দেশজুড়ে

ধ্বংসের মুখে শেরপুরের রাবার শিল্প

এক সময় ‘সাদা সোনা’ বলা হলেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর দাম না থাকায় ধ্বংসের মুখে শেরপুরের রাবার শিল্প। সম্প্রতি বিদেশ থেকে রাবার আমদানির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাগান মালিকরা। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর বাগান মালিকদের চাহিদা মোতাবেক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুরে একটি সরকারি ও দুইটি ব্যক্তি উদ্যোগের রাবার বাগান রয়েছে। এর মধ্যে এখন কেবল জিএস রাবার বাগান থেকে উৎপাদন হচ্ছে। বাগান মালিকরা বলছেন, এ শিল্প নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা না থাকা, সনাতন চাষ পদ্ধতি, নতুন শিল্পোদ্যোক্তাদের আগ্রহ সৃষ্টি না হওয়া এবং সরকারের উদাসীনতার কারণেও রাবার শিল্প তার সুদিন হারাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মহাসংকটে পড়বে এ খাত।

শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলায় অবস্থিত জিএস রাবার বাগান প্রকল্প। ১৯৮৯ সালে প্রায় ৮০ একর জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে রাবার বাগানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রয়াত ইদ্রিস মিয়া। বাগানটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি গারো পাহাড় এলাকায় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই বাগানটিকে আরও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। রাবার বাগানটি ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশের গারো পাহাড়ে অবস্থিত।

বাগানটিতে ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজারসহ মোট ২০ জন কর্মচারী আছেন। এছাড়া প্রতিদিন আরও বেশ কয়েকজন স্থানীয় শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে থাকেন। রাবার উৎপাদন ছাড়াও এই বাগানের আশপাশে অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম। বাগানের সারিবদ্ধ গাছ, সবুজের সমারোহ, বন্যপ্রাণীর ছোটাছুটি, রাবার আহরণ, উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি দেখার জন্য এখানে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে পর্যটনকেন্দ্র।

Advertisement

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগানে রোপণ করা গাছের কমপক্ষে সাত বছর হলে রাবার উৎপাদন শুরু হয়। বিশেষ পদ্ধতিতে রাবার গাছ থেকে কষ সংগ্রহ করে কারখানায় মজুত রাখা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা জিএস রাবার বাগানের আট হাজার গাছের মধ্যে রাবার উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ছয় হাজার গাছে। প্রতি কেজি রাবারের (কষ) বর্তমান মূল্য ১৩০ টাকা। গতবছর ৩৬ টন রাবার বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন বাজারে। যার বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা। অথচ এই বাগান থেকেই এক সময় বার্ষিক ৬০ থেকে ৮০ লাখ টাকার রাবার বিক্রি হতো। বিদেশ থেকে রাবার আমদানি শুরুর পর থেকে জৌলুশ হারিয়েছে এই বাগানটি।

এদিকে, নিয়মিত পরিচর্যা আর পরিশ্রমের পরেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ বাগানের মালিকপক্ষ। বাগানের ম্যানেজার মাসুদ মিয়া বলেন, রাবার চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত এই বাগানের প্রতি সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হলে এই সাদা সোনা ফের বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনীয় সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে এই পাহাড়ি এলাকায় রাবার বাগানের সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এতে যেমন দেশের রাবারের চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে গ্রামীণ পাহাড়ি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ফলে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

রাবার শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা চান উদ্যোক্তারা। ইদ্রিস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের পরিচালক গুলজার মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়া বলেন, জিএস রাবার প্রকল্পে উৎপাদন ভালো হচ্ছে, তবে বাজারে বিদেশি রাবার প্রবেশ করায়, গুণগতমানসম্পন্ন এই রাবার বাজার হারিয়েছে। সরকারের নজরদারি ও সহযোগিতা পেলে এই রাবার থেকে লাভের মুখ দেখা সম্ভব।

Advertisement

উদ্যোক্তাদের চাহিদা মোতাবেক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, স্থানীয় উদ্যোক্তারা যদি রাবার শিল্প নিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে লিখিতভাবে জানায়, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।

এমআরআর/জিকেএস