লিচু থেকে কিছুটা ছোট, তুলনামূলক শক্ত বাদামি খোসা। কিন্তু ভেতরটা লিচুর মতোই, স্বাদও একই। এই ফলের নাম লংগান। আঁশফল বা কাঠলিচুর উন্নত জাত এটি।
Advertisement
চীন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় এ ফল চাষ হচ্ছে। সেখানে ফলটি লিচুর বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। খোসা ছাড়ালে চোখের মতো দেখতে বলে ওইসব এলাকায় লংগানকে বলা হয় ‘ড্রাগনস আই’। ফলটি এখন বাংলাদেশে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গোপালগঞ্জ কাশিয়ানি হর্টিকালচার সেন্টারে এটির চাষাবাদ দেখা গেল। সেখানে ১০টি গাছের মধ্যে কমপক্ষে সাতটি গাছে থরে থরে ধরা এই ফলের দেখা মেলে। বাকি গাছগুলোতে ফুল এসেছে। অর্থাৎ সেগুলো কিছুটা নাবি। বাজারে লিচু শেষ হওয়ার এক মাস পর অর্থাৎ জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এসব লংগান পাকতে শুরু করবে। এই সময়ে লিচুর বিকল্প হিসেবে লংগান জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা উদ্যানতত্ত্ববিদদের।
লিচু শেষ হওয়ার এক মাস পর এই ফল পাকে- ছবি জাগো নিউজ
Advertisement
ওই সেন্টারের উপ-সহকারী উদ্যান অফিসার রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় থাইল্যান্ড থেকে এই লংগান গাছের চারা নিয়ে আসা হয়েছে। চারা রোপণের দুই বছর পরই ফল ধরতে শুরু করে।
তিনি বলেন, এটাতে রোগব্যাধির আক্রমণ হয় না। প্রচুর ফল ধরে। বাজারমূল্যও অনেক। বিদেশ থেকে এনে ঢাকার বিভিন্ন সুপারশপ ও বড় ফলের দোকানে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সে কারণে এ ফলের বাণিজ্যিক চাষাবাদের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
রফিকুল ইসলাম বলেন, লংগান চাষের জন্য খুব বেশি পরিচর্চার প্রয়োজন হয় না। চারা লাগিয়ে রাখলেই হয়ে যায়। সারও বেশি লাগে না। এটি খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। এটা খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ক্যানসার প্রতিরোধী। অন্যান্য ফলের চেয়ে ভিটামিন সি’র পরিমাণও বেশি।
লংগান চাষের জন্য খুব বেশি পরিচর্চার প্রয়োজন হয় না-ছবি জাগো নিউজ
Advertisement
ফলটির উৎপত্তি চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারতের কিছু অঞ্চলে। কাশিয়ানির বাগানের গাছটিতে দুই বছর ধরে থাই জাতের লংগান ধরছে। লিচু পরিবারের সদস্য এ গাছ লাগানোর তিন বছরের মধ্যেই ফল ধরতে শুরু করে। প্রতিটি ডালের মাথায় থোকায় থোকায় ধরে লংগান। আকারে ছোট হওয়ার কারণে এ ফল ছাদবাগানের উপযোগী।
ওই সেন্টারের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মেহেদী মাসুদ বলেন, লিচু ফুরিয়ে যাওয়ার পর লংগান পাওয়া যাবে। এর সংরক্ষণ ক্ষমতা লিচুর চেয়েও বেশি। যে কারণে এটি বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য।
তিনি বলেন, সারাদেশের হর্টিকালচার সেন্টারগুলোতে এর মাতৃগাছ লাগানো হয়েছে। তিন-চার বছরের মধ্যে চারা আগ্রহী ফলচাষিদের দেওয়া সম্ভব হবে। লাইফসেল বেশি হওয়ায় এটি সম্ভাবনাময় রপ্তানিযোগ্য ফল।
লংগান হার্ভেস্টে ১২ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে রাখা যায়, নষ্ট হয় না। একটি মধ্যবয়সী লংগান গাছে ৭০-১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ মধ্যবয়সী একটি গাছ থেকে লাখ টাকার লংগান পাওয়া সম্ভব।
লংগান লিচু পরিবারের সদস্য-ছবি জাগো নিউজ
দেশের বিভিন্ন এলাকার হর্টিকালচার সেন্টারে লাগানো লংগান ফল থেকে চারা উৎপাদন হচ্ছে, সেখান থেকে গ্রাফটিং করে কলমের মাধ্যমে সরকারি উদ্যানে সম্প্রসারণ হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে এটি সবার মধ্যে বাণিজ্যিকীকরণের জন্য দেওয়া হবে। শুধু কাশিয়ানি হর্টিকালচারের ১০টি গাছ থেকে এ বছরই ১০ হাজার লংগান গাছের কলম/চারা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন উদ্যানতত্ত্ববিদরা।
মেহেদী মাসুদ বলেন, লিচু এবং লংগান একই পরিবারের। রাম্বুটানও এ ফ্যামিলির। আমরা রাম্বুটান ও লংগান গাছের চারা ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করেছি। জুনে লিচু যখন বাজার থেকে শেষ হয়ে যাবে তখন মানুষ লংগান খেতে পারবে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটা থাকবে। এরপর রাম্বুটান পাকতে শুরু করবে। এটা অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া যাবে। লিচুজাতীয় ফলের হার্ভেস্ট টাইম সম্প্রসারণ করা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
মেহেদী মাসুদ আরও জানান, এই চারা থাইল্যান্ড থেকে আনতে প্রতিটার দাম পড়েছে আড়াই হাজার টাকা। এটার গুটি কলম খুব ভালো হয়। একেকটা গাছে ৫০০-৭০০ গুটি কলম হচ্ছে। আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে প্রতি বছর পাঁচ-ছয় হাজার করে কলম তৈরি করা সম্ভব হবে। এনএইচ/এসএইচএস/জিকেএস