ধরা হচ্ছিল অধিনায়কত্বের চাপেই তার পারফরমেন্স হয়েছে খারাপ। অনেকেরই মত, নেতৃত্বর চাপই ব্যাটার মুমিনুলের ব্যাটের ধার কমিয়ে দিয়েছে। জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করেন, দল পরিচালনা নিয়ে বেশি ভাবতে ভাবতে অলক্ষ্যে নিজের ব্যাটিংয়ের ক্ষতি করে ফেলেছেন টেস্টে দেশের সবচেয়ে সফল উইলোবাজ মুমিনুল।
Advertisement
সুজনের অনুভব, ‘দলের কথা অনেক বেশি ভাবতেন মুমিনুল। টেস্টে কিভাবে দল হিসেবে উন্নতি করা যায়? আরও ভাল খেলা যায় এবং খারাপ দলের তকমা বদলানো কিভাবে সম্ভব? এসব নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করেছে সে। একটা সময় ব্যাটিংয়ের চেয়ে দলকে টেনে তোলার কথাই ছিল তার মাথায় বেশি। দল নিয়ে বেশি চিন্তাই মুমিনুলের ব্যাটিংটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
‘অধিনায়কত্ব ছেড়ে চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারলে হয়ত মুমিনুল আবার নিজেকে ফিরে পাবে। আবার তার ব্যাট হাসবে। আগের মত বড় বড় ইনিংস বেরিয়ে আসবে ব্যাট থেকে।’
শুধু টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন একা নন, অনেকেরই ধারনা ছিল- অধিনায়কত্ব ছেড়ে শুধু ব্যাটার হিসেবে খেললেই হয়তো ফর্ম ফিরে আসবে মুমিনুলের; কিন্তু সে আশার গুড়েবালি।
Advertisement
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার আগে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে সরে দাঁড়ানো মুমিনুল, প্রথম টেস্টে শুধু ব্যাটার হিসেবে খেলেও কিছু করতে পারেননি। তার ব্যাট আবারো ব্যর্থ। প্রথম টেস্টে উভয় ইনিংসে খারাপ খেলার কারণে দ্বিতীয় টেস্টে ড্রপও হয়েছেন অধিনায়ত্ব ছেড়ে দেয়া মুমিনুল।
অধিনায়কত্বের চাপমুক্ত হয়ে সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবে খেলেও কেন হাসলো না মুমিনুলের ব্যাট? তা নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। মুমিনুল নিজে কী ভাবছেন? তিনি কী হতাশ? আরও চিন্তিত?
খালি চোখে তাই মনে হচ্ছে; কিন্তু আসল খবর ভিন্ন। ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে টেস্ট খেলতে নেমে রানে ফিরতে না পেরে মোটেই চিন্তিত নন মুমিনুল। মুষড়েও পড়েননি তিনি।
তার অনুভব, ‘ব্যাপারটাকে খুব বেশি সিরিয়াসলি না নেয়াই ভাল। তাতে করে ভালোর চেয়ে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ বেশি চিন্তা করলে এবং এ নিয়ে মাথা ঘামালে অনেক নেতিবাচক দিক বেরিয়ে আসবে। তাতে করে মানসিক দিক থেকে আরও সমস্যা হতে পারে।’
Advertisement
আজ রাতে জাগো নিউজের সাথে নিজের সাম্প্রতিক ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মুমিনুল বলে ওঠেন, ‘আমি ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিয়ে এক টেস্টে ভালো খেলতে পারিনি, সত্য- তবে এ নিয়ে বেশি ভাবতে চাই না। তাতে করে ভালোর চেয়ে মাথায় খারাপ ও নেতিবাচক চিন্তাই আসবে বেশি। আমি বরং পজিটিভলি সব দেখতে চাই। ধীরে-সুস্থে চিন্তা ভাবনা করে নিজের ব্যাটিংয়ের খুঁটিনাটি দিকগুলো পর্যালোচনা করতে চাই। কোথায় কোন সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত করতে চাই। টেকনিক্যাল না ট্যাকটিক্যাল প্রবলেম তাও খুঁজে বের করার কথা ভাবছি।’
অধিনায়কত্ব ছেড়েও রান পাননি; কিন্তু তা নিয়ে হতোদ্যম না হয়ে ঠান্ডা মাথায় আগামী দিনের পথচলার কথা ভাবছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে ঈদের আগেই দেশে ফিরেছেন।
কক্সবাজারে নিজেদের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেলে রাজধানীতে পৌঁছেই জাগো নিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে গিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘আমি যে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েও রান না পেয়ে স্বাভাবিক আছি, তা শুনে আবার ভাববেন না আমি ক্যাজুয়াল। আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। আমি শতভাগ সিরিয়াস। আসলে এটাই আমার স্বভাব। আমি সবকিছু এভাবেই চিন্তা করি। চাপমুক্ত হয়ে খেলে এক টেস্টে রান পাইনি বলেই হতাশায় মুষড়ে পড়ার পাত্র আমি নই। আমি খুব সিরিয়াসলি নিজের আগামীর পথ চলার কথা ভাবছি।’
তাকে ‘এ‘ দলের সঙ্গে আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এটাকে কিভাবে দেখছেন মুমিনুল? তার জবাব, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে বলবো, আমাদের দেশে একজন সদ্য অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়া ক্রিকেটারকে ‘এ’ দলের সঙ্গে বাইরে খেলতে পাঠানোর কালচার কম। তবে আমি এটাকে নেগেটিভলিট দেখছি না। আমি পজিটিভ আছি। আমি বোর্ডের বেতনভুক্ত ক্রিকেটার। বোর্ড পাঠালে আমাকে যেতে হবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলতেও হবে। আমি অবশ্যই যাব।’
এআরবি/আইএইচএস