সাহিত্য

মাসুদ চয়নের দুটি কবিতা

মা

Advertisement

হঠাৎ বৃষ্টির আগমন হলে স্মৃতিপট জেগে ওঠে মাতৃ বিশেষণে;জন্ম-মৃত্যুর বাহিরের কোনো এক সত্তা মনে হয় নিজেকেচারদিকে নিঝুম অন্ধকার আর একাকিত্ব;যাকে একান্তে বহন করে চলেছি বছরের পর বছর— ট্র্যাজেডির তৈলচিত্র জ্বালিয়ে যাচ্ছে সারাক্ষণসাহারা মরুভূমির মতো নিঃসঙ্গতা বুকে আঁছড়ে পড়ছে।

বিষণ্নতার বাগানে হাঁটাহাঁটি করছে গ্লানির অগ্নি শৈল—আত্মিক জরাজীর্ণ রেললাইন ধরে এগিয়ে চলছিই!মনে হচ্ছে একটি মা-ই যেন এক পৃথিবীর যাবতীয় অস্তিত্বে বিরাজ করছেন;তাঁর জরাজীর্ণ দেহটাকে খুব খুব মনে পড়ে যখন সারা শহর-পাড়া ঘুমিয়ে যায়—যখন নিস্তব্ধতার ঢেউ এসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে— মৃত্যুর আগে তিনি নির্বাক মমির মতন তাকিয়ে ছিলেন আমার চোখের দিকে;সেদিন বুঝেছিলাম মায়েরা অন্ধ চোখেও সন্তানকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করতে পারেন—মায়ের জীবনবোধ কাব্যের মতো গভীর নৈস্বর্গীয়।

অথচ আজ!আজকের এই দিনগুলো আগামীর আলপথে এগিয়ে যাচ্ছে ধুকেধুকে তিলেতিলে!যে দিনের দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে অন্ধকার ঘোরের মতো—সে কথা কেউ জানলো না,কোনোদিন জানবে না!তিনি আজ শুয়ে আছেন উচ্ছিষ্ট আগাছার আড়ালে আবডালে ওঁৎ পেতে;পৃথিবীর যাবতীয় ইচ্ছে আহ্লাদ তার অসীমে—অথচ আমার চেতনা বলে অন্য কথাতিনি সজাগ দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন আজও;অপেক্ষা প্রতীক্ষা! চেয়ে চেয়ে একবুক আফসোস বুকে পুষে নিরালায় অশ্রুপাত করে যাচ্ছেন;প্রতিবিন্দু অশ্রুকণা জমে জমে মমতার সমুদ্র হয়ে যাচ্ছে;সেই মমতা কুড়োবার মতো কেউ নেই—বুকের জমিনটা তাঁর কতোটা কাল ধরে হাহাকার পুষে যাচ্ছে!

Advertisement

অথচ আমি!মায়ের কবর হতে চারশ কিলোমিটার দূরে ভীষণ একাকী—উদবাস্তু নাগরিক জীবন পেয়েছি মাকে হারিয়ে;মা, তিনি তো এক জলজ্ব্যান্ত ঐশ্বর্যধন্য পৃথিবী—সে কথার মর্মার্থ অনুধাবন করে যাচ্ছি বিগত তেরোটি বছর ধরে;মায়ের কি মৃত্যু হতে পারে!

**** হঠাৎ এলে

হঠাৎ দমকা ঝড়ের মতো উদয় হলে মন আকাশে;ব্যথারা ভীষণ বিষ হয়ে জ্বলছে বৃক্ক পাতায়; মনে হচ্ছে হন্তারক হাঙরের ধারালো দাঁতের খাঁজে বিঁধে আছি—হৃৎপিণ্ডে কারা যেন কুঠার দিয়ে কাঠের কারুশিল্প আঁকছে;স্নায়ুবিক সংবেদন সংকটে অস্তমিত নীলাভ সূর্যের মতো—সব অনুতাপ নিস্তার নিয়ে ভেসে যাচ্ছে আগ্নেয়গিরির লাভা স্রোতেযন্ত্রণার আরেক নাম নির্মল নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বুঝি!পৃথিবীর যাবতীয় ঐশ্বর্য হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিঃসঙ্গ চলন্তিকা হয়ে বেঁচে থাকা;আঁধার খুড়ছে সময়ের পঙক্তিমালা;সেইসব মাঠ-প্রান্তর শাপলা দীঘির জল যেখানে তোমার নরম শিল্পীত পায়ের আঁচড় কাঁটা হয়ে বিঁধে আছেমৃয়মান স্মৃতিগুলো হইচই হয়ে ফিরে আসে;কোনোদিন যেতে পারিনি সেখানে; সেইসব চেনা পথ ধরে জলে ভেসে ভেসে কোনোদিন ভাবতে পারিনি রাঙা ভোরের মতো শুভ্র পাখিটির কথা;রাত্রি আঁধারের মতো লীন হয়ে গেছো যে! হঠাৎ এলে কেন!

এসইউ/জিকেএস

Advertisement