কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার একটি শহর। কুয়াকাটা পটুয়াখালী সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। সমুদ্রসৈকত থাকায় কক্সবাজারের মতোই কুয়াকাটাও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
Advertisement
পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা ‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। এটিই বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।
কুয়াকাটা নামের পেছনে আছে এক রহস্য। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এদেশে আরাকানদের আগমনের ইতিহাস। কুয়া শব্দটি এসেছে কূপ থেকে। ১৮ শতকের দিকে সুপেয় পানির অভাব পূরণে প্রচুর কুয়া খনন করা হয় সেখানে। এরপর থেকেই স্থানটির নাম হয় কুয়াকাটা।
সম্প্রতি পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ঈদের লম্বা ছুটিতে এখন পা ফেলার জায়গা নেই সৈকতে। অতীতের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি পর্যটক এবার সাগরকন্যা ভ্রমণে গিয়েছেন।
Advertisement
আপনিও যদি কুয়াকাটা ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন তাহলে অবশ্যই সমুদ্রসৈকত দেখার পাশাপাশি ঘুরে আসুন আরও ৮ স্পট থেকে।
১. শুঁটকি পল্লী: কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পশ্চিমে জেলে পল্লীর অবস্থান। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুঁটকি তৈরির মৌসুম চলে সেখানে। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে সৈকতের পাশেই শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। সেখান থেকে কম দামে কিনে নিতে পারেন পছন্দের মাছের শুঁটকি।
২. ক্রাব আইল্যান্ড: কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পূর্বদিকে গেলে দেখবেন ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ। সেখানে নির্জন সৈকতে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার দল। এই দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
৩. ফাতরার বন: সেখানে আরও দেখতে পাবেন ফাতরার বন। এজন্য আপনাকে যেতে হবে সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম দিকে। এ বনে গেলে সুন্দরবনের প্রায় সব বৈশিষ্টই চোখে পড়বে।
Advertisement
এখানে বন মোরগ, বানর, বুনো শুকর ও নানান পাখি পাওয়া যায়। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হলে আপনাকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হবে।
৪. গঙ্গামতির জঙ্গল: সমুদ্রসৈকতের পূর্ব দিকে গঙ্গামতির খাল পর্যন্ত গিয়েই কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত শেষ হয়েছে। গঙ্গামতির জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, পাখি, বন মোরগ-মুরগি, বানর ইত্যাদির দেখা পাবেন।
৫. কুয়াকাটার কুয়া: কুয়াকাটা যাবেন আর কূপ দেখবেন না তা কী হয়! কুয়াকাটা নামকরণের পেছনে থাকা ঐতিহাসিক কুয়াটি আজও আছে। সেটি দেখতে যেতে হবে রাখাইনদের বাসস্থল কেরাণিপাড়ায়।
৬. সীমা বৌদ্ধ মন্দির: কেরাণিপাড়ায় প্রাচীন কুয়া দেখার পর একটু সামনে এগিয়ে গেলেই দেখবেন সীমা বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরে আছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতুর তৈরি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি।
>> কেরানিপাড়া: সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের রাস্তা ধরে আরও একটু এগিয়ে গেলেই রাখাইনদের আবাসস্থল কেরানিপাড়ায় ঢুকে পড়বেন। রাখাইন নারীরা কাপড় বুণনে বেশ দক্ষ। চাইলে তাদের জীবনযাপন দেখতে পারবেন সেখানে।
>> মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির: কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে রাখাইনদের আরও এক গ্রাম মিশ্রিপাড়ায় বড় আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির আছে। জানা যায়, এ মন্দিরের ভেতরেই নাকি আছে উপমাহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তিটি।
কীভাবে যাবেন কুয়াকাটা?
একসময়ের ঢাকা-কুয়াকাটা ২৯৪ কিলোমিটার পথে সবচেয়ে ভোগান্তির জায়গা ছিল ছোট-বড় ১২টি ফেরি। সর্বশেষ ২০২১ সালের অক্টোবরে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত লেবুখালী সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই কুয়াকাটার সঙ্গে মেলবন্ধ তৈরি হচ্ছে দেশের সব জেলার। এখন বিভিন্ন বিলাসবহুল বাসে চড়ে খুব কম সময়ের মধ্যেই পৌঁছাতে পারবেন কুয়াকাটায়। দেশের যে কোনো স্থান থেকেই ইউনিক, হানিফ, শ্যামলী, গ্রিন সেন্টমার্টিন, প্রচেষ্টা, ইলিশসহ বেশ কয়েকটি বাসে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
ঈদের পর থেকে নাকি কোনো হোটেল, মোটেল কিংবা রিসোর্টেই জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই হোটেলে রুম বুকিং কনফার্ম করে তবেই যান।
পর্যটকদের থাকার জন্য কুয়াকাটায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল আছে। মান ও শ্রেণি অনুযায়ী এসব হোটেলে ৪০০-৫ হাজার টাকায় থাকতে পারবেন। হোটেল রুম ভাড়া কমাতে কয়েকজন মিলে শেয়ার করে থাকলে খরচ কম হবে। অবশ্যই হোটেল ভাড়া দামাদামি করে নেবেন।
জেএমএস/জিকেএস