ধর্ম

ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো করা সুন্নাত

সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর নেয়ামতসমূহের মধ্যে একটি ঘুম। মানুষকে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে তিনি অনেক বড় অনুগ্রহ করেছেন। প্রশান্তিদায়ক এ ঘুম সম্পর্কে কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে মহান আল্লাহর ঘোষণা এমন-

Advertisement

وَّ جَعَلۡنَا نَوۡمَکُمۡ سُبَاتًا

‘তোমাদের ঘুমকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী আরামদায়ক।’ (সুরা নাবা : আয়াত ৯)

وَ مِنۡ رَّحۡمَتِهٖ جَعَلَ لَکُمُ الَّیۡلَ وَ النَّهَارَ لِتَسۡکُنُوۡا فِیۡهِ وَ لِتَبۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِهٖ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

Advertisement

‘তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৭৩)

দিনের ক্লান্তি কাটিয়ে সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে এবং শরীরের বর্ধন, কাজের জন্য নিজেদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে ঘুমের বিকল্প নেই। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যও ঘুম অনেক জরুরি বিষয়। ঘুমের মাধ্যমে মুমিন বান্দা নিজেদের দেহ ও মনকে প্রশান্তি দেয়। আর তাতে স্রষ্ঠার প্রতি আনুগত্য ও মনোবল দৃঢ় হয়। তাই ঘুমানোর আগে যে কাজগুলো সুন্নাত তাহলো-

বিছানা ঝেড়ে নেওয়া, দরজা বন্ধ করা, অজু করা, আয়াতুল কুরসি পড়া, সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া, সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়া, সুরা কাফেরুন পড়া, সুরা মুলক পড়া, রাতে ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করা, খাবারের পাত্র ঢেকে রাখা, চোখে সুরমা লাগানো, ডান কাত হয়ে শোয়া, দোয়া পড়া, বাতি নিভিয়ে ফেলা, তাসবিহ পড়া।

ঘুমকে ইবাদতে পরিণত করার অনেকগুলো সুন্নাত কাজ আছে। সেগুলো তুলে ধরা হলো-

Advertisement

১. বিছানা ঝেড়ে নেয়া

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কোনো ব্যক্তি বিছানায় (ঘুমাতে) যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, বিছানার উপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কিনা। তারপর পড়বে-

بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ

উচ্চারণ : বিসমিকা রাব্বি ওয়াদাতু ঝাম্বি, ওয়া বিকা আরফাউহু, ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজ বিহি ইবাদাকাস সালিহিন।’

অর্থ : ‘হে আমার রব্ব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠবো। যদি আপনি ইতোমধ্যে আমার জান কব্‌য করে নেন তা হলে, তার উপর রহম করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হেফাজত করবেন, যেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের হেফাজত করে থাকেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

২. দরজা বন্ধ করা

হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখ। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর উপর কোনো বস্তু আড়াআড়ি করে রেখো। আর (শয্যায় যাওয়ার সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দেবে। (বুখারি)

৩. অজু করা

হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানাবাতের (অপবিত্রতা) অবস্থায় ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি লজ্জাস্থান ধুয়ে নামাজের ওজুর মতো ওজু করে ঘুমাতেন।’ (বুখারি)

৪. আয়াতুল কুরসি পড়া

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

উচ্চারণ- আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিয়্যুল আজিম।’ (উচ্চারণটি কোনো কুরআন বিশেষজ্ঞের কাছে বিশুদ্ধভাবে পড়ে নেয়া জরুরি)

অর্থ : (তিনিই) আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং ঘুমও নয়। সবই তাঁর, আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে। কে আছ এমন- যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? (চোখের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানের সীমা থেকে কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টিত করতে পারবে না, কিন্তু ‘হ্যাঁ’, তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। সমগ্র আসমান এবং জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে তাঁর সিংহাসন। আর সেগুলোকে ধারণ (নিয়ন্ত্রণ) করা তাঁর জন্য কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’

মানুষের নিরাপত্তায় আয়াতুল কুরসি

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার দেখতে পেলেন একজন ব্যক্তি সাদকার মাল চুরি করছে। তখন তিনি তার হাত ধরে বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাব।’ তখন ওই ব্যক্তি বলল যে, সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন। তাই দয়াবশত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে ছেড়ে দিলেন ।

পরদিন সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘গতকাল অপরাধীকে কী করেছে?’

