বিশেষ প্রতিবেদন

নিউমার্কেটের ফুট ওভারব্রিজে চলাটাই দায়

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেট। পথচারীদের চলাচলের জন্য সেখানে রয়েছে দুটি ফুট ওভারব্রিজ। একটি নিউমার্কেট ও গাউছিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। অপরটির নিউ মার্কেটের ২ নং গেট ও বলাকা সিনেমা হলের মাঝে। তবে যাদের সুবিধা দিতে ফুট ওভারব্রিজগুলো নির্মিত সেই পথচারীদের যেন এর উপর দিয়ে চলটাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিউমার্কেট-গাউছিয়া সংযোগকারী ফুট ওভারব্রিজটিতে দেখা যায়, চারটি সিঁড়ির সবগুলোর প্রবেশ মুখেই বসেছে বেশ কয়েকটি ভাসমান দোকান। পশ্চিম পাশের দুটি সিঁড়ির প্রবেশমুখে মেয়েদের কাপড় এবং জুতার বেশ কয়েকটি দোকান। সিঁড়ির নিচে রয়েছে মদিনা চিকেন হাউজ নামে একটি স্থায়ী দোকান। পূর্বপাশে মেয়েদের জুতার বড় বড় দুটি দোকানের সঙ্গে রয়েছে কাপড়ের দোকান। সঙ্গে রয়েছে আরো বেশ কয়টি কাপড়ের ভাসমান দোকান। একদম উপরে আবার হকার ও ভাসমান দোকানে ছেয়ে গেছে রাজধানীর নিউ মার্কেট এবং নুরজাহান মার্কেটের মধ্যকার সামনের যাত্রী পারপারের জন্য নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটি।বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নিউ মার্কেটের ২ নং গেটের সামনের ফুট ওভার ব্রিজটিরও একই অবস্থা দেখা যায়। এ ফুট ওভারব্রিজটির পূর্ব পাশের প্রবেশ মুখে বসেছে চশমার দোকানসহ কসমেটিকসের ভাসমান দোকান। আর পশ্চিম পাশে বসেছে কাপড়ের দোকানসহ ফলের দোকান। উপরে আছে আবার বেশ কয়েকটি কসমেটিকসের ভাসমান দোকান। তবে লোক দেখানোর জন্য পুলিশ মাঝে মাঝে ব্রিজের উপরের দোকানীদের ধাওয়া করলেও কখনো প্রবেশ মুখের দোকানগুলোকে করে না। আবার যাদের ধাওয়া করা হয় তারা পরক্ষণেই জায়গা মতো বসে যায়। কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রবেশ মুখের দোকানীদের কাছ থেকে পুলিশ দৈনিক ১৫০-২৫০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।তবে নাম প্রকাশ এবং ছবি দেয়া হবে না এমন শর্তে দোকানিরা এ কথা বলতে রাজি হয়। আবার উপরে বসা হকারদের কাছ থেকে  ৬০-১০০ টাকা পর্যন্ত নেয় পুলিশ।আর যারা হেঁটে-হেঁটে বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে নেয় ২০-৩০ টাকা। বেশ কয়েকটি দোকানির সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।একটি গ্রুপ টাকা তুললেও অন্যগ্রুপ তা পুলিশের কাছে পৌঁছে দেয়। আবার এমন তথ্য কাউকে বলা যাবে না বলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের। প্রমাণ স্বরুপ দোকানিদের সঙ্গে কথা বলার সময় দুই তিনজন লোক পাশে থেকে তাদের চোখের ইশারায় কথা বলতে নিষেধ করতে দেখা যায়।  রাজধানীর গোপীবাগ থেকে নিউমার্কেটে কেনাকাটর উদ্দেশ্যে যাওয়া সুমাইয়া আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব দোকানের জন্য নিয়মিতই ভোগান্তি পোহাতে হয়। যেন দেখার কেউ নেই। আবার এদেরও (দোকানি) কি করার আছে পেটের টানেইতো এখানে আসা। তাই কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয়।’তবে জুরাইন থেকে আসা আবুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, এগুলো কার দেখার কথা? এখানে কি কেউ দেখার আছে? আমরা যারা সাধারণ পথচারী, তারা বললে তো উল্টো মার খেতে হবে। কষ্ট করলে তো সাধারণ মানুষকেই করতে হয়, তাদের কি আসে যায়! ভাসমান কসমেটিক দোকানদার সোহাগ হোসেন বলেন, নিয়মিত ৫- ৬শ’টাকা বিক্রি করেন। তবে পুলিশকে দুটি দোকন মিলিয়ে ১০০ টাকা দিতে হয়। তার পাশেই রয়েছে রাসেল নামে ১২-১৩ বছর বয়সী আরেক ছেলে। সেও একটি দোকান নিযে বসেছে। তারও দিতে হয় ৬০ টাকা। মানুষের চলাফেরায় কষ্ট হয় জানার পরেও পেটের টানে এভাবে দোকান করে বলে জানায় রাসেল।নাম না প্রকাশ করার শর্তে সিঁড়ির প্রবেশ মুখের এক কাপড়ের দোকানদার বলেন, আমরাতো নিয়মিত ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করি। আমরা প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকি। তবে কাকে ভাড়া দেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি তিনি।আবার ভাসমান বিক্রেতা রহিম (১৩) জানায়, তারও দারোয়ানকে নিয়মিত ১০ টাকা করে দিতে হয়। তবে কোন দারোয়ানকে টাকা দেয় সে প্রশ্ন করলে পাশে থাকা বৃদ্ধ ভিক্ষুক ইশারায় থামিয়ে দেন। তবে সে ভিক্ষুক জানান, তার কারো কাছে চাঁদা দিতে হয় না। তবে অন্যদের বাকিদের লাগে।এমএইচ/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি

Advertisement