম নতুনপাড়ার বাসিন্দা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, বাজারে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে ভালো মানের পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এখানে ২০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে এ পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পেঁয়াজ। এটা গরিবের সঙ্গে তামাশা। এ পেঁয়াজ না কিনলে আবার তেল, চিনি, ডাল দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে পচা পেঁয়াজও কিনতে হচ্ছে।

মেসার্স গোলাপ স্টোরের স্বত্বাধিকারী গোলাম রসুল বলেন, ফ্যামিলি কার্ড করার আগে প্যাকেজ ছাড়া পণ্য বিক্রি করা যেত। ফ্যামিলি কার্ডের পর আর সেটা সম্ভব না। তাই সবাইকে সব পণ্যই কিনতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ক্রেতারা পচা পেঁয়াজ কিনছেন। টিসিবি আমাদেরকে এ পেঁয়াজ দিয়েছে, আমরাও দিতে বাধ্য হচ্ছি।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা গরিব মানুষকে ফ্যামিলি কার্ড করে দিয়েছি। এখন এ কার্ড নিয়ে এসে মানুষ পচা পেঁয়াজ কিনছে। এখন আমাদেরই তো বদনাম হচ্ছে। আমি টিসিবিকে বলেছি, পচা পেঁয়াজ দিয়েন না। কিন্তু তারা দেবে। এ পেঁয়াজ মানুষ খেতে পারবে না। ফেলে দিতে হবে।

এনায়েত করিম/এমআরআর/জেআইএম