ঢ্যাঁড়শ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এক সবজি। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণের মধ্যে আছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স।
Advertisement
ঢ্যাঁড়শে থাকা পুষ্টি উপাদানসমূহ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
এতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগসমূহ। বিশেষজ্ঞদের মেতে, ঢ্যাঁড়শ খুবই উপকারী এক সবজি। ২৪ ঘণ্টা ঢ্যাঁড়শ পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে তা পান করলে শরীরের নানা উপকার হয়। ক্রীড়াবিদরা নিয়মিত এই পানীয় পান করেন।
বিজ্ঞান বলছে, ঢ্যাঁড়শে মিউকিলেজে র্যামনোজ, গ্যালাকটোজ ও গ্যালাক্টুরনিক অ্যাসিডসহ স্বাস্থ্যকর শর্করা আছে। যা গ্যাস্ট্রিকের জ্বালা ও প্রদাহের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। এশিয়ান ওষুধে ব্যবহৃত হয় ঢ্যাঁড়শ।
Advertisement
এই সবজি ভেজনো পানিতে দ্রবণীয় মিউকিলেজ থাকে। এছাড়াও এতে থাকে ফেনোলিক যৌগ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢ্যাঁড়শে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পানিতে সহজেই দ্রবণীয় হয়। রান্না করলে সবটুকু পুষ্টিগুণ মেলে না।
ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. দেবাঞ্জন ব্যানার্জী বলেন, ‘ঢ্যাঁড়শ ম্যাঙ্গানিজের একটি বড় উৎস। এতে থাকা খনিজ উপাদান রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।’
ডা. ব্যানার্জী আরও যোগ করেন, ‘এতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি আছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ও ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বার্ধক্যজনিত লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।’
এই চিকিৎসকের মতে, ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানি সত্যিই দুর্দান্ত এক পুষ্টিকর পানীয়। এটি বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে। ওজন কমানো থেকে শুরু করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মতো কঠিন গুরুতর সমস্যার সমাধান মেলে ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানি পানেই। জেনে নিন ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানি পানের উপকারিতাসমূহ-
Advertisement
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানিতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড যেমন কোয়ার দেখা গেছে, এই পানীয় রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়েছে ও ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়েছে।
অনেক সম্প্রদায়ের মানুষই ঐতিহ্যগতভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিরাময়ের জন্য ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানি পান করেন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস
ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানিতে শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যেমন- ফেনোলিক যৌগ, ফ্ল্যাভোনয়েড ও ভিটামিন সি। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেলকে ধ্বংস করে ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
এটি বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণ যেমন- বলিরেখা ও ত্বকের ক্ষতিও কমায় উপকারী। আবার সূর্যের ক্ষতি থেকেও ত্বককে রক্ষা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানিতে পাওয়া শর্করা পলিস্যাকারাইড (চিনি) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এমনকি প্লীহার ফাংশন বাড়ায় ও প্রতিরোধ ক্ষমতা সংকেত উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও ফেনোলিক যৌগগুলোর একটি ভালো উৎস হলো ঢ্যাঁড়শ। এর নির্যাস প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া যেমন- মাইকোব্যাকটেরিয়াম, এসচেরিচিয়া কোলাই ওস্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস এর বৃদ্ধিকে বাঁধা দিতে পারে।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানিতে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ আছে, যা রক্তে উচ্চতর লিপিড (চর্বি) এর মাত্রা কমাতে পারে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানির নির্যাস বিভিন্ন লিপিড ভগ্নাংশ (কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও এলডিএল) ও এথেরোজেনিক সূচক (কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির একটি পরিমাপ) কমিয়েছে।
ঢ্যাঁড়শের নির্যাস রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি এথেরোস্ক্লেরোসিসের মতো হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় (ধমনীর দেওয়াল ও তার উপর চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থ জমা হওয়া)।
ডা. ব্যানার্জী বলেন, ‘এই সবজিতে থাকা সবটুকু পুষ্টিগুণ পেতে ভোরবেলা খালি পেটে সারারাত ঢ্যাঁড়শ ভেজানো পানি পান করুন।’
‘তবে অবশ্যই তা ২৪ ঘণ্টার বেশি হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ও ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে ঢ্যাঁড়শগুলো। যাদের ঢ্যাঁড়শে অ্যালার্জি আছে তারা অবশ্যই এই সবজি এড়িয়ে চলুন।’
জেএমএস/জেআইএম