বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, অনেক মানুষই জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। কেউ কেউ হয়তো বা জটিলতায় পড়ছেন। তবে সে সংখ্যা খুবই কম।
Advertisement
বর্তমানে জ্বরের ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটা ভাইরাসজনিত কারণেই হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত এ সময়ে এমন হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে, একই সাথে খেয়াল রাখতে হবে এটা কোভিড বা ডেঙ্গুজ্বর কি না। যদিও আমরা এখন কোভিড পরীক্ষা করাতে তেমন উৎসাহী না। ফলে এটার বর্তমান অবস্থা কিছুটা ধোঁয়াশাই বৈকি। অন্যদিকে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। ফলে জ্বর হলেই সাবধান হতে হবে। সেই সাথে যাতে জ্বর না হয় সে ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে।
২০২০ সালের মার্চ থেকে এ অবধি কোভিড নিয়ে বহু কথা বলা হয়েছে। আশা করি কোভিড সম্পর্কে সবাই এখন কম বেশি ওয়াকিবহাল। বিশ্বের সফলতম দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম যেখানে অধিকাংশ মানুষ কোভিড ভ্যাকসিন পেয়েছেন। অনেকে বুস্টারও নিয়েছেন। ফলে কোভিডের আগ্রাসী ভাব অনেকটাই কমে এসেছে। তাতে যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, মানুষের মধ্যে একটা গাছাড়া ভাব চলে এসেছে। ফলে অনেকেই আর স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
মাস্ক পরা বাদ দিয়েছেন। হাত স্যানিটাইজ করা তো পরের কথা। এর ফলে কোভিড কিন্তু ছড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। ফলে আপনি যখন বাইরে বের হচ্ছেন, মানুষের সাথে মিশছেন তখন দয়া করে মাস্ক পরুন। সবাই যদি আমরা সচেতন থাকি তাহলে কিন্তু কোভিডের প্রকোপ কমবেই। ফলে জীবনযাত্রা সহজ, স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকবে। না হলে হয়তো নানাবিধ বিধিনিষেধের যাঁতাকলে আবারও পড়া লাগতে পারে।
Advertisement
এটা গেল কোভিড নিয়ে সতর্কতার পুনরাবৃত্তি। এবার আসুন ডেঙ্গু নিয়ে একটু সতর্ক হই। আমরা জানি, ডেঙ্গু মশার কামড়ের ফলে হয়। এটাও ভাইরাসজনিত জ্বরই। এখন ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। বৃষ্টি হলেই প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সাধারণ ডেঙ্গুতে ভয়ের কোনো ব্যাপার নেই। তবে, ডেঙ্গু যদি রক্তক্ষরণজনিত হয় বা শকের অবস্থা তৈরি করে তাহলে তাতে মৃত্যুও হতে পারে। ফলে এখানেও প্রয়োজন সতর্কতা।
এজন্য বাসাবাড়ি মশামুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। ঘরের ভেতরে যেন কোথাও পানি জমে না থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্যই ঘুমানোর আগে সেটা দিনে বা রাতে যখনই হোক না কেন দয়া করে মশারি টানাতে ভুলবেন না। মশারি টানানো নিয়ে কোনো হেলাফেলা কাম্য নয়। মশারি বাদে যত ধরনের মশা তাড়ানোর ওষুধ, স্প্রেই ব্যবহার করেন না কেন তাতে মশা পরিপূর্ণ নির্মূল হয় না। ফলে মশারি টাঙাতেই হবে।
আর জ্বর-তা যাই হোক না কেন-প্রথম কথাই হচ্ছে, বাসায় থাকুন। রেস্ট নিন। এমনিতেই প্রচণ্ড গরম। শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। জ্বর সেটাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে ঘরে থাকুন। পানি এবং তরল খাবার খান বেশি করে। জ্বর কমানোর জন্য হাল্কা কুসুম গরম পানিতে গা মুছে নিন। ঠান্ডা পানি দিয়ে গা মুছবেন না। প্যারাসিটামল ৬ ঘণ্টা বা ৮ ঘণ্টা পরপর খেতে পারেন। তবে জ্বর হলেই এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করবেন না। কারণ ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিক কোনোই কাজ করে না। এতে উল্টো অবস্থা খারাপও হতে পারে।
ভাইরাস জ্বরের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, ৩-৪ দিন খুব তাপমাত্রা থাকলেও তারপর থেকে ধীরে ধীরে কমে যায়। সাতদিনের মধ্যে একদম সেরে যায়। এ সময়ে প্রয়োজন হচ্ছে- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পানি পান এবং রেস্ট। তবে, যদি খুব বমি হয়, রোগী খেতে না পারেন , চামড়ার নিচে রক্ত জমে, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে বা অজ্ঞান হয়ে যান তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে। দয়া করে নিজে নিজে চিকিৎসা করাবেন না। ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়াবেন না। তাতে অহেতুক সময় নষ্ট হবে। রোগী খারাপ হয়ে যতে পারে।
Advertisement
আসুন আতঙ্ক বা উদাসীনতা নয় বরং সচেতন থাকি। তাহলেই আমরা কোভিড বা ডেঙ্গু যাই হোক না কেন তা থেকে নিজে যেমন মুক্ত থাকতে পারব তেমনিভাবে পরিবারের অন্যদের মুক্ত রাখতে পারব। আপনার, আমার সচেতনতাই পারে কোভিড কিংবা ডেঙ্গু রুখে দিতে। আসুন সে লক্ষ্যে সবাই সচেষ্ট হই।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগএনাম মেডিকেল কলেজ, সাভার।
এইচআর/এএসএম/ফারুক