মির্জাপুর থানায় মামলা দিতে এসে নিহত শাকিলের মা বার বার বলছিলেন আমার বুকের ধন খেলা দেখতে আসার সময় প্রথমে ১০টি টাকা চেয়েছিল। না করায় শেষে ৫টি টাকা চেয়েছিল। কিন্তু তাও দিতে পারিনি। পাশেই দাঁড়ানো ইমরান বলে চল টাকা লাগবে না। এই বলে তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মা পেছন থেকে ডেকে বলেন বোনের বাড়ি থেকে ঘুরে আসিস। একথা বলেই হাও মাও করে কেঁদে ফেলেন শাকিলের মা জোৎস্না বেগম। তার আহাজারিতে মির্জাপুর থানার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। এসময় পুলিশ, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিসহ উপস্থিত সকলের চোখই অশ্রুসজল হয়ে উঠে। চর চৌহাট গ্রামের জোৎস্না বেগমের চাচা আমিনুর রহমান, ইমরানের চাচা হযরত আলী, ফুফু মিনু আক্তার জানান, শাকিল ও ইমরান বালিয়া ব্র্যাক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। শাকিলের বড় দুই ভাই ও বোন রয়েছে। এছাড়া ইমরানের ২ বোন রয়েছে। শাকিলের বাবা দোলেয়ার হোসেন আড়াই বছর ও ইমরানের বাবা আবু বক্কর ২ বছর যাবত ইরাকে থাকেন। আড়াই বছর ধরে শাকিলের আব্বা ইরাক থাকলেও গত ১৩ মাস ধরে একটি টাকাও সে দেশে পাঠাতে পারছে না। ফলে পরিবারটি আর্থিকভাবে অত্যন্ত অস্বচ্ছল হয়ে পড়েছে। নিহত শাকিলের চাচা মির্জাপুর উপজেলার শশধরপট্রি গ্রামের উজ্জল মিয়াও একই কথা জানিয়েছেন।নিহত ইমরানের চাচা হযরত আলী, তারা মিয়া ও ফুফু মিনু আক্তার বলেন, ইমরানের বাবা আবু বক্কর গত দুই বছর আগে ইরাক যান। সেও পরিবারের কাছে কোনো টাকা পাঠাতে পারছেন না। ইরাক যাওয়ার আগে তারা ঢাকায় পুরাতন বিল্ডিং ও মাটি কাটার লেবারের সর্দার হিসেবে কাজ করেছেন বলে তারা জানিয়েছেন। আবু বক্কর ও দেলোয়ার হোসেন ধার দেনা করে ইরাক গেছেন বলে তারা উল্লেখ করেন।চৌহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আন্নিছা হাসেম লাভলী জানান, হাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে তারা নিখোঁজ হয়। তবে ধামরাই থানা পুলিশ শাকিল ও ইমরান নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানার পরও কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তা তার বোধগম্য নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।ধামরাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রেজাউল হক দিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইমরান ও শাকিল নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়নি। তবে লাশ পাওয়ার কিছুক্ষণ আগে ওই গ্রামের জনৈক এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি লাশ পাওয়ার বিষয়টি শুনেছেন বলে উল্লেখ করেন। মির্জাপুর থানা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে নির্মম এ হত্যাকাণ্ড দুটির কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। তাছাড়া হত্যাকারীদের কাউকে শনাক্তও করা যায়নি। তবে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।এমএএস/আরআইপি
Advertisement