দেশজুড়ে

‘আমিষের চাহিদা মেটাতে’ নদী-কৃষিজমি দখল করে মাছচাষ!

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ইছামতি নদীতে বাঁধ দিয়ে ও কৃষকের জমি দখল করে মাছচাষের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। উপজেলার দাশকান্দি বয়ড়া এলাকায় নদীর এক কিলোমিটারে বাঁধ দিয়ে এই মাছচাষ করছেন অভিযুক্তরা।

Advertisement

এছাড়া নদীর পাশের অন্তত ১০০ একর কৃষি জমিতে জোরপূর্বক মাছচাষ করা হচ্ছে। এর ফলে কৃষক আমন ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিধিরা সমন্বিতভাবে এই মাছচাষ শুরু করেন। এর ফলে নদী কিংবা মুক্ত জলাশয়েও মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন না জেলেরা। ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

সরেজিমনে দেখা গেছে, দাসকান্দি বয়ড়া গ্রামে ইছামতি নদীর এক কিলোমিটার এলাকায় তিনটি বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ আটকে দেওয়া হয়েছে। অবৈধ বাঁধের কারণে নদীর পানি নষ্ট হয়ে গেছে। নদী থেকে বিভিন্ন খাল ও বিলে পানি বের হওয়ার রাস্তাও আটকে দেওয়া হয়েছে নেট দিয়ে। যাতে করে মাছ বের হতে না পারে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সাদেক, শেখ ফরিদ, মো. রাজ্জাক, মিলন খান ও মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রভাবশালীরা ইছামতি নদী সারা বছরই তাদের দখলে রেখে মাছচাষ করেন। আশপাশের লোকজনকে নদীতে নামতে দেওয়া হয় না। এমনকি পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি নিতেও বাধা দেওয়া হয়।

এছাড়া বর্ষার পানি ঢোকার পরপরই নদীর পাশের অন্তত ১০০ একর জমি দখলে নেন তারা। সেখানেও মাছচাষ করেন। বোরোর পর কৃষকরা আমন ধান চাষ করলেও মাছে তাদের সেই ধান নষ্ট করে ফেলে। কৃষকরা তাদের নিজেদের জমিতেও নামতে পারেন না। নদী কিংবা বাড়ির আশপাশের ক্ষেত থেকেও মাছ ধরতে পারেন না জেলে পরিবারগুলো। অবৈধভাবে নদী ও অন্যের কৃষি জমি দখল করে মাছচাষ করলেও কেউ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে মিথ্যা মামলায় হয়রানিসহ নানা হুমকি ধামকি দেওয়া হয়।

দিশারি বহুমুখি সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে এই মাছচাষ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক কলেজ শিক্ষক আহমেদ হোসেন পিন্টু জানান, হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে এই সমিতি আত্মপ্রকাশ করে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আব্দুর রউব বর্তমানে সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চুন্নু, তুষার চেয়ারম্যান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ, বয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ সহসভাপতি শাজাহান, মাসুম আনছারী, ইয়াছিন হোসেন, কালীপদ মেম্বারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জমির মালিকদের সমন্বয়ে এই মাছচাষের প্রকল্প চলছে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, মাছচাষের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পুরণের লক্ষ্যেই তাদের এই প্রকল্প।

কিন্তু নদী ও অন্যের জমি দখল করে মাছচাষ করা বৈধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার সবার সহযোগিতা নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে মাছচাষ করা হচ্ছে। প্রকল্পের লাভের টাকা সমহারে বণ্টন করা হয়।

নদী ও কৃষকের জমি দখল করে মাছচাষ করার বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, নদী ও উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে বাঁধ অপসারণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এফএ/জেআইএম