জাতীয়

মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে সারাদেশে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

Advertisement

সোমবার (১৮ জুলাই) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমরা এক সপ্তাহ এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি দেখবো। এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না গেলে পরে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়নে পৌঁছে গেছি। দেশের প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, সেটা আমরা দাবি করতে পারি। এর পরবর্তী অবস্থায় বিশ্ব পরিস্থিতি অন্যরকম অবস্থায় চলে গেছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপকভাবে একটা স্বল্পতা, মূল্যবৃদ্ধি- এ বিষয়গুলো প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এটার মূল কারণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে ইউরোপে তীব্র জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি ইউরোপে প্রচণ্ড রকমের তাপদাহ শুরু হয়েছে, ফলে আরও এনার্জি প্রয়োজন তাদের।

Advertisement

তিনি বলেন, আমরা যে পরিমাণ এনার্জি আমদানি করতাম। স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে ২ হাজার ৩০০ এমএমসিএফ নিজস্ব গ্যাস ব্যবহার করতাম। ২০১৮-১৯ পর্যন্ত ২ হাজার ৭০০ এমএমসিএফ গ্যাস সেটা কমে এখন ২ হাজার ৩০০ হয়েছে। কিছু কিছু ড্রিলিং করার কারণে খনি থেকে কিছু গ্যাস পাচ্ছি। আমাদের প্রায় সাড়ে ৮০০ এমএসসিএফ গ্যাস আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে ৫০০ এমএসসিএফ দীর্ঘ চুক্তির মাধ্যমে আমদানি করি। যেটার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে। মানে হলো তেলের দাম বাড়লে গ্যাসের দাম বাড়বে। কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি করা আছে। বাকি প্রায় ৪০০-এর মতো আমরা স্পট মার্কেট থেকে নিতাম। স্পট মার্কেট গত বছরের থেকেও কম পয়সায় ছিল। যার কারণে আমরা এই তিন জায়গা থেকে নিয়ে ব্যালেন্স করতাম। তারপর মূল্য নির্ধারণ করা হতো।

‘সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। যখন স্পট মার্কেটে কম দাম ছিল তখনো সরকার ভর্তুকি দিতো, এখনো দিচ্ছে। তবে ভর্তুকির পরিমাণে অনেক ব্যবধান হয়ে গেছে। এখন স্পট মার্কেটে গ্যাস ৩৬ থেকে ৪০ ডলারে ওঠানামা করছে। যার কারণে স্পট মার্কট থেকে গ্যাস গত মাসের আগের মাস পর্যন্ত নেওয়া ছিল। এরপর আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর আমরা স্পট মার্কেট থেকে এই দামে গ্যাস নেবো না। এই দামে গ্যাস নিলে পরে সরকারকে যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে সেটা অসম্ভব একটা ফিগার চলে আসে। যে কারণে আমরা মনে করছি গ্যাসবেইজড যে পাওয়ার প্লান্ট ছিল সেখানে আমরা রেশনিং করবো।’

তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলের পাওয়ারপ্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট ডিজেল পাওয়ারপ্ল্যান্ট আছে, সেটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছি। এতে আমাদের বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। সে ঘাটতির পরিমাণ হয়তো এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট হবে।

তিনি বলেন, মূলত প্রথমদিকে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে এক ঘণ্টা করে এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং দেওয়া হবে। সব জায়গায় এক সঙ্গে হবে না, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো দিনের বেলায় বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য। পিক আওয়ারে গিয়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়ার চেষ্টা করবো। তবে আমরা এক সপ্তাহ এই পরিস্থিতি দেখবো।

Advertisement

তিনি বলেন, বিট ভিত্তিক, জোন ভিত্তিক, এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং দেওয়ার চেষ্টা করবো। এটা আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এতে যদি দেখি এক ঘণ্টা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত হয় তাহলে যেভাবে চলছে সেভাবে রাখবো। আর যদি দেখি এক ঘণ্টা পর্যাপ্ত নয়, তাহলে আমরা আরও এক ঘণ্টা মানে দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে যাবো। আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্ন খাত থেকে বিদ্যুৎ কীভাবে আরও সাশ্রয় করা যায়।

শুধু বাংলাদেশ নয়, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নানাভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতি ইউরোপসহ এশিয়ার অনেক দেশের। আমাদের একটা ক্রাইসিস সময় যাচ্ছে। এজন্য সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি, নিজেরা সাশ্রয়ী হই।

নসরুল হামিদ বলেন, যানবাহন যদি কম ব্যবহার করি, তাহলে তেল ব্যবহার কিছুটা কমবে। ফরেন কারেন্সির ওপর কিছুটা প্রেসার কম পড়বে। আমরা ট্রান্সপোর্ট কম ব্যবহার করবো, সরকারি যেসব মিটিং বা যেসব বৈঠক অন্য অফিসে হয়, সেগুলো যদি অনলাইন করি, এতে যানবাহন কম ব্যবহার হবে। জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে।

আমদানি করা ডিজেলের ১০ শতাংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে জানিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমদানির ১০ শতাংশ বিদ্যুতে ও ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয় ট্রান্সপোর্টসহ অন্যান্য খাতে। আমি ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতের ডিজেল বন্ধ করে সাশ্রয় করলাম। আর অন্যান্য খাত থেকে যদি ১০ শতাংশ সাশ্রয় করতে পারি। তাহলে ২০ শতাংশ ডিজেল সাশ্রয় করে যে পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করতে পারবো সেটা বড় একটা বিষয় হবে। সুতরাং আমি মনে করি আপনারা সবাই আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট পজিটিভ থাকবেন। এটা খুবই সাময়িক একটা ব্যাপার। দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিষয় বলে আমি মনে করি না।

পেট্রোল পাম্প বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) পেট্রোল পাম্প মালিকদের সঙ্গে বসবে। সেখানে সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা যায় কিনা সেটা চিন্তা ভাবনা করবো পরবর্তী অবস্থায়।

নামাজের সময় ছাড়া মসজিদে এসি ব্যবহার না করারও অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত করে মঙ্গলবার থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ে যাচ্ছে দেশ। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

আরএমএম/ইএ/এএসএম