দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এই খবরে পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ধানের মোকামে প্রভাব পড়েছে। গত কয়েকদিনে মোকামে বেচাকেনা কমেছে। এতে চালের বাজারদর আরও কমে যাওয়ার শঙ্কায় ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছেন চালকল মালিকরা। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয়সহ দেশের কয়েকটি চালের বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালে দাম কমেছে প্রায় ১০০ টাকা।
Advertisement
চাল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশুগঞ্জ মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকামে মৌসুমে দৈনিক অন্তত এক লাখ মণ ধান বেচাকেনা হয়। এ মোকামে কৃষকদের তুলনায় ধানের ব্যাপারীর সংখ্যাই বেশি। কৃষকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধান কিনে নৌকায় করে মেঘনা নদীর বিওসি ঘাটে নিয়ে আসেন তারা।
মূলত আশুগঞ্জের এ মোকামই জেলার আড়াইশ চালকলে ধানের জোগান দেয়। মোকামটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওর এলাকাগুলোতে উৎপাদিত ধান আসে। এই উপজেলার চালকলগুলোতে উৎপাদিত চাল সরবরাহ হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন জেলায়।
ভারত থেকে চাল আমদানির খবরে গত কয়েকদিনে আশুগঞ্জ মোকামে ধানের বেচাকেনা কম হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক ৬০-৭০ হাজার মণ ধান বিক্রি হচ্ছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কম। বেচাকেনা কম হওয়ায় ধানের দামও কমেছে। মোকামে এখন বিআর-২৯ ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১১২০ টাকায়। মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০-৯২০ টাকা দরে। অথচ দিন দশেক আগেও বিআর-২৯ ধান প্রতি মণ ১১৫০-১১৬০ টাকায় এবং মোটা ধান বিক্রি হয়েছে ৯৫০-৯৭০ টাকা দরে।
Advertisement
এদিকে, ধানের দাম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চালের দামও কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ টাকা কমে আশুগঞ্জের চালকলগুলো থেকে বিআর-২৮ চাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৪৫০ টাকায়। বিআর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০ টাকা দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় চাল আমদানি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে দেশীয় চালের দাম আরও কমবে। এতে তারা লোকসানে পড়বেন।
মো. আলাল মিয়া নামের এক ধান ব্যাপারী জানান, লোকসানের আশঙ্কায় চালকল মালিকরা ধান নিচ্ছেন কম। এতে ধানের দাম কমে গেছে। ভারতীয় চাল আমদানির খবরে ধানের বেচাকেনা কমেছে। দাম কমার কারণে ব্যাপারীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
আশুগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী মো. শরীফ মিয়া বলেন, প্রতিবারই যখনই চাল আমদানি হয়, তখনই দেশের বাজারে চালের দাম কমে যায়। এজন্য এবার সরকার যখন ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে তখন থেকেই ব্যবসায়ীরা ধান-চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ভারতীয় চাল আমদানির কারণে প্রত্যেক চালে বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা কমেছে।
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা অটো রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল করিম খান সাজু বলেন, ‘ভারত থেকে চাল আমদানির কারণে আমাদের চালের বাজারদর কমেছে। অথচ আমাদের দেশে ভারতীয় চালের চাহিদা খুব কম। ক্যাঙারু ব্র্যান্ডের তাদের একটা চাল আছে, এটি মোটামুটি ভালো। এই চালটিও ৫০ কেজির বস্তার দাম তিন হাজার টাকার ওপরে।’
তিনি বলেন, চালের দাম যদি আরও কমে তাহলে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে। ভারতীয় চাল আমদানি অব্যাহত থাকলে আশুগঞ্জ মোকামে ধানের বেচাকেনা আরও কমবে। তাই মিল মালিকরা ধান কম কিনছেন। মিল চালু রাখার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই কিনছেন। ফলে মোকামে ধানের বেচাকেনা কমে গেছে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসআর/এমএস