ভ্রমণ

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ‘কে২’ যেন এক মৃত্যুফাঁদ

মাউন্ট এভারেস্টের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হলো কে২। এই পর্বতশৃঙ্গ জয় করা সহজ কোনো বিষয় নয়। যুগ যুগ ধরে অনেক পর্বতারোহীই কে২তে আরোহণ করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন, আবার অনেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণও করেছেন।

Advertisement

অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় এটি জংলী পর্বত নামেও পরিচিত। অন্নপূর্ণা পর্বতশৃঙ্গের পর উচ্চতায় ৮ হাজার পর্বতশৃঙ্গগুলোতে আরোহণ প্রচেষ্টায় মৃত্যুর হারের দিক থেকে কে২ এর অবস্থান দ্বিতীয়। এর চূড়ায় আরোহণকারী প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেছে।

সম্প্রতি এই পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পা রাখেন এভারেস্ট বিজয়ী পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন। গত ১৭ জুলাই রাতে কে২’র চূড়ায় ওঠার জন্য যাত্রা শুরু করেন ৩৯ বছর বয়সী এই পর্বতারোহী।

২২ জুলাই ওয়াসফিয়া নাজরীনের সঙ্গে কে২ জয় করেছেন ইরানি আফসানেহ হেসামিফার্ড, লেবানিজ-সৌদি নাগরিক নেলি আত্তার ও পাকিস্তানের নাগরিক সামিনা বেগ। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশের প্রথম নারী পর্বতারোহী হিসেবে কে২ জয় করেছেন।

Advertisement

কে২’র অবস্থান ও উচ্চতা

কে২ কারাকোরাম পর্বতশ্রেণীর অংশ, যা পাকিস্তান-চীন সীমান্তে বিস্তৃত। পর্বতটি উত্তর পাকিস্তানের গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলের বালতিস্তান ও চীনের জিনজিয়াং রাজ্যের ট্যাক্সকোরগান তাজিকের দফদার টাউনশিপের মধ্যে অবস্থিত।

কে২ হলো কারাকোরাম পর্বতশ্রেণীর সর্বোচ্চ বিন্দু। পাকিস্তান ও জিনজিয়াং উভয়েরই সর্বোচ্চ বিন্দু পর্বতটি। কারাকোরাম রেঞ্জটি চীন, ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা জুড়ে ৩০০ মাইল বিস্তৃত, যার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তটি আফগানিস্তান ও তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে উচ্চতায় ২০০ মিটার ছোট হলো কে২। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া। একে ‘স্যাভেজ পর্বত’ও বলা হয়।

Advertisement

বিশ্বের মাত্র ১৪টি পর্বতমালার মধ্যে কে২ একটি, যেটির উচ্চতা ৮ হাজার মিটারেরও বেশি। কে২ এর উচ্চতা হলো ৮ হাজার ৬১১ মিটার। অন্যদিকে এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার।

যেন এক মৃত্যুফাঁদ!

মার্কিন পর্বতারোহী জর্জ বেল ১৯৫৩ সালে পর্বত চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তিনি জানান, মনে হবে পর্বতশৃঙ্গ আপনাকে হত্যার চেষ্টা করছে। কারণ সেখানকার পরিবেশ ও আবহাওয়া মৃত্যুঝুঁক বাড়িয়ে দেয়।

কে২ পর্বতশৃঙ্গের সবচেয়ে কুখ্যাত স্থান হলো ‘বাটলনেক’ বা বরফপ্রপাত। ২০০৮ সালে এক তুষারধসে ‘বাটলনেকে’ ১১ জন পর্বতারোহী নিহত হন।

২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি এক স্প্যানিশ পর্বতারোহী পর্বত থেকে নামার সময় পড়ে গিয়ে মারা যান। বুঝতেই পারছেন কে২ পর্বতশৃঙ্গ যেন এক মৃত্যুফাঁদ। পর্বতারোহীদের মতে, কে২ শীতকালে আরোহণের জন্য সবচেয়ে চাহিদাপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

আবহাওয়ার নিষ্ঠুরতারন কারণেই বেশিরভাগ মানুষ কে২ পর্বতশৃঙ্গে ওঠার সাহস করেন না। সেখানে তুষারপাত ও ঝড় ঘন ঘন হয়। যা পর্বতে ওঠার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কে২ তে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০ শতাংশ।

শুরুর দিকের অভিযানসমূহ

কে২ পর্বতশৃঙ্গে আরোহণের প্রথম প্রচেষ্টা করেন একটি অ্যাংলো-সুইস অভিযাত্রী দল ১৯০২ সালে। তারা শৃঙ্গের উত্তর-পূর্ব দিক বরাবর ১৮ হাজার ৬০০ ফুট (৫ হাজার ৬৭০ মিটার) উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণে সমর্থ হন।

১৯০৯ সালে লুইগি আমেদিও, ডিউক অব আবুরাজ্জির নেতৃত্বে শৃঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব ধার বরাবর (যেটি পরে আবুরাজ্জি রিজ নামে পরিচিত হয়) একটি ইতালিয় অভিযান ও তারা প্রায় ২০ হাজার ফুট (৬ হাজার ১০০ মিটার) উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণে সমর্থ হন। এছাড়া আরও অনেকেই জয় করেছেন বিশ্বের দ্বিতীয় এই সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।

জেএমএস/জিকেএস