দেশজুড়ে

লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্প

তাঁতশিল্পের ব্যাপক বিস্তারে অনেকটাই এই শিল্পনির্ভর সিরাজগঞ্জ জেলা। এখানকার উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, থ্রিপিছসহ বিভিন্ন পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। গত দু’বছর করোনা ও বন্যায় এই শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এবার ঈদ উপলক্ষে দীর্ঘদিন তাঁত বন্ধ থাকার পর যখন শ্রমিকেরা কারখানায় ফিরছেন ঠিক তখনই শুরু হয়েছে লোডশেডিং।

Advertisement

বিদ্যুৎ স্বাভাবিক না থাকায় এ জেলার দক্ষিণাঞ্চলের বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া উপজেলার তাঁতশিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ চালিত পাওয়ারলুম কারখানায় কমে যাচ্ছে কাপড় উৎপাদন। ফলে দিশেহারা এ অঞ্চলের শত শত তাঁত কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা।

সরকারি একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দেশব্যাপী এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বেলকুচির তামাই, চালা, চন্দনগাঁতি, শেরনগর, চৌহালীর, এনায়েতপুর, খুকনী, গোপরেখি, রুপনাই, গোপালপুর, বটতলা ও উল্লাপাড়া উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব এলাকায় অন্তত ৮৫ হাজার তাঁত শ্রমিক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় পৌনে এক লাখ বিদ্যুৎচালিত তাঁতের চাকা কিছুক্ষণ চালু হওয়ার পরই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়ে এসব কারখানার প্রায় ২৯ কোটি টাকার কাপড় উৎপাদন ও বিপণনে সমস্যা শুরু হয়েছে।

বেলকুচির শেরনগর ও চন্দনগাঁতি গ্রামের কয়েকটি তাঁত কারখানা ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রমিকেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

Advertisement

চন্দনগাঁতি গ্রামের পাওয়ারলুম শ্রমিক আব্দুস সাত্তার বলেন, আমি প্রায় ২৫ বছর হলো তাঁত শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ৭ জনের সংসার পরিচালনা করে আসছি। কাজ যতোই কম থাকুক না কেন প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা কামাই করি। কিন্তু এক সপ্তাহ হলো কারেন্টে ডিস্টার্ব (লোডশেডিং) থাকায় ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। যার কারণে এ সপ্তাহে আমার কামাইও কমে গেছে। কারেন্ট যদি এভাবে ডিস্টার্ব করতে থাকে তাহলে আমার মতো সবারই কামাই কমে যাবে। আর কামাই কমে গেলে তো সংসার চালাতে পারবো না।

শেরনগর গ্রামের তাঁত শ্রমিক রহিজ উদ্দিন বলেন, ‘এক সপ্তাহ হলো কারেন্ট জ্বালাতন শুরু করছে। যার কারণে আমাদের কাজ কাম কমে গেছে। এভাবে যদি কারেন্ট জ্বালায় তাহলে আমাদের আয় কমে যাবে। আয় যদি কমে যায় তাহলে সংসার চালবো কেমন করে। এ নিয়ে চিন্তা করে ঝিম ধরে বসে রয়েছি।’

আর তাঁত কারখানা মালিকরা জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের বিদ্যুৎচালিত তাঁতের চাকা বন্ধ হওয়া মানে পরিবার নিয়ে চরম বিপদে পড়া।

তারা আরও বলেন, বিদুৎ সংকট দীর্ঘমেয়াদী হলে আমাদের অনেক ব্যবসায়ী বিপদে পড়ে যাবেন। কারণ আমরা অনেকেই লুঙ্গি ও শাড়ির কোম্পানিগুলো থেকে কাপড় দেওয়ার শর্তে অগ্রীম টাকা নিয়ে আছি। বিদ্যুৎ না থাকলে শ্রমিকেরা কাপড় উৎপাদন করতে পারবে না। আর আমরা কোম্পানিগুলোতে কাপড়ও দিতে পারবো না। আর কাপড় না দিতে পারলে আর অর্ডারও পাবো না। অর্ডার না পেলে ব্যবসায় লোকসান হয়ে যাবে।

Advertisement

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাওয়ারলুম অ্যান্ড হ্যান্ডলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রী বৈদ্য নাথ রায় জানান, তাতের ওপর নির্ভর করে আমাদের সিরাজগঞ্জের মানুষের আয় ব্যয়। সাম্প্রতিক সময়ে যে লোডশেডিং শুরু হয়েছে তা যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য থেকে যায় তাহলে তাঁতিদের ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে। আর তাঁতের ব্যবসা টিকে না থাকলে এ এলাকার লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে যাবে। তাই সরকারের ব্যবসায়ীদের দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত।

এফএ/জিকেএস