আইন-আদালত

শতকোটি টাকা লেনদেন তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রিট তালিকায়

দেশের সব হাসপাতালে নার্স বদলি, অর্থ লেনদেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশের পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ২৬ জুলাই দিন ধার্য ছিল।

Advertisement

আজ (২৭ জুলাই) ওই রিটের বিষয়ে শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রয়েছে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব।

তারই ধারাবাহিকতায় ওই নির্দেশনার আলোকেই হাইকোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন আসার কথা রয়েছে। তবে অগ্রগতি আছে কিনা সে বিষয় জাগো নিউজকে নিশ্চিত করতে পারেননি রিটকারী আইনজীবী।

এর আগে গত ১৮ মে দেশের সব হাসপাতালে নার্স বদলি, অর্থ লেনদেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) মামলার বিবাদী জামাল উদ্দিন, তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যসহ বদলি-বাণিজ্যে চিহ্নিত-জড়িতদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য বলেছেন আদালত।

Advertisement

পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন। এর পরে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব।

আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের। অন্যদিকে, দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

এর আগে গত (১০ এপ্রিল) দেশের সব হাসপাতালে নার্স বদলি, টাকা লেনদেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করতে এবং বদলি-বাণিজ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে বদলি-বাণিজ্যে লেনদেন করা ১০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ারও আর্জি জানানো হয়েছে রিটে।

Advertisement

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রোববার (১০ এপ্রিল) ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের এই রিট করেন।

রিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের অভিযুক্ত মো. জামাল উদ্দিনকে এই লিগ্যাল নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে। রিটের বিষয়টি ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, রিটে দেশের নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশাকে রক্ষার জন্য আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া নার্সদের বদলিতে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য স্বাস্থ্যসচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।

পাশপাশি বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করে অবৈধ সিন্ডিকেটের সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিতকরণ ও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বদলি বাণিজ্যের মূলহোতা মো. জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে রিট আবেদনে।

ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব জানান, বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা দুদক এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে নার্স পেশা হুমকির মুখে পড়ছে। হাজার হাজার নার্সের কাছ থেকে অবৈধভাবে ঘুসবাণিজ্য করে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের সংবিধানস্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নার্সদের পেশার স্বাধীনতা সংবিধানস্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার।

বদলির জন্য নার্সদের টাকা দিতে বাধ্য করা ও তাদের কাছ থেকে ঘুস নেওয়া নার্সদের মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। কাজেই যারা বদলির জন্য টাকা দিয়েছে সেই টাকা ফেরত পাওয়া তাদের আইনসম্মত অধিকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নার্সদের বদলি বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার নার্স কর্মরত রয়েছেন। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পেশাগতভাবে বদলি চাকরির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সেই পেশাগত বদলি হয়ে উঠেছে নার্স পেশার একটি আতঙ্কের নাম। প্রত্যেক নার্সকে প্রতিবার বদলির জন্য গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এই বদলি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা।

গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর তিন মাসে প্রায় চার হাজার নার্সকে বদলি করা হয়েছে। সেই বদলির মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইভ ফাউন্ডেশনের পক্ষে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের। ওই লিগ্যাল নোটিশের পর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এই রিট করা হয়।

এফএইচ/জেএস/এএসএম