প্রবাস

মিশিগানে বুয়েটিয়ানদের মিলনমেলা

৩৫ বছর পর বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তোলা। পুরোনো স্মৃতি, আড্ডাসহ নিজেদের অর্জন সবার সঙ্গে শেয়ার করে এক অনন্য মুহূর্ত পার করলেন বাংলার একদল দামাল তরুণ-তরুণী। কাজের ব্যস্ততা ফেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের তারুণ্যভরা তিনদিন পার করলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৮৭ এইচএসসি বর্ষের সব বিভাগের বন্ধুরা। নাচে গান, হৈ-হুল্লোড়ই-কৌতুক-খুঁনসুটিতে মুখরিত ছিল তিনদিন।

Advertisement

অতীতের সোনালি স্মৃতি রোমন্থন আমাদের স্বভাবজাত। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সে কারণেই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে তিন দিনব্যাপী পুনর্মিলনী ও বুয়েট ৮৭ ফাউন্ডেশনের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সম্প্রতি মিশিগানের উইকজম শহরের নগর কেন্দ্রের মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, কানাডার বিভিন্ন প্রদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ থেকে একশত অ্যালামনাই ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

শুক্রবার অনুষ্ঠানের শুরুতে মৃত্যুবরণ করা সহপাঠীদের উৎসর্গ করে স্মৃতিচারণ করে তাদের বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়। এরপর বুয়েট ৮৭ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইমতিয়াজ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন। প্রবাসে থাকলেও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে দেশের বিভিন্ন দুর্যোগের সময় এগিয়ে যাওয়া, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার জন্য স্থায়ী আর্থিক অনুদানের বর্তমান অবস্থান প্রকাশ করেন।

Advertisement

বর্তমানে ২৯ জন থেকে ৫০ জন শিশুর সবধরনের পড়াশোনার খরচ এই ফাউন্ডেশন বহন করে। ২০১১ সাল থেকে এই কার্যক্রমে বেশ সফল এই ফাউন্ডেশন। এরই মধ্যে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় বৃদ্ধদের পুনর্বাসনে আরেকটি প্রকল্প শেষ করা হয়েছে। গত কয়েক বছর করোনাকালীন বিভিন্ন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে ৮৭ ফাউন্ডেশন। এ বছর থেকে প্রবাসে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের জন্য বিবাহ সমন্বয়কের কাজ শুরু করেছে।

ফাউন্ডেশনের দ্বিবার্ষিক আলোচনার পর প্রতিটি বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া অ্যালামনাইদের পরিচিতি, তাদের কর্মক্ষেত্র ও পরিবারের সন্তানদের সফলতার গল্প উপস্থাপন করা হয়। অনেকের ৩০ বছর পর দেখা, হাজারো স্মৃতিচারণ। কারও সন্তান তৃতীয় শ্রেণিতে কারও সন্তান ডিউক কিংবা হার্ভার্ডে পিএইচডি করছেন।

অনুষ্ঠানে আসা একশত পরিবারের কোলাহলে মিলনায়তন যেন ছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। বিভাগভিত্তিক সবার পরিবারের পরিচিত নৈশভোজের মাধ্যমে শেষ হয়। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও গল্প আড্ডা যেন শেষ হয়নি।

শনিবার ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে প্রথমে আগত ৮৭ ব্যাচের সন্তানদের গান ও নাচ দিয়ে শুরু হয়। এরপর আসেন ৮৭ ব্যাচের অ্যালামনাই ও তাদের স্বামী এবং স্ত্রীদের পরিবেশনা। সর্বশেষ আসে প্রবাসের জনপ্রিয় বাংলা ব্র্যান্ড ‘রদম অব বাংলাদেশ’। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানও শেষ হয় মধ্যরাতে মাইলসের জনপ্রিয় ‘ফিরিয়ে দাও’ গান দিয়ে।

Advertisement

রোববার সকালে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী ডেট্রয়েট নদীর ওপর দুই ঘণ্টার নৌপ্রমোদ ভ্রমণ আয়োজন করে ৮৭ ব্যাচ। নৌকা বেলে আইল্যান্ড ও বিখ্যাত অ্যাম্বাসেডর ব্রিজ প্রদক্ষীণ করে। দুটি প্রমোদ তরীর এই আয়োজন সবাই বেশ নাচে গানে উদযাপন করেন। দুপুরে দুই দেশের মধ্যবর্তী দ্বীপ ‘বেলে আইল্যান্ডে’ দ্বিবার্ষিক বন ভোজনের আয়োজন করা হয়।

সফল এই আয়োজনে ছিলেন বুয়েট ৮৭ অ্যালামনাইয়ের নাজমুল আনোয়ার, শাহীন ইসলাম, আফজাল হোসেন, ইমদাদ আহমেদ, মোহাম্মদ জাকারিয়া, আবু মুসা, নুরুজ্জামান কিরণ, বাশার আমিন ও আমিরুল বাপ্পি।

এমআরএম/জেআইএম