আন্তর্জাতিক

দিল্লির সাংবাদিকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার’

সারাদিন কাজ। সন্ধ্যা নামলেই আড্ডা জমে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায়। লন, রুম সব গম গম করে সাংবাদিকদের আনাগোনায়। ভারতের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় এ প্রেস ক্লাবটি রাইসিনা রোডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে অবস্থিত। দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাঁয়ের ছোট একটি কর্নার নিয়ে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার। উদ্বোধনের ১০ মাসের মধ্যেই এটি সাংবাদিকদের কাছে হয়ে উঠেছে ব্যাপক জনপ্রিয়।

Advertisement

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কর্নারে যেতে সিঁড়ির দেয়ালে বড় করে টাঙানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি পূর্ণাঙ্গ আলোকচিত্র। যেন সাংবাদিকদের স্বাগত জানাচ্ছেন তিনি। বাঁয়ে গিয়ে ভেতরে ঢুকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এল প্যাটার্নের একটি কক্ষ। বাঁ পাশে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ইন্দিরা গান্ধী, ভি ভি গিরি, ফিদেল ক্যাস্ট্রো প্রমুখের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বেশ কয়েকটি আলোকচিত্র টাঙানো। ডানে লম্বা টেবিল, যাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব নিয়ে নিয়ে বসেছে আটটি কম্পিউটার। উপরে তাক করে সাজানো বই, যেটাকে বলা হচ্ছে লাইব্রেরি। দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের তরফ থেকে দেওয়া একটি প্রজেক্টরও রয়েছে।

সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌতম লাহিড়ী জাগো নিউজকে বলেন, আমরাই প্রথম দিল্লির জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর নামে কিছু করার উদ্যোগ নিই। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। তার প্রতি সম্মান জানাতে আমরা ঠিক করেছিলাম যে, জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার একটি স্মারক থাকবে। আমরা সেটা করেছি। বাংলাদেশ হাইকমিশন আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে।

‘ভারতের এ জাতীয় প্রেস ক্লাবের কর্ম সমিতির ২১ জন সদস্যই একবাক্যে বঙ্গবন্ধুর নামে মিডিয়া সেন্টার করার প্রস্তাবনাকে সমর্থন করেন। বঙ্গবন্ধুর একমাত্র পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি এ প্রেস ক্লাবেই স্থাপিত হয়েছে। সমগ্র ভারতবর্ষে তার পূর্ণাঙ্গ অবয়ব এভাবে আর কোথাও নেই।’

Advertisement

তিনি বলেন, অন্য অনেক জায়গায় বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরি হয়েছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিডিয়া সেন্টার আর কোথাও নেই। সঙ্গে একটি অডিটোরিয়ামও রয়েছে, সেখানে প্রজেকশনের ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন আমাদের একটি প্রজেক্টর দিয়েছে, সেখানে আমরা বিভিন্ন প্রোগ্রাম, তথ্যচিত্র কিংবা সিনেমাও দেখাতে পারি।

‘ভারতের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ মিডিয়া সেন্টার অল্প কয়েক দিনের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি, এ মিডিয়া সেন্টারের উপর ভবিষ্যতে এত চাপ পড়বে যে আমাদের হয়তো আরও কলেবর বাড়াতে হবে।

মিডিয়া সেন্টারটি ঘুরিয়ে দেখান প্রেস ক্লাবের সদস্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক মহুয়া চ্যাটার্জি।

এ সময় তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার স্থাপনের ফলে আমাদের জন্য অসম্ভব সুন্দর ও উপযুক্ত একটি কাজের জায়গা তৈরি হয়েছে। করোনার সময়, বিশেষ করে যখন অনেক অফিস বন্ধ ছিল তখন আমরা নিয়মিত এখানে এসে কাজ করেছি। তবে এখানে আটটি কম্পিউটার রয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, আঠারোটি কম্পিউটার হলে আমাদের জন্য ভালো হতো।’

Advertisement

টাইমস অব ইন্ডিয়ার পলিটিক্যাল ডেস্কের দায়িত্বে থাকা মহুয়া বলেন, এটা একটি হেরিটেজ বিল্ডিং। আমরা একটি নতুন কর্নার বের করে এ মিডিয়া সেন্টার তৈরি করেছি। এখানে আমরা নতুন করে কিছু করতে পারি না, নতুন করে কিছু নির্মাণ করতে পারি না। আগের বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচার ঠিক রেখেই এখানে কাজ করতে হয়।

এ মিডিয়া সেন্টার প্রতিষ্ঠার গোঁড়ার কথা টেনে তিনি বলেন, আমরা ছোট এ কর্নারে একটি লাইব্রেরি তৈরি করতে চেয়েছিলাম। এর মধ্যেই করোনা এলো। পরে আমরা একই জায়গায় লাইব্রেরির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু মিডিয়া সেন্টার করলাম। প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে এটা বাস্তবায়ন করা হয়। মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এর আগে প্রেস ক্লাবে মিডিয়া সেন্টার ছিল কী না প্রশ্নে তিনি বলেন, এর আগেও প্রেস ক্লাবের নিচ তলায় ছোট একটি মিডিয়া সেন্টার ছিল। বলা যায় যে, এটি হচ্ছে সেই মিডিয়া সেন্টারের উন্নত ভার্সন যেখানে সবকিছুই আছে।

মহুয়া চ্যাটার্জি আরও বলেন, যেহেতু এখানে কাজের পরিবেশ তৈরি হয়েছে সেহেতু এর চাহিদাও বাড়ছে। আমরা ভেবে পাচ্ছি না যে, কীভাবে এটার কলেবর আরও একটু বাড়ানো যায়। সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে এ প্রেস ক্লাব চালু হয় ১৯৫৭ সালে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু ভবনটি প্রেস ক্লাবের জন্য দান করেন। এখানে বাহ্যিক অবকাঠামো ভেঙে নতুন স্থাপনা করার অনুমতি নেই। ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঐতিহ্যবাহী এ প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কর্নার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

এএসএ/এসএএইচ/জেআইএম