শিক্ষা

‘শুধু পড়াশোনা করে সেরা হওয়া যায় না’

শুধু পড়াশোনা করে সেরা হওয়া যায় না, সেরা হতে ভালো মানুষ হওয়া প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভূমিকা পালন করতে হয়। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ সেই দায়িত্ব পালন করে। যে কারণে এখানকার শিক্ষার্থীরা একাধারে মেধাবী ও ভালো মানুষ হয়ে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ। ২০২২ সালে রাজধানী ঢাকার এ কলেজটি দেশসেরা কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সেরা হওয়ার নানা বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন অধ্যক্ষ কাজী শামীম ফরহাদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুরাদ হুসাইন।

Advertisement

জাগো নিউজ: ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুরুতে কেমন ছিল?

অধ্যক্ষ কাজী শামীম ফরহাদ: ১৯৬০ সালে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আইয়ুব খান এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার পর অনেক জেলায় এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা হয়। বর্তমানে সেসব স্কুল-কলেজ ক্যাডেট কলেজ হয়ে গেলেও ঢাকা রেসিডেনসিয়াল রয়ে গেছে। স্কুলের ভেতর ৫০ একর জমির ওপর নির্মিত। ক্লাসরুমের বাহিরে আবাসিক, বিশাল খেলার মাঠসহ শিক্ষার্থীদের জন্য সব সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা হয়ে থাকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ বিভাগের সচিব পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে থাকেন। এখানে স্কুল শাখায় তিন হাজার আর কলেজ শাখায় দুই হাজার মিলে মোট পাঁচ হাজার ছাত্র রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক দিবা আর অর্ধেক প্রভাতীর ছাত্র। আবাসিকে এক হাজার ছাত্র থাকে।

জাগো নিউজ: অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাইতে আপনাদের প্রতিষ্ঠানে ভিন্নতা বা বিশেষত্ব কী?

Advertisement

অধ্যক্ষ কাজী শামীম ফরহাদ: আমাদের শিক্ষার্থীদের ভালো পড়াশোনার মাধ্যমে শুধু মেধাবী করে গড়ে তোলাই হয় না, তাকে ভালো মানুষ ও দক্ষ করে তুলতে সব শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। ফজরের নামাজ থেকে রাতে ঘুমিতে যাওয়া পর্যন্ত দৈনন্দিন সবকিছু শিক্ষক-কর্মচারীদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। স্বজনের মতো শিক্ষকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ক্লাস নেওয়া ও রাত ১১টা বাজলে সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে হয়। এসবের মাধ্যমে বড়দের কথা শোনা, শৃঙ্খল জীবন-যাপন শেখা ও সময়ের কাজ সময়ে করার অভ্যাস তৈরি হয়ে থাকে।

জাগো নিউজ: এখানে কারা পড়ালেখা করা সুযোগ পেয়ে থাকে?

অধ্যক্ষ কাজী শামীম ফরহাদ: এখানে সর্বস্তরের ছেলেরা পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে থাকে। আগে প্রথম শ্রেণি থেকে ছাত্র ভর্তি করা হলেও বেশ কিছুদিন ধরে তৃতীয় শ্রেণির থেকে ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষায় ধনী-গরিব সবাই অংশগ্রহন করে থাকে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেরা এখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

জাগো নিউজ: পড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্রদের আর কী কী শেখানো হচ্ছে?

Advertisement

অধ্যক্ষ কাজী শামীম ফরহাদ: আমরা ছাত্ররা শুধু বই পড়ে পরীক্ষায় ভালো ফল পেলো, সেটি প্রত্যাশা করি না। এর সঙ্গে একজন ভালো মানুষ ও সমাজের যোগ্য করে গড়ে তোলার কাজটিও করা হয়ে থাকে। আমাদের নানা বিষয়ের ওপর ১৮টি ক্লাব রয়েছে। সেসব ক্লাবের মাধ্যমে ভাষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি সেমিনারসহ নানা ধরনের সহশিক্ষা চর্চা করা হয়ে থাকে। সেখানে যুক্ত হয়ে যার যেটা ভালো লাগে সে সেটি মুক্তভাবে করছে। এর মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা বের করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। এজন্য প্রতি সপ্তাহে আমরা দুদিন মেধা বিকাশের ক্লাস নেই। জিপিএ কেন্দ্রিক ফল থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ অনেকের পরীক্ষার ফল ভালো হলেও কাজে আসে না। আমাদের সন্তানরা যেন নিজেরাই চিন্তা করতে পারে, সেভাবে তাদের শিক্ষা দিতে হবে। যাদের যতটুকু আছে তাই নিয়ে চেষ্টা করতে হবে। আমাদের শিক্ষকদের ইচ্ছাটাও বড় বিষয়।

জাগো নিউজ: সেরা প্রতিষ্ঠান হতে কাদের ভূমিকা রয়েছে?

অধ্যক্ষ কাজী শামীম ফরহাদ: সেরা প্রতিষ্ঠান একদিনে হওয়া সম্ভব হয়নি, এর জন্য অনেকের ভূমিকা রাখতে হয়েছে। আমাদের ছাত্রদের বেশি অবদান রয়েছে। আমরা তাদের পড়িয়েছি, তারা ভালো ফল পেয়েছে। সেটা না হলে সেরা হওয়া সম্ভব হতো না। তারপর তাদের অভিভাবকদের ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা এগিয়ে আসেন বলে আমাদের সব বিষয়ে অনেক পয়েন্ট অর্জন হয়েছে। তার সঙ্গে শিক্ষকদের আন্তরিকতা আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। আগে আমরা এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করিনি বলে এ ধরনের স্বীকৃতি পাইনি। প্রথমবার আমরা অংশগ্রহণ করে দেশের সেরা কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি।

জাগো নিউজ: করোনাকালীন শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করেছিলেন?

অধ্যক্ষ কাজী শামীম ফরহাদ: করোনার মধ্যে আমাদের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করতে ডিভাইস কিনতে ১২ থেকে ৩৬ মাসের সহজ কিস্তিতে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সে সময়ে শুধু ক্লাস নয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মেধা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। তবে ঢাকায় অনেক শীর্ষ মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এগিয়ে গেছে। তবে তাদের কেউ কেউ শুধু মুখস্থবিদ্যার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

জাগো নিউজ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? অধ্যক্ষ কাজী শামীম ফরহাদ: সেরা অবস্থান ছাড়িয়ে যাওয়া আমাদের মূল লক্ষ্য। শিক্ষার চর্চা ও সহশিক্ষার মাধ্যমে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে, সেভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা হবে।

জাগো নিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

অধ্যক্ষ কাজী শামীম ফরহাদ: আপনাকে ও জাগো নিউজ পরিবারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

এমএইচএম/আরএডি/জিকেএস