রহস্যময় এক দ্বীপ। যেখানে ঢুকতে পারে না কেউই। একদল আদিম মানুষের বাস সেখানে। ওই দ্বীপের মানুষের সঙ্গে কোনো ধরনেরই যোগাযোগ নেই বিশ্ববাসীর।
Advertisement
বলছি আন্দামানের উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের কথা। বিশ্বের বেশ কয়েকটি স্থানের মধ্যে এটিও অন্যতম এক দ্বীপ যা এখনো অনাবিষ্কৃত।
এই দ্বীপের কূলে গেলেই জীবন নিয়ে ফেরা দায়। কারণ সেখানে বসবাসকারী আদিম মানুষেরা তাদের ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেয় না কাউকে।
২১ শতকের এই বিশ্বে এমন কোনো জায়গা থাকতে পারে যা অনাবিষ্কৃত বা নাগালের বাইরে। কথাটা অসম্ভব শোনালেও আন্দামানের উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপটি আজও কেউ আবিষ্কার করতে পারেননি। পাখির চোখেই শুধু সামান্য দেখা সম্ভব হয়েছে দ্বীপ ও এতে বসবাসকারী আদিম জনগণ।
Advertisement
এই দ্বীপে বাস করে আদিবাসী সেন্টিনেলিজরা। যারা স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্নতা বেছে নিয়েছে। বাকি বিশ্বের সঙ্গে তারা মোটেও যোগাযোগ করতে চায় না।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, এই দ্বীপে বসবাসকারীর সংখ্যা ১৫০ জনের মতো। তবে এটি নিশ্চিত বা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কারণ দ্বীপে ঢোকার অনুমতি গবেষকদেরও নেই।
১৯৫৬ সালের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসীদের সুরক্ষা আইনের অধীনে তারা সুরক্ষিত। যেহেতু দ্বীপটি হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বের সামনে কখনো আসেনি, তাই সেখানে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রোগের সংক্রমণও কম।
সে হিসেবে তাদের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে শূন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। এটিই হয়তো বিশ্বের একমাত দ্বীপ যেখানকার অধিবাসীরা জানেন না মহামারি কোভিড ১৯ সম্পর্কেও।
Advertisement
১৯ শতকের শেষের দিকে এই দ্বীপের উপজাতিদেরকে নিয়ে প্রথম জানার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। যা সেন্টিনেলিজদের জন্য বিপর্যয়কর হয়ে উঠেছে।
একজন সাদা চামড়ার অদ্ভুত ব্যক্তি (মরিস ভিডাল পোর্টম্যান) কয়েকজন সেন্টিনেলিজদের অপহরণ করে পোর্ট ব্লেয়ারে নিয়ে যান।
তবে অপহৃত দ্বীপবাসীরা অবিলম্বে অসুস্থ হয়ে পড়ে ও ৬ জনের মধ্যে ২ জন মারা যায়। বাকি চারজনকে দ্বীপে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এর পরে দ্বীপে প্রবেশ করার ও দ্বীপবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় ও তাদের সুরক্ষা আইন চালু হয়। এর পরেও অনেকেই ওই দ্বীপে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন তবে সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। ওই ঘটনার পর থেকে দ্বীপবাসীরা আরও সতর্ক হয়ে পড়েন।
১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে ভারতের নৃতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের তৎকালীন পরিচালক ত্রিলোকনাথ পণ্ডিত তার সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে যান ওই দ্বীপে। সেন্টিনেলিজদের সঙ্গে তারাই প্রথম শান্তিপূর্ণ যোগাযোগ করেছিলেন।
তবে দ্বীপবাসীদের ভাষাজ্ঞান না থাকায় ও পুরো দ্বীপে অ্যাক্সেস না পাওয়ায় তারাও তেমন কেনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি।
বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা দক্ষিণ সেন্টিনেলের সাথে উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপকেও বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা (আইবিএ) হিসেবে বিবেচনা করে। যদিও দ্বীপে কোন প্রজাতির পাখি আছে তা জানার কোনো উপায় নেই।
১৯৯৭ সালের মধ্যে ওই দ্বীপে সব ধরনের পরিদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০০৬ সালে দুই জেলে ও ২০১৮ সালে জন অ্যালেন চাউ নামক এক ব্যক্তি অবৈধভাবে উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে প্রবেশ করেছিল। ফলস্বরূপ দ্বীপবাসীদের হাতে তারা নিহত হন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/এএসএম