মতামত

লবণের দাম কমান

আমাদের দেশে দ্রব্যমুল্যের পাগলা ঘোড়া সব সময় দাপিয়ে বেড়ায়। কখন যে কোন পণ্যের ওপর নজর পড়ে সেটা বলা মুশকিল। তবে মওকা বুঝেই যে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয় সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কখন কোন পণ্যের দাম বাড়ালে অধিক মুনাফা পাওয়া যাবে সেটি নিয়ে যেন রীতিমত গবেষণা করা হয়। আর তার গিনিপিগ হয় সাধারণ মানুষ। লবণের কথাই ধরা যাক। দেশে এমন কি সংকট হয়েছে যে হঠাৎ করে প্রতিকেজি লবণ ২ থেকে ৭ টাকা বাড়বে। কিন্তু হয়েছে তাই। এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজি প্রতি লবণের দাম ২ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে খোলা লবণ প্রতি কেজি ২০ থেকে ২২ টাকা এবং প্যাকেটজাত লবণ কোম্পানি ভেদে ২৫ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এগুলো দেখার কেউ নেই। যে যেমন পারছে ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনতিবিলম্বে এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। সবকিছুতেই লবণ লাগে। তাই লবণের দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে সর্বত্র। লবণের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। দাম বাড়ার জন্য সরবরাহে ঘাটতি এবং আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি আমদানির বিষয়ে সরকার নমনীয় না হলে দাম আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে দেশে বছরে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন লবণের চাহিদা রয়েছে। আর গত বছর দেশে উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে এক বৈঠকে সাড়ে ৩ লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় লবণ কমিটি। সাধারণত আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয় দেশিয় শিল্প-পণ্য রক্ষার জন্য। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু এতে উৎপাদনকারী কৃষক খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না-এমন অভিযোগও আছে। লবণ আমদানি নিয়ন্ত্রণে চাষী, মিল মালিক বা সাধারণ মানুষের চেয়ে উপকূলীয় এলাকার  প্রভাবশালীরাই লাভবান হচ্ছে। এ জন্য তো সবার আগে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমদানি করার শর্টকাট রাস্তায় তো কোনো স্থায়ী কোনো সমাধান নেই। এক্ষেত্রেও তো লাভটা ব্যবসায়ীদের পকেটেই যায়। ক্রেতারা তো কিছু পায় না।  আসছে মার্চ থেকে মে মাস লবণ উৎপাদনের মৌসুম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ওই সময়ে লবণের দাম কমে আসবে- এমনটি বলা হচ্ছে। আর এই সময়েই মধ্যেই টুপাইস কামিয়ে নিতে চাইছে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট। এ ধরনের প্রবণতা বন্ধে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। দেশীয় লবণ দিয়েই যেন চাহিদা পূরণ হয় এজন্য উৎপাদন বাড়াতে যা যা করণীয় আছে সেটি করতে হবে। প্রয়োজনে চাষীদের সহজশর্তে ঋণ দিতে হবে। আর চাষীরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। সবার আগে লবণের দাম কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।এইচআর/এমএস

Advertisement