ইউক্রেনের লাখ লাখ টন শস্য বহির্বিশ্বে পাঠাতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়তো হয়েছে, তবে কৃষ্ণসাগর দিয়ে রপ্তানিতে সব বাধা এখনো দূর হয়নি। বরং বলা যায়, চ্যালেঞ্জের সবে শুরু। বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের আশঙ্কার জেরে গত শুক্রবার (২২ জুলাই) জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের গম, ভুট্টা ও তেলবীজ রপ্তানির জন্য কৃষ্ণসাগরের অবরোধ তোলার বিষয়ে একটি চুক্তিতে সই করেছে রাশিয়া। তবে এসব শস্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় জাহাজ ও নাবিক জোগাড় রাতারাতি হওয়ার মতো কোনো কাজ নয়।
Advertisement
শিপিং কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি শস্য ব্যবসায়ীরা রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে এখনো জাহাজ ও নাবিকদের নিরাপত্তা এবং শস্য পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত বিমা নিশ্চিত করার মতো বেশ কিছু বাধা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইউক্রেনের উপকূলীয় জলসীমা মাইনমুক্ত করতে হবে অথবা অন্ততপক্ষে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি করিডোর তৈরি করতে হবে। এই কাজে কতটা সময় লাগতে পারে সে বিষয়ে কিয়েভ থেকে ভিন্ন ভিন্ন কথা শোনা গেছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এতে ন্যূনতম ১০ দিন থেকে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে জমা হওয়া প্রায় দুই কোটি টন শস্য পরিবহনের জন্য অন্তত ৪০০টি কার্গো জাহাজের দরকার পড়বে, যার প্রতিটিতে ৫০ হাজার টন শস্য তোলা যাবে। শিপিং বিশ্লেষকদের ধারণা, অন্য রুটের জাহাজগুলো ঘুরিয়ে কৃষ্ণসাগরে আনতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। এটি নির্ভর করছে মূলত পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে জাহাজের প্রাপ্যতার ওপর।
Advertisement
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে আটকা পড়ে ১০০টির বেশি জাহাজ, যার বেশিরভাগই পণ্যবাহী বলে ধারণা করা হয়। তবে এসব জাহাজও তাৎক্ষণিকভাবে সাগরে যাত্রা শুরু করতে পারবে না। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিংয়ের মহাসচিব গাই প্লাটেনের কথায়, জাহাজগুলো ২৪ ফেব্রুয়ারি (যুদ্ধ শুরুর দিন) থেকে থেমে রয়েছে। সুতরাং আমাদের আগে নিশ্চিত হতে হবে, সেগুলো ব্যবহারযোগ্য। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, জাহাজগুলোতে সঠিক নাবিক রয়েছে। কারণ অনেক নাবিককেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধ শুরুর সময় ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজগুলোতে সবমিলিয়ে প্রায় দুই হাজার নাবিক ছিলেন। কয়েক মাস ধরে সরিয়ে নিতে নিতে তাদের মাত্র ৪৫০ জন অবশিষ্ট রয়েছেন।
এ অবস্থায় ইউক্রেন শস্য রপ্তানির জন্য জাহাজগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নাবিক দিতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত। যুদ্ধের আগে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ নাবিক ছিল রাশিয়া-ইউক্রেনের।
একবার জাহাজ ও নাবিক জোগাড় হয়ে গেলে এরপর তাদের জন্য পর্যাপ্ত ‘যুদ্ধ বিমা’ নিশ্চিত করতে হবে জাহাজমালিককে। নিশ্চিতভাবেই এর প্রিমিয়াম হবে অনেক চড়া। এমনকি তারপরেও অনেক মালিক তাদের জাহাজ ও নাবিকদের এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠাতে চাইবেন না।
Advertisement
এত সব চ্যালেঞ্জ সামলানো যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু ঘড়ি থেমে নেই। ইউক্রেনীয় কৃষকরা শিগগির বসন্ত মৌসুমের ফসল রোপণ শুরু করবেন। সেগুলোর জন্য দেশটির শস্য গুদামগুলো খালি করা দরকার।
কৃষ্ণসাগরে অবরোধের কারণে ইউক্রেনীয় সরকার ও কৃষি উৎপাদকরা রেল, সড়ক ও নদীপথে রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক শস্য কাউন্সিলের (আইজিসি) তথ্যমতে, গত জুনে ইউক্রেনের এ ধরনের রপ্তানি রেকর্ড ২৩ লাখ টনে পৌঁছেছে। তারপরও, যুদ্ধ শুরুর আগে দেশটি সমুদ্রবন্দর দিয়ে যে পরিমাণ শস্য রপ্তানি করতো, এটি তার তিন ভাগের একভাগ মাত্র।
আইজিসির হিসাবে, নতুন শস্য রাখার জায়গা করার জন্য ইউক্রেনকে আগামী তিন মাস প্রতি মাসে অন্তত ৭০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করতে হবে। আইজিসি’র জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আলেকজান্ডার কারাভায়েতসেভ বলেন, ফের চালু হওয়ার পর প্রথম মাসে ৫০ লাখ টন শস্য পরিবহনও খুব চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আমাদের হিসাবে, ইউক্রেনের বন্দরগুলো আবার খুলে দেওয়া হলেও অতিরিক্ত গুদামের প্রয়োজন পড়তে পারে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
কেএএ/জিকেএস