চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। রাবির বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস, জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, আইবিএ ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত সাহাসহ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
রাবি ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে জিম্মি ভুক্তভোগী হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওকিবুল হক। এছাড়া তার বন্ধু ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী অংকুর পাল ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির বিজনেস ম্যানেজমেন্টের জুনায়েদ ইফতিও এ ঘটনায় হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
সূত্র জানায়, ভুক্তভোগীরা ময়মনসিংহ থেকে সাতটি বাসে করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নিয়ে রাবি ক্যাম্পাসে এসেছেন। একই জেলা থেকে রাবির জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুলও বাস নিয়ে আসেন। তাদের কারণে রাকিবের বাসে কম শিক্ষার্থী আসেন। এতে তার কিছুটা ক্ষতি হওয়ায় তিনি ছাত্রলীগ নেতা জেমসের মাধ্যমে চবি শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ১৫ হাজার টাকা আদায় করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর বন্ধু অংকুর পাল বলেন, আমরা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে থাকি। যথারীতি রাবির ২৫ তারিখের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ থেকে ভোর পাঁচটায় এই ক্যাম্পাসে আমাদের বাস নিয়ে আসি। দুপুরের পর ড্রাইভাররা আমাদের ফোন দিয়ে জানান, কিছু লোক তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন এবং তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেছেন।
Advertisement
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অংকুর বলেন, এই ঘটনা শুনে আমার বন্ধু ইফতি সেখানে গেলে তাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তুলে নিয়ে যায়। রাবির শিক্ষক কোয়ার্টারের পেছনে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অভিযুক্তরা আমার বন্ধুর ফোন থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকাশে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। আমরা সরাসরি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিই এবং পুলিশকে বিষয়টি জানাই।
তিনি আরও বলেন, অপহরণকারীরা তামিম নামে একজনকে টাকা নিতে পাঠালে ভিসির বাসভবনের সামনে থেকে তাকে পুলিশ আটক করে। এরপর বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেমসের নেতৃত্বে তাওকিবুলের বিকাশ ও নগদ থেকে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে পিন আদায় করে প্রায় ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তারা আরও টাকা নেওয়ার জন্য আমাদের চাপ দিতে থাকে। এ ঘটনায় পুলিশকে আমরা পাশে পাইনি এবং অভিযুক্ত কাউকে আটক করা হয়নি। এরপর আমি ও ইফতি চলে আসি। আর বিষয়টি মীমাংসার জন্য তাওকিবুলকে তারা তাদের কাছে রাখে।
ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অংকুর বলেন, এমন ঘটনায় আমরা রীতিমতো হতাশ। রাবি ছাত্রলীগ নেতারা এমন আচরণ করবে আমরা কল্পনাও করিনি। আমি নিজেও ছাত্রলীগ করি এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও সবাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এমন চাঁদাবাজি সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জার। ছাত্রলীগ আমাদের টাকা ফেরতের আশ্বাস দেয়নি। পুলিশ ও রাবি প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। আমরা এর তদন্তপূর্বক বিচার চাই।
বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত রাবি ছাত্রলীগ নেতা আলফাত সায়েম জেমসের ফোনে একাধিক বার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আরেক অভিযুক্ত জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে শুরুতে আমি কিছু জানতাম না। তবে, পরে বিষয়টি শুনেছি এবং তাওকিবুল আমার স্কুলের ছোট ভাই জেনে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ভাইকে নিয়ে মীমাংসা করে দিয়েছি।
Advertisement
টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিবুল বলেন, আমরা তার টাকা ফেরত দিয়েছি। আপনি ভুক্তভোগীর কাছে খোঁজ নিলেই সত্যতা পাবেন।
ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে, শুনেছি জিয়া হলের রাকিবের স্কুলের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে একটি ঝামেলা হয়েছে। পরে বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে রাবি প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযুক্ত জেমস ও ভুক্তভোগীদের সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি সমাধান করে ছেড়ে দিয়েছি।
জানতে চাইলে মতিহার থানার পরিদর্শক আনোয়ার আলি তুহিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখবে। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি, তাছাড়া কিছু না।
মনির হোসেন মাহিন/এমআরআর/জিকেএস