টংক ও জমিদার প্রথা উচ্ছেদ আন্দোলনের অন্যতম মহীয়সী নারীনেত্রী ও কমরেড মনিসিংহের সহযোদ্ধা শহীদ রাশিমণির ৭০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেড়াতলী গ্রামের রাশিমণি স্মৃতি স্তম্ভ প্রাঙ্গণে হাজং মাতা রাশিমণি মেলা উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে আজ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপি মেলা শুরু হচ্ছে। মেলার উদ্বোধন করবেন নারী নেত্রী কুমুদিনী হাজং।১৯৪৬ খ্রি. এর ৩১ জানুয়ারি দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ইষ্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনীর সশন্ত্র ক্যাম্প স্থাপন করে। এ সশস্ত্র বাহিনী গ্রামে গ্রামে হানা দিয়ে বিদ্রোহী কৃষকদের খুঁজতে শুরু করে। ৩১ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে বিরিশিরি থেকে ৪ মাইল পশ্চিম-উত্তরে বহেরাতলি গ্রামে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইষ্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনী তল্লাসি করতে যায়। টংক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দেলনকারী নেতৃস্থানীয় লংকেশ্বর হাজং,গজেন্দ্র হাজং ও ইসলামাশ্বর হাজংকে সেদিন তারা খোঁজ করে। ওই সময় এদের বাড়িতে না পেয়ে সশস্ত্র বাহিনী লংকেশ্বর হাজং এর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী কুমুদিনী হাজংকে ধরে নিয়ে বিরিশিরি ক্যাম্পের দিকে রওনা হলে কুমুদিনী হাজং এর বাড়ির এক নারী পাশের বাড়িসহ এলাকার অন্যান্য বাড়িতে দৌঁড়ে গিয়ে খবর পৌঁছে দেয়।হাজং গ্রামগুলোতে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক হাজং নারী পুরুষ সশস্ত্র বাহিনীর পথরোধ করে কুমুদিনী হাজংকে ছেড়ে দিতে বলে। ইষ্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনী কুমুদিনী হাজংকে না ছেড়ে ক্যাম্পের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে সময় রাশিমনি হাজং এর নেতৃত্বে দিস্তামনি হাজং, সভামতি হাজং, রনে বালা হাজং, প্রাভাতি হাজং, পঞ্চমনি হাজংসহ ১২ জন হাজং নারী এগিয়ে এসে বাঁধা দেন।কুমুদিনী হাজংকে ছাড়িয়ে নিতে এগিয়ে গেলে সশস্ত্র সেনারা নৃসংশভাবে গুলি চালায়। এতে রাশিমনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পেছনে পুরুষ দলের নেতা সুরেন্দ্র হাজং রাশিমনিকে ধরতে গেলে তাকেও নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যা করে।এ ঘটনায় অন্যান্য হাজং নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে ইষ্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। ক্ষিপ্ত হাজং পুরুষদের বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই রাইফেল বাহিনীর দুজন সেনা নিহত হন।অন্যান্যরা কুমুদিনী হাজংকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। সেই থেকে কৃষক নারীদের মধ্যে শহীদ হিসেবে রাশিমনি হাজং এর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়েছে। রাশিমনি শহীদ হওয়ার একমাস পড়েই স্ত্রী বিয়োগে কাতর রাশিমনির স্বামী পাঞ্জী হাজং আগুনে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহুতি দেন। নিঃসন্তান হয়েও হাজংদের অধিকার ও নারী সংগ্রামের প্রতীক রাশিমনি হাজং তার সম্প্রদায়ে হাজং মাতা হিসেবে খ্যাত হন।এর আগে হাজংমাতা রাশিমণি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এর চেয়ারপার্সন খুশি কবীর এর নেতৃত্বে বহেড়াতলী গ্রামে শহীদ রাশিমণির স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়। প্রতি বছর এই দিনে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়।সপ্তাহব্যাপি মেলার কর্মসূচিতে স্মৃতি সৌধে পুস্প স্তবক অর্পণ, দেশ বরেণ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা, রচনা, চিত্রাঙ্কন, হা-ডু-ডু খেলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান, লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নারী পথিকৃতদের জীবনীর উপর ভিডিও প্রদর্শন এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের স্টল প্রদর্শিত হবে।কামাল হোসাইন/এসএস/এমএস
Advertisement