দেশজুড়ে

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) পরিবারের পক্ষ থেকে কোরআন খতম, দোয়া ও কবর জিয়ারত করা হয়।

Advertisement

স্বামী হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত ও দোয়ায় শরিক হতে সোমবার (১৮ জুলাই) রাতে দুই সন্তান নিয়ে নুহাশ পল্লীতে আসেন মেহের আফরোজ শাওন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সন্তান, নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, হিমু পরিবহনের সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও দর্শনার্থীদের নিয়ে তিনি হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করেন।

পরে সাংবাদিকদের মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের যে স্বপ্ন ছিল তা পূরণ করার জন্য যে শক্তি যে সামর্থ্য দরকার হয় সেটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তাও আমার নেই। সমষ্টিগতভাবে আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি হয়তোবা হবে। সে ধৈর্যটা আমার আছে, সে ধৈর্য ধরে আমি ১০ বছর অতিক্রম করেছি। সে স্বপ্নটা আমি দেখেছি, দেখছি। এটা কম সময় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সে স্বপ্নটা পূরণ করা দরকার, আমি চাইলে একটা ছোটখাট হাসপাতাল করতে পারি। সেটা ৮-১০টা হাসপাতাল বাংলাদেশে যেরকম আছে সেটা সেরকম হবে না, সেই জোর আমার নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক বড় স্বপ্নের আগেও অনেকগুলো ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্নগুলো যে একটু একটু করে পূরণ হচ্ছে সেটার ভালো একটা খবরটা দেই। হুমায়ূন আহমেদের নিজ গ্রামে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠটি যেটার কথা আমি প্রতিবারই বলেছি সেটি নিয়েও তার একটি স্বপ্ন ছিল। এ স্কুলটি ২০২০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেনি) পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ছিল। কিন্তু সুখবর হলো ওই স্কুলটি হুমায়ূন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীর মাসেই ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে।’

Advertisement

‘সে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপশি বিভিন্ন বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানের মধ্যে মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। এরকম ছোট ছোট স্টেপ দিয়ে আমরা সামনের দিকে আগাবো। কিন্তু আমি এখানো শক্তি অর্জন করতে পারিনি যে আমি একটা ডাক দিবো বা আমি কাউকে বলবো। আমি বিভিন্নজনকে বলবার চেষ্টা করছি বা সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের সরকার তথা নীতিনির্ধারকদের প্রতি হুমায়ূন আহমেদ যে ধরনের ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের স্বপ্ন দেখছিলেন তা নির্মাণের উদ্যোগ নেবার জন্য অনুরোধ করছি’, যোগ করেন অভিনেত্রী শাওন।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি ও অন্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, হুমায়ূন আহমেদের পরিবার থেকে ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি তাদের পাশে থাকবে। নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকারি, বেসরকারি অথবা পারিবারিক উদ্যোগে একটি স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী এস এম লুৎফর রহমান, ধ্রুব পদ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার ফিরোজ শেখ, মাতৃভাষা প্রকাশের স্বত্বাধিকারী নেছার উদ্দিন আইয়ুব, অনিক পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী মাহতাব উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরে ২৪ জুলাই গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে তার স্বপ্নের নুহাশ পল্লীর লিচুগাছ তলায় জনপ্রিয় এ লেখককে দাফন করা হয়।

Advertisement

আমিনুল ইসলাম/এসআর/এমএস