মোহাম্মদ মারুফ মজুমদার
Advertisement
যদি কখনো আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, চাঁদপুর শহরের সৌন্দর্যকে কী দ্বারা ব্যাখ্যা করবেন? নির্দ্বিধায় এবং অকপটে বলবেন, অবারিত সৌন্দর্যে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির এক অনিন্দ্য দর্শনীয় স্থান পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া তথা তিন নদীর মোহনার অকৃত্রিম রূপ ও টাটকা ইলিশের শহর হিসেবে।
গত ১২ জুলাই ঘুরতে গিয়েছিলাম চাঁদপুর শহরে। কোরবানির ছুটিতে আপনজনদের নিয়ে একগুয়েমি ও আলস্য দূর করতে ছয়জন সিদ্ধান্ত নিলাম ইলিশের শহর চাঁদপুর ভ্রমণ করবো। ভ্রমণের পরিবহন হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম বাইক। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, হেলমেট এবং হাইওয়ে সড়কে নির্দিষ্ট গতিবেগের কথা মাথায় রেখে খুব ভোরে রওনা দিলাম নাঙ্গলকোট উপজেলা থেকে।
নির্দিষ্ট গতিবেগে বাইক চলার বেগতিক সকালের হাইওয়ে রোডে সৌন্দর্য উপভোগ্য মনে হয়েছে। চারপাশে বড় গাছের সাথে সারি সারি সদ্য রোপিত ফুলের গাছ যেন রাস্তার সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করে দিলো। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্তরোত্তর উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে জনগণ, তা বলতে বাধা নেই।
Advertisement
সব মিলিয়ে তিন ঘণ্টায় সকাল নয়টায় পৌঁছে যাই চাঁদপুর শহরে। শহরে ঢুকতেই নজরে পড়ল দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু গেট, ইলিশ চত্বর, সার্কিট হাউজসহ বিভিন্ন স্থান। প্রদক্ষিণ করে ক্রমশ লঞ্চঘাটের দিকে এগোচ্ছি। প্রায় বিশ মিনিট পর লঞ্চঘাটে পৌঁছতেই দেখলাম বঙ্গবন্ধু পার্ক। যেখানে ইলিশ মাছের অবয়বে সুবিশাল আকৃতির ভাস্কর্য। বুঝতে বাকি রইল না, আমরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে গেছি।
পরিকল্পনা মাফিক সকালের নাস্তায় ছন্দপতন হলো। মানে দশ রকমের ভর্তা দিয়ে ভাত, ডাল সহযোগে নাস্তা সম্পন্ন হলো। এরপর পার্কের মধ্য দিয়ে তিন নদীর মোহনায় যাওয়ার সময় চোখে পড়ল ‘রক্তঝরা ভাস্কর্য’। যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করার প্রতীকী অর্থে বানানো হয়েছে। মুহূর্তেই যেন সারা শরীর শীতল হয়ে গেল।
তীরে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন নান্দনিক স্পটে গ্রুপ ছবিসহ, ব্যক্তিগত ছবি তোলা শেষ করে মোহনার পানি স্পর্শের জন্য ডিঙি নৌকা ভাড়া করে ত্রি-মোহনায় গেলাম। সেখানে পানির উদ্দাম ঢেউয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হওয়ার অনুভূতি তুঙ্গে ছিল। সম্মিলিত সুরে গান গাওয়ার মুহূর্তগুলো স্মৃতির মানসপটে জিইয়ে রাখার মতো।
সকাল পেরিয়ে দুপুর হলো। তিন নদীর মোহনার সৌন্দর্য উপভোগ শেষে গেলাম ইলিশের বাজারে তথা তরতাজা ইলিশ দেখতে। দেখাও হলো, সাথে বাড়ির জন্য কয়েক কেজি কেনাও হলো। দুপুরে সবাই মিলে ইলিশ ভোজন সম্পন্ন করে কিছুটা মুহূর্তে কাটিয়ে রওনা দিলাম বাড়ির দিকে।
Advertisement
আমার মনে হয়, তিন দিকের এ পানি প্রবাহের বিচিত্র বিস্ময় ও সতেজ ইলিশ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হবে। কেউ কেউ একে ‘মিনি কক্সবাজার’ বলেন। এখানে এলে নাকি কক্সবাজারের কিছু ফ্লেভার পাওয়া যায়। তবে সব মিলিয়ে আমাদের প্রাণবন্ত একটি দিন অতিবাহিত হলো। এরকম দিন বারবার আসুক।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/জিকেএস