বিলবোর্ডসন্ত্রাসে চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান সড়কগুলো থেকে সবুজের চিহ্ন মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সুসংবাদ হলো, দেরিতে হলেও পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে, শ্যামল চাটগাঁ ফিরে পাচ্ছে তার হারানো সুদিন। অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের ফলে রাতারাতি বদলে যাচ্ছে বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের চেহারা, ফিরছে সবুজের ধারা। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে চট্টগ্রামে চলছে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান। দিনে অভিযান চালালে যান চলাচলে সমস্যা হয় বলে এ অভিযান চালানো হচ্ছে রাতে; সড়কে যখন যানবাহনের চাপ কম থাকে। মাত্র সপ্তাহ দুয়ের এ অভিযানেই সুফল পেতে শুরু করেছেন চট্টগ্রামবাসী। এতদিন যেখানে ভোরের মিষ্টি রোদের ছোঁয়া লাগতো না, সেখানে এখন দিব্যি এসে পড়ছে সকালের রোদ। দেখা যাচ্ছে আকাশের নীল, পথচারীর গায়ে লাগছে ফুরফুরে হাওয়া। এমন চট্টগ্রামকেই সবাই বলেতে চান সত্যিকারের ‘হেলদি চট্টগ্রাম।’ অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদে যে আর কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের কথায় তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, নগরীর মধ্যে অবৈধ সবগুলো বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হবে। সৌন্দর্য রক্ষার্থে কোনো বিলবোর্ড থাকতে দেওয়া হবে না। সবগুলো বিলবোর্ড উচ্ছেদ করার পর প্রয়োজনের তাগিদে নীতিমালা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ গ্রহন করা হবে। বিলবোর্ড অপসারণে হস্তক্ষেপ কামনা করে চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর সম্পাদকরা ২০১৩ সালের ১৯ জুন তৎকালীন মেয়র এম মনজুর আলমের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। সম্পাদকদের এ ধরনের উদ্যোগের পর মেয়র মনজুর আলম ঘোষণা দেন, নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার্থে প্রয়োজনে সব বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হবে। মেয়রের ঘোষণার বাস্তবায়ন শুরুও হয় কয়েকদিনের মধ্যে। তারই মধ্যে বিলবোর্ডের বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে নানা কথা শুরু হয়। চসিক কোন বিলবোর্ড নবায়ন বা নতুনভাবে অনুমোদন না দিলেও এ সময়ে অনেক বিলবোর্ড মালিক নিজেদের বিলবোর্ড বৈধ বলে দাবি করে বসেন। এ অবস্থায় উচ্ছেদ অভিযানে ভাটা পড়ে। ২০১৪ সালে নগর পুলিশও বিলবোর্ড উচ্ছেদ কার্যক্রমে অংশ নেয়। চসিকের পক্ষ থেকে ৪২২টি অবৈধ বিলবোর্ডের তালিকাও তৈরি করা হয়। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সবগুলো বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হবে বলে ঘোষণা দেন। সে মোতাবেক কাজও শুরু করেন তিনি। ২ নম্বর গেটসহ কয়েকটি এলাকায় মেয়র নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিলবোর্ড উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও প্রশংসা পান তিনি। তবে কয়েকদিন অভিযান চালানোর পর আ জ ম নাছিরের উদ্যোগেও ভাটা পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় অভিযান। অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নগরীতে আবার অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা বেড়ে যায়। গোটা শহরটাই যেন বিলবোর্ডের শহরে পরিণত হয়। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে চসিক। তবে এবার দিনে নয়, রাতেই অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের পাঁচজন দক্ষ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নতুন গতিতে শুরু হয় বিলবোর্ড উচ্ছেদ কার্যক্রম। প্রথম সপ্তাহেই তাক লাগানো সফলতা আসে অভিযানে। এক সপ্তাহের মধ্যে চারশতাধিক বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়। ফিরতে শুরু করে চট্টগ্রামের হারানো সৌন্দর্য। অভিযানের সফলতার চিত্র উঠে আসে আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা নজির আহমদের কথায়। তিনি বলেন, এতোদিন শহরের সবকিছুই বিলবোর্ডে ঢাকা ছিল। এখন আস্তে আস্তে সৌন্দর্য চোখে পড়ছে। আগে সড়কে চলার পথে যে দিকে তাকাতাম, শুধু বিলবোর্ড আর বিলবোর্ড দেখতাম। কিন্তু গত এক সপ্তাহ টানা অভিযান চালানোর পর এখন চোখে স্বস্তি পাচ্ছি। জীবন মুছা/এনএফ/এমএস
Advertisement