সাহিত্য

তাইজুল ইসলামের গল্প: লজ্জা

আসছে শুক্রবার শিমুল ও রুপার বিয়ে। বিয়ের সমস্ত আয়োজন ঠিকঠাক। তবে বরযাত্রীর সংখ্যা কত হবে, তা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে একটা মনোমালিন্য থেকেই যায়। রুপার বাবা সর্বসাকুল্যে তিনশ জনের প্রস্তাব দিলে এক তুড়িতে তা উড়িয়ে দেয় শিমুলের পরিবার।

Advertisement

‘নিদেনপক্ষে চারশ না হলে সমাজ আর আত্মীয়-স্বজনের কাছে মুখ বাঁচবে না।’ শিমুলের বাবা সাফ জানিয়ে দেয়।তবে এই সংখ্যাটারও নিশ্চয়তা নেই। বাড়বে বৈ কমবে বলে মনে হয় না রুপার বাবা আদিবুরের। ‘বিয়ে-থা দিতে গেলে এমন একটু-আধটু হয়’ বলে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া উপায়ন্তর দেখছেন না তিনি। তা ছাড়া রুপা পরিবারের প্রথম সন্তান। তার মুখের দিকে চেয়ে মেনে নিতেই হয়।

আজ শুক্রবার। কথামতো জুমার নামাজের আগেই বরযাত্রী চলে এসেছে। একে একে সাড়ে চারশ! বরযাত্রীর এই বিপুল সংখ্যা নিয়ে একটা অসন্তোষের হাওয়া ছড়িয়ে যায় মুহূর্তেই। তবে এ নিয়ে কথা কাঁটাছেড়া করে বিশেষ লাভ হবে না ভেবে সবাই মনে মনে রাগ পুষে রাখে।

বেশ জাঁকজমকভাবেই সম্পন্ন হয় শিমুল-রুপার বিয়ে। দেখতে দেখতে কেটে যায় দেড় বছর। রুপার গর্ভের ভ্রূণটাও বেড়ে উঠেছে। এখন সময় তাকে পৃথিবীতে স্বাগত জানানোর। হ্যাঁ, আজকালের মধ্যে রুপার সিজার। তবে অপারেশন আটকে আছে রক্তের অভাবে। ডাক্তার দুই ব্যাগ রক্তের কথা বলেছে। এক ব্যাগ অপারেশনের আগেই দিতে হবে। আর এক ব্যাগ অপারেশনের পর প্রয়োজন হতে পারে।

Advertisement

কেবিনের ভেতর পায়চারি করছে শিমুল আর রুপার বাবা। রুপার কাছে বসে আছে ওদের মায়েরা। মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে রুম্পা। রুম্পা হলো রুপার ছোট বোন। রাগে যেন ফেটে পড়ছে সে। ছোটবেলা থেকেই ওর রাগ আর জেদটা একটু বেশি। ভীষণ ঠোঁটকাটা মেয়ে রুম্পা। কাউকে ছেড়ে কথা বলার অভ্যাস ওর নেই।

কিছুক্ষণ পরই শিমুল আসে। চোখেমুখে ক্লান্তি ও হতাশার ছাপ স্পষ্ট। রক্ত জোগাড় হয়নি এখনো, শিমুলের মুখ দেখলেই তা বোঝা যায়। কিন্তু শিমুল কিছু বলবে তার আগেই রুম্পা প্রশ্নের তীর ছুঁড়ে দেয়। ‘রক্ত জোগাড় হয়নি, এটাই বলবেন, তাই তো?’‘হুম।’ শিমুলের চোখ মেঝের দিকে।‘জানতাম ঠিক এটাই বলবেন।’‘দ্যাখ মা, রক্ত তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না। কাজটা একটু কঠিন এবং ধৈর্যেরও। এটা তো মানতে হবে তাই না? ঠিক জোগাড় হয়ে যাবে দেখিস।’ শিমুলের বাবা এগিয়ে এসে বললেন।‘বিয়েতে সাড়ে চারশ লোকের বহর নিয়ে আসাটা মামুলি ব্যাপার। আর স্ত্রীর ডেলিভারির সময় সাড়ে চারশ গ্রাম রক্ত জোগাড় করা খুব শক্ত কাজ, তাই না?’ রুম্পা আসলে শিমুলের বাবার কথার জবাব দিলেও কথাটা সে শিমুলের দিকে তাকিয়েই বলল।‘মা, তুই একটু চুপ কর! এটা হাসপাতাল, সিনক্রিয়েট করিস না!’ আদিবুর এগিয়ে এসে মেয়ের হাত চেপে ধরেন।‘সিনক্রিয়েট আমি করছি? তুমি ভাবতে পারছো বাবা, এক ব্যাগ রক্তের জন্যে আপুর অপারেশন আটকে আছে?’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়েটা।

কেবিনের ভেতর সিলিং ফ্যানের বাতাসের সাথে ঘুরছে একটা দীর্ঘশ্বাস। সেই দীর্ঘশ্বাসের ভেতর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে শিমুল এবং শিমুলের বাবা-মা।

লেখক: শিক্ষার্থী, সম্মান ৪র্থ বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, গোপালগঞ্জ।

Advertisement

এসইউ/জিকেএস