দেশজুড়ে

নওগাঁ টাউন হলের বেহাল দশা

নওগাঁ পৌরসভার একমাত্র টাউন হলটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অযত্ন-অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় আর মাদক সেবনের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে হলটি। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকলেও সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দ্বিতল ভবনটির দরজা-জানালা পর্যন্ত চুরি হয়ে গেছে। পুরনো ভবনটি ভেঙে নতুন করে টাউন হল বা কমিউনিটি সেন্টার তৈরির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।নওগাঁ পৌরসভা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ পৌরসভা পার-নওগাঁ ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৯৮৩ সালে টাউন হলটি স্থাপিত হয়। নির্মাণের পর থেকেই দ্বিতল এই ভবনটি জেলা পরিষদের আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছিল। ১৯৮৮ সালে নওগাঁ পৌরসভার কাছে এর পরিচালনার ভার ন্যস্ত করা হয়। ২০০৫ সালে গণপূর্ত অধিদফতর ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, টাউন হল ভবনটিতে কোনো দরজা-জানালা নেই এবং ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। পুরো ভবনের প্রায় সব কক্ষজুড়েই মল-মূত্র আর ময়লা-আবর্জনার গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। নিচ তলার একটি কক্ষের ভেতর থেকে গাঁজার গন্ধ বেরিয়ে আসছে। ভবনের বাইরের চারপাশের দেয়ালে শ্যাওলা ও বিভিন্ন গাছ জন্মেছে। প্রায় ২০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত এই ভবনটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। পলেস্তারা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে।টাউন হলের সামনে ফাঁকা জায়গায় বেবি-ট্রাক্সি, টেম্পু ও সিএনজি স্ট্যান্ড করেছে। সিএনজি ও বাস-ট্রাকের শ্রমিকরা সেখানে তাস খেলছেন। অবসর সময়ে এখানে আড্ডা দেন বলে তারা জানান।স্থানীয় বাসিন্দা তোফায়েল, সাইফুল, সামাদ, সোহেল, জুলফিকার, নান্নুসহ কয়েকজন জানান, মাত্র ৩৩ বছরে টাউন হলটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। টাউন হল তৈরির পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। এখানে আনিছ নামে একজন ডিউটি করতো। এখন আর তাকে দেখা যায় না। ভবনটি মাদক সেবনের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। ভবনটি ভেঙে নতুন করে কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করার দাবি জানান।গাঁজা সেবনকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, দীর্ঘদিন থেকে ভবনটি অবহেলায় পড়ে আছে। লোকজন না থাকায় ফাঁকা আছে এবং মোটামুটি নিরাপদ এজন্য গাঁজা টানছি। প্রায় এখানে কয়েকজন এসে গাঁজা টানা এবং মদ খাই বলে জানান।স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক এমএম রাসেল জানান, দীর্ঘদিন থেকে টাউন হলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নওগাঁয় কোনো কমিউনিটি সেন্টার না থাকায় ভবনটি ভেঙে নতুন করে একটি মিলনায়তন করলে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেত।নওগাঁ জেলা বেবি-ট্রাক্সি, টেম্পু ও সিএনজচালিত অটোরিকশার সভাপতি আসলাম শেখ জানান, পৌর মেয়রকে বলে অস্থায়ীভাবে গত দুই বছর থেকে বেবি-ট্রাক্সি, টেম্পু ও সিএনজি স্ট্যান্ড করা হয়েছে। পৌর মেয়র নিষেধ করলে রাখবো না বলে জানান তিনি।পৌরসভার প্রকৌশলী গুরুদাস দত্ত জানান, টাউন হলে একজন প্রহরী রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে প্রহরী থাকতে না পারায় এই সুযোগে লোকজন প্রতিষ্ঠানটির দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছে।নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নাজমুল হক সনি জানান, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর এর চেয়ার-টেবিল পৌরসভার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।টাউন হলটি ভেঙে নতুন করে কমিউনিটি সেন্টার করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টার করার জন্য (ইউজিআইআইপি-৩) প্রকল্প পেতে সরকারের কাছ আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্পটি পেতে আগামী ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।নওগাঁ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক রাজিউর রহমান জানান, পৌরসভার পরিত্যক্ত টাউন হলটিতে মাদকসেবনের বিষয়টি জানা ছিল না। শনিবার দুপুরে আমার লোকজন সেখানে গিয়ে তথ্য নিয়ে এসেছে। তবে যে কোনো মুহূর্তে সেখানে অপারেশন চালানো হবে বলে জানান।নওগাঁ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকিরুল ইসলাম জানান, পৌরসভার পরিত্যক্ত ওই ভবনে মাদক সেবনের বিষয়টি অবগত আছেন। তবে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান। আব্বাস আলী/এসএস/এমএস

Advertisement