বিশেষ প্রতিবেদন

ফেসবুক স্ট্যাটাসে মিললো কম্বল তোষক

একদিকে তীব্র শীত অন্যদিকে নদীর পানি ছোয়া ঠান্ডা বাতাস। শীতে কাহিল হওয়ার দশা। রাতে হাড় কাঁপানো শীতে পাকা ফ্লোরে পাতলা এক চাদরে দুই ভাজে শীত নিবারণের চেষ্টা। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া ইউনিয়নের বাছট বৈলতলা মুকদমপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার এতিমখানার শিশুদের এমনই দুরবস্থা। এমন দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে ফেইসবুকে এতিমদের জন্য কম্বল চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন এক সাংবাদিক।এদিকে শত ব্যস্ততার ভিড়েও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম এবং মিরপুরস্থ সাদিয়া কর্পোরেশনের মালিক সাজেদুল হকের নজরে আসে ফেসবুক স্ট্যাটাসটি। তাৎক্ষণিক ওই সাংবাদিককে জানান, তারা কম্বল কিনে দিতে আগ্রহী। উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বাছট বৈলতলা মুকদমপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য কম্বল কিনে দেন। অন্যদিকে শিশুদের জন্য কিছু সাহায্য করার সুযোগ হাতছাড়া না করতে ঢাকা থেকে তোষক বানিয়ে ওই মাদরাসায় ও এতিমখানার শিশুদের জন্য পাঠিয়ে দেন সাদিয়া কর্পোরেশনের মালিক সাজেদুল হক।সাজেদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, “আমাদের সন্তানেরা এসি রুমে ঘুমায়, দামি খাটের উপর থাকে বিদেশি ফোমের উপর ঘুমায়। অথচ দরিদ্র পরিবারের এই নিষ্পাপ শিশুগুলো একটা কম্বল এবং একটা তোষকের জন্য রাতে ঘুমাতে পারে না। কথাগুলো শুনে আমার কান্না পেয়েছিল। তাই সাধ্যের মধ্যে সহযোগীতার চেষ্টা করেছি মাত্র। সব সময়ই এই চেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় করেছি।” সাজেদুলের স্ত্রী মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার আলোকদিয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকা সুরাইয়া সিদ্দিকা বলেন, আমাদের অল্প সামর্থ্য থেকে আমরা সারাজীবনই এই দরিদ্র শিশুদের জন্য সাহায্য দেব। আমি চাই ওই শিশুগুলো আমার সন্তানের মতোই বেড়ে উঠুক।উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, “মানুষ তো মানুষের জন্যই। সিদ্বান্ত নিয়েছি আমার নিজের, স্ত্রীর এবং দুই সন্তানের ঈদের পোশাকের টাকাটা দিয়ে আমি এই এতিম শিশুদের জন্য প্রতি ঈদের নতুন পোশাক কিনে দেব।”বাছট বৈলতলা মুকদমপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সদ্য হাফেজ হওয়া আবু রায়হান বলেন বলেন, আমাদের মাদরাসাটি গাজী খালী নদীর পাশেই। টিনের চৌচালা ঘরটায় রাতের বেলা নদী থেকে আসা কনকনে হাওয়ায় অনেক কষ্ট হয়। তোষক এবং কম্বলগুলো পেয়ে আমরা খুব খুশি।অরেক হাফেজ মনির হোসেন বলেন, নাজমুল স্যার এবং সাজেদুল স্যার কেউ’ই আমাদেরকে চেনেন না। তারপরও আমাদের প্রতি তাদের আন্তরিক সহযোগীতায় আমরা মুগ্ধ। তাদের জন্য আন্তরিকভাবে দোআই করি। শেখ নাজমুল আলম এবং সাজেদুল হকের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাছট বৈলতলা মুকদমপাড়া হাফেজিয়া মাদরাসার মোহতামিম হাফেজ মাওলানা জয়নাল আবেদিন বলেন, আমাদের মাদরাসার সঙ্গে অন্যান্য হাফেজিয়া মাদ্রাসার কিছু পার্থক্য আছে। আমরা পবিত্র কোরআন মুখস্থ করানোর সঙ্গে সব শিশুদের বাংলা, ইংরেজি এবং বিজ্ঞান শিক্ষা দিচ্ছি।চলমান আর্থিক দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, এখানকার সব ছাত্রই মাদরাসার আশে-পাশের গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে থেকে প্রতিদিন খাবার নিয়ে এসে খায়। যদি কেউ ত্রিশ-চল্লিশ জন শিশুর তিন বেলা খাওয়ার জন্য একটি ‘লিল্লা বোর্ডিং’ বানিয়ে খাওয়ানোর খরচ বহন করতেন, তাহলে খুব উপকার হতো।জেইউ/আরএস/পিআর

Advertisement