আন্তর্জাতিক

জাপানকে আরও বহু বছর অর্থনৈতিক দিশা দেখাবে আবের নীতি

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে সরকারপ্রধানের মেয়াদ হিসেবে আট বছর খুব বেশি নয়। তবে জাপানের জন্য সেটাই বাস্তব। আর সেই অল্প সময়ের মধ্যে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশটির অর্থনীতির যে গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে গেছেন, তার প্রভাব দেখা যাবে আগামী বছরগুলোতেও।

Advertisement

গত ১০ জুলাইয়ের নির্বাচনে জাপানের আইনসভার উচ্চকক্ষে বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। সমতা ও পুনর্বণ্টনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। কিশিদার ‘নব্য পুঁজিবাদ’কে আবের অর্থনৈতিক নীতি বা আবেনমিকসের বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো, পূর্বসূরীর রেখে যাওয়া ভিত্তির ওপরই বাস্তবায়িত হবে তার এই পরিকল্পনা।

২০১২ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর শিনজো আবে যে অর্থনৈতিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, সেটিকেই আবেনমিকস বলা হয়। জাপানের অর্থনৈতিক স্থবিরতা দূর করার জন্য আবেনমিকসের তথাকথিত তিনটি ‘তীর’ ছিল: নমনীয় রাজস্ব নীতি, আর্থিক সম্প্রসারণ এবং কাঠামোগত সংস্কার।

এই নীতির ইতিবাচক ফলাফলগুলো আবের পক্ষেই কথা বলবে, বিশেষ করে জাপান ইনকর্পোরেটেডের আর্থিক অ্যাকাউন্টগুলো। করপোরেট গভর্নেন্সের সংস্কারগুলো আরও শেয়ারহোল্ডারবান্ধব কার্যকলাপকে উৎসাহিত করেছে এবং ক্রস-শেয়ারহোল্ডিংয়ের মরিবন্ড নেটওয়ার্কগুলো কমাতে সংস্থাগুলোকে প্রণোদিত করেছে। এসব পরিবর্তন জাপানের করপোরেট আয়কে রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত করেছে।

Advertisement

এসময় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়ায় জাপানে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। ২০২০ সালে দেশটিতে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ, যা তাদের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

আবেনমকিসে জাপানের শ্রমবাজারেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। শিনজো আবের আমলে দেশটিতে নারী কর্মসংস্থানের হার দ্রুত বেড়েছে। জাপানে কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কর্মসংস্থানের হার এখন ৭২ শতাংশ, যা আবে-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ পয়েন্ট এবং আমেরিকার তুলনায় ছয় শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

ফুমিও কিশিদার সহযোগীরা এখন আবেনমিকসকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে খুব কমই কথা বলেন। এর বদলে আবেনমিকসের উত্তরাধিকার গড়ে তোলার বিষয়েই তাদের আগ্রহ বেশি। গত মে মাসে যখন কিশিদার নিউ ক্যাপিটালিজম কাউন্সিল তাদের মহাপরিকল্পনার নথি প্রকাশ করে, তখন এর উপসংহার ছিল, এটি আবেনমিকসের ‘তিন তীরের কাঠামো’ মেনে চলবে।

তবে এখন যেহেতু শিনজো আবে আর এই দুনিয়ায় নেই, কিশিদা কি তার পূর্বসূরীর নীতি থেকে দূরে সরতে কিছুটা হলেও স্বাধীনতা বোধ করবেন? বিভিন্ন বৈশ্বিক পরিস্থিতি হয়তো তাকে এ ধরনের পরিবর্তনে উৎসাহিত করতে পারে। তবে যদি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় তাহলে তিনি আবেনমিকসের সাফল্য আরও বাড়িয়ে তুলতে পারেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই অপরিহার্য অস্ত্র হবে শিনজো আবের ‘তিন তীর’।

Advertisement

কেএএ/এমএস