সাহিত্য

এম এ রহমানের পাঁচটি কবিতা

আমি নিখোঁজ সংবাদে

Advertisement

একটা সময় ছিলো—যখন ভোরের বেলা কাঁচারোদে আমি হাঁটতামদেখতাম—প্রকৃতির আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠাশুনতাম—প্রকৃতির ঠোঁটে ফুটে ওঠা মিষ্টি ভাষা।জীবন উল্লাসে মাতা—পৃথিবীর সব রং, গন্ধসব সুর, নিরবতা—হৃদয় ক্যানভাসে ফুটে উঠতনিজেকে খুঁজে পেতাম, দেখতাম অবয়ব তারআমিত্ব দর্পণে অপরূপ প্রশান্তির প্রতিবিম্ব ভাসে।

দুপুরের পোড়া রোদে পুড়ে যায় পৃথিরীর রংবাতাসের নিঃশ্বাসে উড়ে—পুড়ে যাওয়ার গন্ধউড়ন্ত পাখির কণ্ঠে ভেসে আসে কোরাস সংগীতআমিত্বের নির্জনতা ভাঙে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারে।

আয়ুপথে হেঁটে হেঁটে কতদূর এসেছি জানি নানিজেকে ভেঙেছি ছিটিয়ে দিয়েছি চারিদিকে সম্পর্কের মুঠোভর্তি হাতে—রাস্তা, ঘাটে, পথে ও প্রান্তরেআমিত্বের ভাঙা দর্পণে আজও নিজেকে দেখা যায়তবে নিজেকে চেনা যায় না—শত টুকরার প্রতিবিম্বে!

Advertisement

****

সমুদ্রের পথে

অফিসের পর আমার তেমন কাজই থাকে নাতখন পড়তে বসি—তোমাকে মুখস্থ করি বারান্দায় বৈকালিক আয়েশী চায়ের কাপেকিচেনের ভাত সিদ্ধ জলের তৃষ্ণায় বেডরুমে নিয়মিত তোমার পৃষ্ঠাগুলো উল্টে দেখিতারপর তোমার নিঃশব্দ চোখের গভীরে ডুবে যাইতোমার শ্রাবণ মেঘে আমার শব্দরা বৃষ্টি হয়দোচালা টিনের ঘরে আমরা তাদের নৃত্য দেখিবুকপকেটের ভাঁজে তোমার শব্দকে নিয়ে বের হইঅফিসের ফাঁকে ফাঁকে মুখস্থ করার চেষ্টা করিকবিতা লেখার চেষ্টা করি—কিন্তু তারা গান হয়হৃদয় গভীরে বয়ে চলে নদী—মন মাঝি গান গায়অফিসের পর বাসায় ফিরি—বুকপকেটে জমাই শব্দমন মাঝি হাল ধরে, গান গায়—বয়ে চলে সমুদ্রের পথে।

****

Advertisement

নস্টালজিক মন

কেউ বেঁধে রাখেনি কখনোকেউ নির্বাসন দেয়নি আমায়তবু আমি বন্দি, নির্বাসিত এক প্রাণ।নস্টালজিক মন ফিরতে চায়—গ্রামের বাড়িতে ব্রহ্মপুত্রের ঢেউখেলা সমীরণেনারুদার পুকুরের টঙ্গে, স্কুলমাঠে বৈকালিক দুর্বাদলেলেপ্টে যেতে চাই গোধুলির আকাশে।কতদিন আম্মার হাতের চিংড়ি ভুনা আরহাঁসের মাংস গলা দিয়ে হেঁটে হেঁটে জঠরে যায়নিকতদিন বুকভরা সোঁদা মাটির গন্ধ নেয়নি কতদিন আব্বার শাসনের দরজা ভেঙেপাখির মতো দলবেঁধে ব্রহ্মপুত্রে সাঁতার কাটেনি।

নস্টালজিক মন ফিরতে চায়এ শহরের জমানো চৈতালি উত্তাপ ব্রহ্মপুত্রের শীতল জলে ডুবাতে চায়বটবৃক্ষতলে মাতৃছায়া পেতে পেতে ঘুমাতে চায়।

কেউ বেঁধে রাখেনি কখনো কেউ নির্বাসন দেয়নি আমায় তবু আমি বন্দি, নির্বাসিত এক প্রাণ।

****

বেগুনি ফুল

এতদিন শীতনিদ্রায় ছিলামঅলসতার শরীরের ভেতরতার ফুসফুসের ভেতর, নির্জীব চেতনাউদ্দেশ্যহীন বেঁচে থাকার বিলাসিতাহঠাৎ হুরকা বানে পাহাড়ি ঢলের স্রোতকচুরিপানার মতো ভেসে ভেসে বুঝেছি জীবনআটকা পড়েছি স্রোতহীন পরিত্যক্তজমির কিনারে, বাস্তবতার সূর্যের তাপেশ্যাওলা জমানো জমিন এখন খাঁ-খাঁ বিরানভূমি।তবুও স্বপ্নের পালকে ঢেকে রাখি নিজেকেআসন্ন হেমন্তের শিশিরে ভিজে ভিজেশীতের কুয়াশার চাঁদর ছিঁড়ে ছিঁড়েফোটাবো বেগুনি ফুল।

****

স্বপ্নদ্বীপ

যে নদীকে আমি সমুদ্রের নোনা জলে মিশতে দেখেছিসেটি আমার বুকেই থাকেসমুদ্রের নোনা জলে যে কালের নৌকা ভেসে গেলযে নৌকা আমার প্রেম, শৈশব-কৈশোর নিয়ে গেলযে নৌকা পড়ন্ত বেলায় আমার তুমিকে নিয়ে গেলসন্ধ্যার প্রদীপ জ্বেলে—সেই নৌকা আর ফিরবে না-জানি!

আমার হৃদয় আজ—এক দূরতম নির্জন দ্বীপউঁচু-নিচু পাহাড় বেষ্টিত এক গিরিখাদ, বনসমুদ্রের উথাল-পাতাল ঢেউ, পাহাড়ের পায়ে লীন হয়কোন এক দূরতম চরে, আজ শৈশব-কৈশোর আর তুমি।

তুমি যদি পাখি হও, কখনো উড়তে ইচ্ছে করেএকটু উষ্ণতা নিয়ে এসো, পাখায় রোদ্দুর মেখেআমি তোমাকে আমার দীর্ঘশ্বাসের সাজানো বনরূপান্তরিত শিলার বিশাল বিশাল পাহাড় দেখাবো।

তুমি শুধু একটু উষ্ণতা তোমার পাখায় নিয়ে এসো।আমার সমস্ত সমুদ্রের জলে তোমার আকাশে রংধনু আঁকবোআমার পাহাড় কেটে সমতলে তোমার স্বপ্ন বুনবোশুধু তুমি, আমি, আর আমাদের স্বপ্নের সে দ্বীপ।

এসইউ/এএসএম