ধর্ম

পরীক্ষা ছাড়াই কি জান্নাত পাওয়া যাবে?

বিনা যুদ্ধে এবং কোন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন না হয়েই তোমরা জান্নাতে চলে যাবে? না, বরং জান্নাত তারাই লাভ করবে, যারা (আল্লাহ কর্তৃক) পরীক্ষায় পূর্ণভাবে সফলতা অর্জন করবেন। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ মুমিনদের প্রতি উপদেশগুলো এভাবে তুলে ধরেছেন-

Advertisement

اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ جٰهَدُوۡا مِنۡکُمۡ وَ یَعۡلَمَ الصّٰبِرِیۡنَ

‘তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে আর কে ধৈর্যশীল তা এখনো প্রকাশ করেননি?' (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪২)

আয়াতের সার-সংক্ষেপ

Advertisement

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলার চিরাচরিত নিয়ম হচ্ছে যে, তিনি কাউকে পরীক্ষা না করে জান্নাতে দেবেন না। তিনি তাদেরকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে তারপর সে পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। পবিত্র কোরআনে এ কথাটি বারবার ঘোষিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে এ বিষয়টি এভাবে উল্লেখ করেছেন-

اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَاۡتِکُمۡ مَّثَلُ الَّذِیۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِکُمۡ ؕ مَسَّتۡهُمُ الۡبَاۡسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلۡزِلُوۡا حَتّٰی یَقُوۡلَ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ مَتٰی نَصۡرُ اللّٰهِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصۡرَ اللّٰهِ قَرِیۡبٌ

‘নাকি তোমরা ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের কাছে তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের আগে গত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসুল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য (আসবে)? জেনে রাখো! নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য কাছাকাছি।’ (সুরা বাকারা : ২১৪)

اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تُتۡرَکُوۡا وَ لَمَّا یَعۡلَمِ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ جٰهَدُوۡا مِنۡکُمۡ وَ لَمۡ یَتَّخِذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ لَا رَسُوۡلِهٖ وَ لَا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَلِیۡجَۃً ؕ وَ اللّٰهُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ

Advertisement

‘তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদেরকে এমনিই ছেড়ে দেওয়া হবে যে পর্যন্ত আল্লাহ জেনে না নেবেন তোমাদের মধ্যে কারা তাঁর পথে জিহাদ করেছে; আর আল্লাহ তাঁর রাসুল ও মুমিনদের ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু ও অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেননি? তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ বিশেষভাবে অবহিত।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১৬)

اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ یُّتۡرَکُوۡۤا اَنۡ یَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَ هُمۡ لَا یُفۡتَنُوۡنَ

‘মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ২)

মৃত্যু বা বিপদ কামনা করা কারও জন্যই বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন-

 وَ لَقَدۡ کُنۡتُمۡ تَمَنَّوۡنَ الۡمَوۡتَ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تَلۡقَوۡهُ ۪ فَقَدۡ رَاَیۡتُمُوۡهُ وَ اَنۡتُمۡ تَنۡظُرُوۡنَ

‘আর তোমরা অবশ্যই মৃত্যু কামনা করতে, তার সঙ্গে সাক্ষাতের আগে। অতএব তোমরা তো তা দেখেছই এমতাবস্থায় যে, তোমরা তাকাচ্ছিলে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৩)

এ আয়াতে সেসব সাহাবিদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যাঁরা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে না পারার কারণে নিজেদের হৃদয়ে এক প্রকার বঞ্চনা-ব্যথা অনুভব করতেন এবং চাইতেন যে, আবারও যুদ্ধের ময়দান উত্তপ্ত হলে তাঁরাও কাফেরদের শিরচ্ছেদ করে জিহাদের ফজিলত অর্জন করবেন। আর এই সাহাবিরাই ওহুদের দিন জিহাদের উদ্দীপনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মদিনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কিন্তু যখন মুসলিমদের বিজয় কাফেরদের অভাবিত আক্রমণের ফলে পরাজয়ে পরিবর্তন হয়ে গেল, তখন জিহাদের উদ্দীপনায় ভরপুর যাঁদের অন্তর এমন মুজাহিদরাও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন এবং অনেকে তো পলায়নও করেন। এরপর অল্প সংখ্যক লোক দৃঢ়তার সঙ্গে ময়দানে টিঁকে থাকেন। (ফাতহুল ক্বাদির)

তাইতো হাদিসে এসেছে যে, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা শক্রর সঙ্গে সাক্ষাত কামনা করো না; আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাও, তবে যদি তারপরও সাক্ষাত হয়ে যায় তাহলে ধৈর্যধারণ কর এবং জেনে রাখো! জান্নাত তরবারীর ছায়ার নীচে।’ (বুখারিম, মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে হতাশা, দুবলতা ও হীনমনোবল থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাঁর উপদেশাবলী গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস