বিশ্ববাজারে ধারাবাহিকভাবে কমছে গমের দাম। কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে যাওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। তবে এসবের তেমন প্রভাব নেই দেশের খুচরাবাজারে। পাইকারি বাজারে খোলা আটা-ময়দার দাম কিছুটা কমলেও প্যাকেটজাত আটা-ময়দার দাম কমেনি। পাইকারি বাজারের তেমন প্রভাব খোলা আটা-ময়দাতেও নেই। বিশ্ববাজারে আরও কতটা কমলে খুচরাবাজারে দাম কমবে তাও জানেন না কেউ।
Advertisement
আন্তর্জাতিক বাজারের হালনাগাদ তথ্য দেওয়া বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৭ মে’র পর থেকেই নিম্নমুখী গমের বাজার। সর্বশেষ শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিশ্ববাজারে প্রতি টন গম বিক্রি হয়েছে ৩৪২ ডলারে। মে মাসে প্রতি টন গমের দাম বেড়ে উঠেছিল ৪৩৮ ডলারে।
ইনসাইডার বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। যা মে মাসের মাঝামাঝি এসে সর্বোচ্চে পৌঁছায়। এরপর থেকেই গমের দাম কমছে।
এপ্রিল-মে মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্ববাজার অস্থিতিশীল হলে দেশেও দাম বাড়ায় কোম্পানিগুলো। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন আটা-ময়দার দাম ৫১ শতাংশ বেশি। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ৪৮-৫৫ টাকা ও ময়দা ৬২-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একবছর আগে যথাক্রমে ৩৩-৩৫ এবং ৪২-৪৫ টাকা ছিল।
Advertisement
শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৬ টাকায় এবং খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকায়। বাজারভেদে দাম কমছে খুব সামান্যই। তবে এ সময়েই আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। দেশের পাইকারি বাজারেও আটার দাম কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।
ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের বাজারে বিশ্ববাজারের নিম্নমুখী দামের সুফল পেতে আরও সময় লাগবে। কারণ কম দামের গম এখনো বাজারে আসেনি।
এ বিষয়ে টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, এখনো কম দামের গম দেশে আসেনি। যে গম দিয়ে আমরা এখন আটা-ময়দা করছি সেগুলো আগের কেনা। সেটা দিয়ে এখনো দাম পুষিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, গম আমদানি করলে সেটা আসতে অনেক সময় লাগে। ভারত হলে সেটা এক সপ্তাহে আসতো। কিন্তু ভারত থেকে গম আসছে না। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে গম আসতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। কৃষ্ণসাগরের মাত্র একটি ভুট্টার শিপমেন্ট হয়েছে। এখনো বাজারে কোনো অফার নেই।
Advertisement
গম রপ্তানি শুরু করেছে ইউক্রেন
তিনি বলেন, বরং ডলারের দামের কারণে আমরা বিপদে রয়েছি। পরিবহন খরচও কমেনি। এটা বড় ফ্যাক্টর। এজন্য পণ্য আমদানিতে কেউ আগ্রহী না।
ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির জন্য কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে দিতে দেশটির সঙ্গে গত শুক্রবার চুক্তি করেছে রাশিয়া। জাতিসংঘ-সমর্থিত ওই চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনের বড় বন্দর ওদেসাসহ তিনটি বন্দর খুলে দেওয়ার কথা। এসব বন্দরে বিপুল পরিমাণ গম আটকা পড়েছিল।
এই খবরে দেশের পাইকারি বাজারে গমের দাম কমেছে। এতে পাইকারি পর্যায়ে কমেছে আটা-ময়দার দামও। বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আটার দাম ২ হাজার ১শ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ হাজার ৭শ টাকা। বস্তাপ্রতি ময়দার দামও কমেছে প্রায় ২০০ টাকা।
খোলা আটা-ময়দার সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ও শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, পাইকারিবাজার সবসময় বিশ্ববাজারের সরাসরি প্রভাবে চলে। ইউক্রেন থেকে আমদানি স্বাভাবিক হওয়ার খবরে বাজার কমেছে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপের দেশগুলোতে এখন কম আমিষযুক্ত গমের ফলন উঠছে। সেসব বাজার থেকে কিছু গম আসছে। এদিকে ভারত থেকে গম আমদানির নিষেধাজ্ঞা এখনো সমাধান হয়নি। পুরোনো এলসির কিছু কিছু গম এখন ভারত থেকে আসলেও নতুন এলসি খোলার সুযোগ নেই। তবে সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে কিছু গম আমদানির চুক্তি করেছে। সরকারি পর্যায়ে আমদানির সুযোগ রয়েছে।
আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ভারত থেকে গম আমদানিতে যে বিধিনিষেধ সেটি শিথিল করার জন্য সরকারি পর্যায়েও চেষ্টা চলছে। ভারতের বাজার খুললে গম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। ভারত থেকে দ্রুত গম আসে। ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়ে দ্রুত।
এদিকে গত অর্থবছরের শেষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গমের আমদানি বেশ কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪০ লাখ টন গম। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গম আমদানি ছিল ৫৪ লাখ ৪৩ হাজার টন। তার আগের বছর (২০১৯-২০ অর্থবছর) গম আমদানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন।
এদিকে রপ্তানি কমায় দেশে গমের মজুত গত মাসে ১৬ হাজার ৬০০ টনে নেমে এসেছে। যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গম আমদানির বৈশ্বিক তালিকায় এখন পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
এনএইচ/এমএইচআর/এএসএম