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন । নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবারও আসবে। এভাবে চোর পরপর ৩দিন সাদকার মাল চুরি করতে আসে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুও তাকে প্রত্যেকবার ছেড়ে দেন। সর্বশেষ সে আয়াতুল কুরসির আমলের কথা বর্ণনা করে বলে, আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা জানতে চাইলে চোর বললো-

‘রাতে যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন ফেরেশতাকে পাহারাদার নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনা শুনে বললেন, ‘যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘তুমি কি জান সে কে?’ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘না’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ‘সে হচ্ছে শয়তান।’ (বুখারি)

৫. ঘুমানোর সময় দোয়া পড়া

হজরত হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে নিজ বিছানায় শোয়ার সময় নিজ হাত গালের নীচে রাখতেন, তারপর বলতেন-

اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই জীবিত হই ‘

আর যখন ঘুম থেকে জাগতেন, তখন বলতেন-

‏الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

উচ্চারণ : ‘আল-হামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’

অর্থ : সেই আল্লাহ্‌র জন্য প্রশংসা, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনরুত্থান হবে।’ (বুখারি)

৬. ডান কাতে শোয়া

হজরত বারাআ ইবনু আজিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নিজ বিছানায় বিশ্রাম নিতে যেতেন, তখন তিনি ডান পাশের উপর ঘুমাতেন।’ (বুখারি)

৭. সতর অবস্থায় ঘুমানো

হজরত বাহয ইবনে হাকিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘আমি প্রশ্ন করলাম- হে আল্লাহর রাসুল ! আমাদের লজ্জাস্থান কতটুকু ঢেকে রাখব এবং কতটুকু খোলা রাখতে পারব? তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন- ‘তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সবার দৃষ্টি থেকে তোমার লজ্জাস্থান হেফাজত করবে।’

তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘পুরুষরা একত্রে অবস্থানরত থাকলে?

তিনি বললেন- ‘যতদূর সম্ভব কেউ যেন আভরণীয় স্থান দেখতে না পারে তুমি তাই কর।

আমি আবার প্রশ্ন করলাম- ‘মানুষ তো কখনো নির্জন অবস্থায়ও থাকে।’

তিনি বললেন- ‘আল্লাহ তাআলা তো লজ্জার ক্ষেত্রে বেশি হাক্বদার। (ইবনু মাজাহ)

৮. উপুড় হয়ে না শোয়া

হরজ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে পেটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা এ রকম শোয়া পছন্দ করেন না।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

৯. বাতি নিভিয়ে ফেলা

হজরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শোয়ার (ঘুমের) সময় তোমরা তোমাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রেখ না।’ (নাসাঈ)

১০. খারাপ স্বপ্ন দেখলে পাশ ফিরে ঘুমানো

হরজত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বামপাশে তিনবার থু থু ফেলে এবং শয়তানের (অনিষ্টতা) থেকে আল্লাহর কাছে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর যে পাশে ঘুমানো ছিল তা থেকে যেন বিপরীত দিকে ফিরে ঘুমায়।’ (মুসলিম)

১১. খারাপ স্বপ্ন দেখার পর করণীয়

হজরত আবু কাতাদাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর দুঃস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন এমন কোনো ব্যাপারে স্বপ্নে দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বাম পাশে তিন বার থু থু ফেলে এবং (আউজুবিল্লাহ বা সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পড়ে) স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চায়। কারণ (এভাবে করলে) তাতে তার কোনো ক্ষতি হতে পারে না।’ (মুসলিম)

১২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত

রাতের বেলায় ভয় ও অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে বাঁচতেও সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের আমল কার্যকরী। যা মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অনষ্টিতা থেকে মুক্তি দেয়। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু মাসউদ বদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বেলায় সুরা বাকারার শেষ আয়াত দুটি তেলাওয়াত করবে, তার জন্য এ দুটিই যথেষ্ট।’ (বুখারি)

সুরা বাকারা শেষ আয়াত দুটির তেলাওয়াত সে রাতের অপ্রীতিকর জিনিসের মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে। আর তাহলো-

آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ - كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ - وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ - لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا - لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ - رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا - رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا - رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ - وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا - أَنتَ مَوْلَانَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

উচ্চারণ : আমানার রাসুলু বিমা উংযিলা ইলাইহি মিররাব্বিহি ওয়াল মুমিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালায়িকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিমমির রুসুলিহি। ওয়া কালু সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির। লা ইকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা – লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত – রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন-নাসিনা আও আখত্বানা – রাব্বানা ওয়া লা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাজিনা মিং ক্বাবলিনা – রাব্বানা ওয়া লা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাকাতা লানা বিহি – ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা – আংতা মাওলানা ফাংচুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮৫-২৮৬)

১৩. সুরা মুলক তেলাওয়াত করা এবং ইসতেগফার পড়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা মুলক তেলাওয়াতের আমল করবে সে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে।’ (তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)

সুরা মুলক রাতের বেলা পড়া উত্তম, তবে অন্য যেকোনো সময়ও পড়া যাবে। হাদিসে পাকে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা মুলক তেলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না।’ (তিরমিজি)

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলিফ লাম মীম তানযিল ও তাবারাকাল্লাজি (সুরা মুলক) না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না।’

১৪. সুরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাস পড়া

নিরাপত্তার জন্য এ তিন সুরার আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব এবং সুরা নাস ৩বার পড়বে; এগুলোই তার সবকিছুর (নিরাপত্তার) জন্য যথেষ্ট হবে।’ হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এ সুরার অনেক বৈশিষ্ট্য ও প্রাপ্তির কথা ওঠে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়তেন এবং উভয় হাতে ফুঁক দিতেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন।’ (বুখারি)

১৫. সুরা ফাতিহা ও সুরা কাফিরূন পড়া

সুরা কাফেরূন রাতের বিশেষ আমল হিসেবে পরিচিত। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

> এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজ করলেন, আমাকে ঘুমের আগে পড়ার জন্য কোনো দোয়া বলে দিন। তখন তিনি ‘সুরা কাফিরূন’ পড়তে আদেশ দেন এবং বললেন এটা শিরক থেকে মুক্তিপত্র।’ (আবু দাউদ; তাবারানি, তাফসিরে ইবনে কাসির)

১৬. তিন তাসবিহ পড়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ৩ তাসবিহ- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার করে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রত্যেক নামাজের পর তাসবিহ পড়ার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘ফাসাব্বিহহু আদবারাস সুজুদ’ দ্বারা তিনি এ অর্থ করেছেন। এর মানে ‘এবং সেজদাসমূহের সমাপ্তির পর’ অর্থাৎ নামাজ শেষে তাসবিহ পড়।’ (বুখারি)

আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে, ‘আল্লাহর তাসবিহ পাঠ কর; বলতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর যে তাসবিহ পড়তে বলেছেন। তাহলো-

> সুবহানাল্লাহ- ৩৩বার;

> আলহামদুলিল্লাহ- ৩৩বার; এবং

> আল্লাহু আকবার- ৩৪বার।

শুধু প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরই নয়, এ তিন তাসবিহ সকাল-সন্ধ্যায় যেমন পড়া কথা বলেছেন বিশ্বনবি তেমনি তিনি রাতে শোয়ার সময়ও এ ৩টি তাসবিহ পড়া কথা বলেছেন। সুবহানাল্লাহ-৩৩ বার, আলহামদুল্লিাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৩/৩৪বার পড়া।

ঘুমের সুন্নাত কাজগুলো মেনে চললে মিলবে রাতের নিরাপত্তা ও ঘুমের প্রশান্তি। যার বাস্তব উদাহরণ নবিজীর সাহাবি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলতেন-

‘আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং জাগ্রত হওয়ার পর নামাজ আদায় করি। জেগে থাকা অবস্থায় যেভাবে নামাজের মাধ্যমে সাওয়াবের আশা করি ঠিক সেভাবে ঘুমের মধ্যে সাওয়াবের আশা করি।’ (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘুমের উল্লেখত সুন্নাতগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। এ সুন্নাতগুলো আদায়ের মাধ্যমে ঘুমকে ইবাদতে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। সার্বিক ক্ষতি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম