ইশরাক এসেছিল আমাদের সেন্টারে আমার সাথে Shadowing করার জন্য। অনেক হাইস্কুল বা কলেজের ছাত্রছাত্রীরা Volunteering বা Shadowing করে। তারা এই পেশাটাকে ভালোভাবে জানতে চায় এবং এই পেশার প্রতি তাদের আগ্রহ প্রকাশ করতে চায়।
Advertisement
ইশরাক কিন্তু ব্যতিক্রম। ও মেডিসিনে আগ্রহী নয়। ওর সব আগ্রহ কম্পিউটার কোডিংয়ে। ও জানতে চায় বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কোডিংয়ের কD ভূমিকা থাকতে পারে। আমি তো পুরোই থতমত খেয়ে গেলাম। বলে কী ছেলে। ও তখন আমাকে কোডিং এবং সব কিছুতে তার ভূমিকা সম্পর্কে বোঝালো। আমি অবাক হয়ে গেলাম!
যে কোনো প্রোগ্রাম, গেম বা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে দরকার হয় কোডিংয়ের।টেকনোলজি, কম্পিউটিং সব চলে কোডিংয়ের ওপর। ইশরাক একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেছে, যা কোডিং করার সময় autocorrect এর মতো সব কিছু সঠিক করে দেয়। খানিকটা Google autocorrect বা Apple autocorrect বা Grammarly র মতো, যা বানান বা গ্রামার নিজে নিজেই ঠিক করে দেয়।
এ ধরনের coding autocorrect software আগে কেউ তৈরি করনি। ইশরাক ছোটবেলা থেকে এটা চিন্তা করেছে। সে তার আইডিয়া এবং কাজ Harvard এবং MIT র অধ্যাপকদের সাথে শেয়ার করেছে। তারাও এটিকে একটি অনন্য উদ্ভাবনা বলে স্বীকার করেছেন।
Advertisement
ইশরাকের বাবা-মা এদেশে এসেছিলেন ডিভি লটারির ভিসা পেয়ে। স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় আসাটা লটারি জেতা হলেও ইশরাক তার ভবিষ্যৎ তৈরি করেছে নিজের মেধা আর উদ্যমে। ইশরাকের বাবা-মা সব সময়ই তার প্রতি রেখেছে অগাধ বিশ্বাস এবং তাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছেন।
হাইস্কুলে উঠেই ইশরাক তার উদ্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একজন উদ্যোক্তা হয়ে গেলো। ওর প্রতিষ্ঠানের নাম হলো Kodezi । coding করাকে easy করার জন্য Kodezi।
প্রথমে একটি গ্র্যান্ট পেয়ে সে জোরেসোরে কাজ শুরু করলো। তারপর সে চেষ্টা করলো কীভাবে উদ্যোক্তাদের আকর্ষণ করা যায়। সে পুরো আমেরিকা ও কানাডার বিভিন্ন উদ্ভাবক এবং উদ্যাক্তাদের সমাবেশে গিয়ে তার প্রতিষ্ঠান এবং উদ্ভাবনাকে দেখিয়েছে।
ইশরাক গত কয়েক মাসে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তার উদ্যোগের জন্য প্রায় মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। ইশরাক এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। ওর লক্ষ অভূতপূর্ব সাফল্য।
Advertisement
ইশরাক হাইস্কুল শেষ করে কলেজে যাচ্ছে একইসঙ্গে সফল উদ্যোক্তা হয়ে তার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যাবে পৃথিবীর সেরা একটি স্থানে। সান ফ্রান্সিসকো ইসরাকের পরবর্তী গন্তব্য।
গতকাল ইশরাকের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ওর নিজের ভাষায় তার গল্প শুনছিলাম। ওর অদম্য প্রচেষ্টা, ওর অসাধারণ মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তির গল্প, ওর অধ্যাবসায়ের গল্প।
ইশরাক গত কয়েক মাসে চারশতাধিক বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করে কেমন করে দুজনের ক্ষেত্রে সফল হয়েছে সে গল্প বলছিল।
ইশরাকের ভাষণজুড়ে ছিল তার সারল্য, অদম্য স্পৃহা, মেধার বিচ্ছুরণ ও আমেরিকার সফল স্বপ্নের গল্প।
একজন বাংলাদেশি অধিবাসী পরিবারে বড় হয়ে ওঠা ইশরাক বাংলাদেশের গর্ব এবং আমেরিকার সাফল্যের আরেকটি উদাহরণ।
এ দেশ হলো মেধাবী মানুষদের বড় হওয়ার দেশ, এ দেশ হলো স্বপ্ন ধারণ করে লক্ষে পৌঁছে যাওয়ার দেশ। ইশরাক আগিয়ে যাক। ওকে দেখে আরও অনেকে উজ্জীবিত হোক।
এইচআর/এমকেআর