জীবন-জীবিকা, আয়-রোজগারসহ বহু বিষয় নিয়ে মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। উত্তম উপার্জন ও খাবার তা থেকে বাদ যায়নি। কিন্তু কোন উপার্জন ও জীবিকা বৈধ এবং নেক কাজ? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?
Advertisement
কোরআনুল কারিমে মহান রাব্বুল আলামিন জীবনঘনিষ্ঠ যত বিষয় নবি-রাসুলদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন; তার প্রায় সবই উম্মতের জন্য কল্যাণময় দিকনির্দেশকা। ঠিক তেমনি হালাল আয়-উপার্জন ও জীবিকার বিষয়টিও এমন। উত্তম আয়-উপার্জন ও জীবিকা যে আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় ও নেক কাজ; তা ওঠে এসেছে কোরআনে বর্ণনায়-
یٰۤاَیُّهَا الرُّسُلُ کُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعۡمَلُوۡا صَالِحًا ؕ اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ
‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার গ্রহণ কর এবং সৎকাজ কর; তোমরা যে কাজ কর আমি সে বিষয়ে বিশেষ অবগত।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৫১)
Advertisement
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা প্রথমেই পূতপবিত্র তথা হালাল বস্তু থেকে খাবার খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এরপর নেক তথা সৎ কাজ করার কথা বলেছেন। নবি-রাসুলদের উদ্দেশ্য করে বলা এ কথা শুধু নবি-রাসুলদের জন্যই নয়; বরং তা বিশ্ববাসীর জন্য পালন করা আবশ্যক।
এ নির্দেশের কারণেই ইসলাম মানুষকে বৈধ আয়-উপার্জনের মাধ্যমে রিজিকের সুন্দর ও উত্তম ব্যবস্থা করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ মর্মে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰکُمۡ وَ اشۡکُرُوۡا لِلّٰهِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اِیَّاهُ تَعۡبُدُوۡنَ
‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; যদি শুধু তারই উপাসনা করে থাক।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭২)
Advertisement
এ আয়াতেও আল্লাহ তাআলা ‘বিশ্বাসীদের’ সম্বোধন করে পবিত্র বস্তু থেকে খাবার খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; যে রিজিক মহান আল্লাহ তাদের দান করেছেন। নবি-রাসুলদের চেয়ে বড় বিশ্বাসী আর কে হতে পারে? আর তা ছিল মুমিন বান্দার প্রতিও নির্দেশ। এরপর হালাল বস্তু আহার করে তাঁরই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনই হলো সৎ কাজ তথা ইবাদত।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে উত্তম আয়-রোজগারের কথা বলেছেন। নিজেদের আয়-উপর্জনই সর্বোত্তম উপার্জন। হাদিসে এসেছে-
‘নিজের (প্রত্যেক ব্যক্তির) উপার্জিত আয়-ই অতি উত্তম বা বেশি ভালো।’
সুতরাং মানুষের উচিত, অলস বসে থেকে সময় অতিবাহিত করা নয়; বরং উত্তম আয়-রোজগারের জন্য প্রচেষ্টা করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া জীবিকা নির্বাহ করা। বৈধ আয়ের জীবিকা নির্বাহের পর আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। আর এটিই সর্বোত্তম আমল বা নেক কাজ।
মনে রাখতে হবে
ইসলামের আগমনের আগে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি উপায়ে উপার্জন করেছেন। একটি হলো শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন আর অন্যটি হলো ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন। এছাড়াও হাদিসে বর্ণনা করেছেন-
‘যত নবীগণ আগে অতিবাহিত হয়েছেন, (তাদের) সবাই বকরি চরিয়েছেন (কাজ করেছেন)। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনিও? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’! আমিও এক কবিলার ছাগল চরিয়েছি।’
ইসলামের আগমনের আগে প্রিয়নবির শ্রম এবং ব্যবসার মাধ্যমে উপর্জনও প্রমাণ করে যে, কাজ বা শ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করাই সর্বোত্তম নেক কাজ।
সুতরাং ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি-বাকরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থায় কাজ করা আবশ্যক। আর তা থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করাই সর্বোত্তম নেক কাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পূতপবিত্র বস্তু আহারের জন্য সঠিক উপায়ে কাজ কিংবা ব্যবসা করার তাওফিক দান করুন। হালাল বস্তু খেয়ে তার বিধান বাস্তবায়নে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম