স্বাস্থ্য

‘মরে গেলেও বেঁচে যেতাম’

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন বিরল রোগে আক্রান্ত আবুল বাজনদার (২৫)। খুলনার পাইকগাছার দরিদ্র ভ্যানচালকের চার ছেলে চার মেয়ের মধ্যে ৬ষ্ঠ সন্তান আবুলের দু’হাতের তালুসহ দশটি আঙ্গুলেই অদ্ভুত ধরণের গাছের শিকড়ের মতো বড় বড় মাংসপিণ্ডের শ্বাসমূল গজিয়ে ওঠেছে। নিজ হাতে কিছুই খেতে পারেন না তিনি। নিজ হাতে তুলতে পারেন না কোনো জিনিসও। সামান্য হাটতেও ভীষণ কষ্ট লাগে তার। মায়ের সাহায্য নিয়ে নাওয়া-খাওয়াসহ সব কাজ করতে হয় তাকে।জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে শনিবার সকালে আলাপকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন আবুল বাজনদার।তিনি আরো বলেন, “দুইটা হাত মনে হয় লোহার মতো ভারি। উঠাতে গেলে খালি ব্যথা, যন্ত্রণা করে। পানি লাগলে স্যাতস্যাতে হয়ে যায়। এই কষ্টের জীবন আর ভালো লাগে না। মরে গেলেও বেঁচে যেতাম।”স্থানীয় সুনীল দাস নামে এক সাংবাদিক ও গাজি মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে আবুল বজানদার ও তার মা আমেনাকে ঢামেক বার্ন ইউনিটে পাঠিয়েছে। হাতে তাদের কানাকড়িও নেই।আমেনা বেগম জানান, ২০০৫ সালের আগেও আবুল বাজনদার ছিল চটপটে এক শিশু। সে তার বাবা মানিক বজানদারের সঙ্গে ভ্যান গাড়ি চালাত। ওই সময় টানা ২/৩দিন বৃষ্টি হয়। আবুল বৃষ্টিতে ভিজেছিল। কয়েকদিন পর তার হাতে আচিলের মতো গোটা হয়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে হাতটি গাছের আকার ধারণ করতে থাকে।তিনি আরো জানান, দশ বছর যাবৎ এ রোগে ভুগলেও টাকার অভাবে ছেলের ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি। অধিকাংশ সময় স্থানীয় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাইয়েছেন। তবে বছর পাঁচেক আগে তারা কলকাতায় গিয়ে ডাক্তার দেখালে কিছু ব্যথার ওষুধ লিখে দিয়ে মাদ্রাজ গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিল চিকিৎসক। কিন্তু টাকার অভাবে সেখানেও আর যাওয়া হয়নি।এদিকে আবুল বাজনদারকে দেখতে বার্ন ইউনিটে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার লোকজন জড়ো হলে লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখেন তিনি। এ সময় তাকে মন খারাপ করতে দেখে ডা. সামন্তলাল সেন অভয় দিয়ে বলেন, “দেখবে তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।”ডা. সেন জাগো নিউজকে বলেন, ছেলেটি নিজ হাতে কোনো কাজ করতে পারে না। তার মা খাইয়ে দেন। তাই তাদের প্রথম কাজ ছেলেটির হাতে দুটো আঙ্গুল সক্রিয় করে দেয়া। এ লক্ষ্যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।এমইউ/আরএস/এমএস

Advertisement