অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে লোডশেডিং আতঙ্ক

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর পর শেয়ারবাজারে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে ভয়াবহ দর পতনের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বনিম্ন দামে বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশ দেন। ফলে লেনদেন শুরু থেকেই বড় পতনের মধ্যে পড়েছে সূচক।

জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সাশ্রয়ে লক্ষ্যে সোমবার (১৮ জুলাই) সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করা বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার। সেইসঙ্গে সপ্তাহে একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, আমাদের ধারণা, এখন এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। এটা আমরা ফিডারভিত্তিক লোডশেডিং করে দেবো। এতে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা, কোথাও কোথাও দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং হতে পারে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

Advertisement

পরে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মসজিদ, মন্দির বা উপাসনালয়গুলোতেও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মসজিদে নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় যেন যত্রতত্র এসি ব্যবহার না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার থেকে দেশের সব এলাকায় এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হবে। এক সপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে এ ব্যবস্থা দেখার পর পরবর্তীতে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হতে পারে।

লোডশেডিং নিয়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আসার পর সোমবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৮৭ পয়েন্ট কমে যায়। ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে ২৭৫ প্রতিষ্ঠানের।

এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার শেয়ারবাজার খুলতেই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বনিম্ন দামে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশ দিতে থাকেন। ফলে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।

Advertisement

এমন ক্রেতা সংকট দেখা দেয়ায় লেনদেনের ১০ মিনিটের মধ্যে ডিএসই প্রধান মূল্যসূচক ৫০ পয়েন্টের ওপরে পড়ে যায়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১০টা ৩০ মিনিটে ডিএসইতে মাত্র ৩০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২৪টির। আর ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৭৬ পয়েন্ট। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৩৩ পয়েন্ট কমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১৯ পয়েন্ট কমেছে। এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫১ পয়েন্ট কমেছে। লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৪ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৩১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৯টির, কমেছে ১১৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬টির।

শেয়ারবাজারে এমন দরপতন দেখা দেওয়ার কারণ হিসেবে ডিএসইর একাধিক সদস্য বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেকে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়েছেন। আর বিক্রির চাপ বাড়ায় শেয়ারবাজারে বড় দরপতন দেখা দিয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সরকার বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দিয়েছে। এতে শিল্পের উৎপাদন কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে। রপ্তানি আয় কমতে পারে। এ কারণে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে বিক্রি চাপ বেড়েছে এবং দরপতন দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি বলবো যে খুব বেশি মাত্রায় শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কি না হওয়া উচিত। সেইসঙ্গে বিক্রির চাপ না বাড়িয়ে শেয়ার ধরে রাখা উচিত। কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখা উচিত পরিস্থিতি কি দাঁড়ায়।

এমএএস/এমএএইচ/জিকেএস