আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নফল ইবাদত রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ। মর্যাদা ও ফজিলতের দিক থেকে ফরজ নামাজের পরই তাহাজ্জুদের অবস্থান। নবিজী বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’
Advertisement
রাতের নামাজ তাহাজ্জুদের ঘোষক স্বয়ং আল্লাহ। রাতের শেষাংশে মহান রব দুনিয়ার আকাশে নেমে মানুষকে নামাজের জন্য, তাঁকে ডাকার জন্য, ক্ষম প্রার্থনার জন্য আহ্বান করেন। হাদিসে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার তাঝে কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ (বুখারি, মুসলিম)
মহান আল্লাহ রাতের নামাজের গুরুত্ব কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
Advertisement
اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ هِیَ اَشَدُّ وَطۡاً وَّ اَقۡوَمُ قِیۡلًا
‘নিশ্চয়ই রাতের বেলার জেগে ওঠা আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর এবং স্পষ্ট কথা বলার জন্য বেশি উপযোগী।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল : আয়াত ৬)
وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا - وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا
‘আর রাহমান-এর বান্দা তারাই, যারা জমিনে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা তাদেরকে (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম; আর তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের রব-এর উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে থেকে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৩-৬৪)
Advertisement
তাহাজ্জুদ রাতের নামাজ। ফরজের পর আল্লাহ তাআলা রাতের নামাজের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করেছেন। তাই মুমিন মুসল্লির কাছে রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ-এর গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি।
তাহাজ্জুদ পড়ার সময়
তাহাজ্জুদ নামাজ রাতে পড়তে হয়। এটি এশার নামাজ আদায় করার পর থেকে ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ফজরের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ অর্ধ বা দ্বিপ্রহরের সময় পড়া ভালো। সর্বোত্তম হচ্ছে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়া।
তাহাজ্জুদের রাকাত
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। তবে অধিকাংশ স্কলারের মতে, তাহাজ্জুদ সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ আট রাকাত। এর বেশিও পড়া বৈধ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকত এবং কখনো ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। কিন্তু যদি কেউ রাতে ইশার পর থেকে শেষ রাতের মধ্যে ২ রাকাত নামাজ পড়ে তবে তা তাহাজ্জুদ আদায় হবে। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা বা নিয়ম নেই। অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজের মতো রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ পড়তে হয়। সুরা ফাতেহার সঙ্গে যে কোনো সুরা মিলিয়ে এ নামাজ পড়া যায়। তবে উত্তম হলো দীর্ঘ বা লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। যদি কারো বেশি আয়াত বা লম্বা সুরা মুখস্ত থাকে তবে তাদের জন্য লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম। কারণ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত করে, তা দিয়ে তাহাজ্জুত আদায় করা উত্তম।
মনে রাখতে হবে
রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ এতোই মর্যাদাবান যে, এ নামাজ পড়া মুসল্লির দোয়া বা চাওয়া-পাওয়া লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদ পড়া ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন। দোয়া ও মনের আশা কবুল করেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস