জাগো জবস

স্বপ্নটা লুকিয়ে রেখেছিলাম : ইকবাল বাহার

ইকবাল বাহার কর্মজীবন শুরু করেন গ্রামীণ সাইবার নেট লিমিটেডে। সেখানে অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার এবং কোম্পানি সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই চাকরির ফলে ইন্টারনেট এবং আইসিটি তথা ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ের জ্ঞানটা ভালো করে রপ্ত করেন। এখান থেকেই আইসিটির প্রতি একটা ভালোবাসা তৈরি হয়। পরে নিজেই তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অপটিমাক্স কমিউনিকেশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। অ্যাসিস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে কাজ করেছেন গ্রামীণ শক্তিতেও। গ্রামীণ শক্তির উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত করেছেন তিনি। মাস্টার্স করার পর সিএ ও এমবিএ করেন। এরপর পেশা হিসেবে যুক্ত ছিলেন মার্কেটিংয়ে। আর এখন ব্যস্ত নিজের প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সংবাদ উপস্থাপনায়ও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। কাজের প্রয়োজনে গেছেন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, দুবাইসহ বেশ কয়েকটি দেশে। জাগো জবসের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।জাগো জবস : শুরুতেই পড়াশোনা ও চাকরি নিয়ে যদি কিছু বলতেন-ইকবাল বাহার : আমার সিএ করার পরপরই বিয়ে করতে হয়। তারপর আমি এক এক করে স্নাতকোত্তরসহ আরো কয়েকটি ডিগ্রি নেই। এখন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অপটিমাক্স দেখার পাশাপাশি টিভি-রেডিওতে খবর পড়ছি।জাগো জবস : অপটিমাক্সের সূচনা নিয়ে যদি কিছু বলতেন-ইকবাল বাহার : অপটিমাক্সের যাত্রা কিন্তু অতটা শুভ ছিল না। ১৮ মাসের মাথায় কোম্পানি বন্ধ হবার উপক্রম হল। যারপরনাই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ও অস্বাভাবিক পরিশ্রম করে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে  আজকের অবস্থানে পৌঁছতে হয়েছে। মাঝখানে কিছুদিন সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডে জব করেছি মহাব্যবস্থাপক হিসেবে। উদ্দেশ্য ছিল বহুজাতিক কোম্পানিতে জবের স্বাদ নেয়া ও কর্পোরেট জগতের কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করা। এটা ছিল অপটিমাক্সের শুরুর দিকে। তখন আমি সিঙ্গার কোম্পানিতে জব এবং অপটিমাক্সে একসঙ্গে কাজ করতাম। প্রতিদিন গড়ে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতাম। সিঙ্গারের অভিজ্ঞতা অপটিমাক্সের উন্নতির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সাহায্য করেছে।জাগো জবস : আপনার জীবনের বড় অর্জন কোনটি?ইকবাল বাহার : আজকের অপটিমাক্স-ই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমি ১২৫ জন মানুষের জন্য জব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। কেননা জব তৈরি করব, এটাই ছিল আমার বড় টার্গেট। জাগো জবস : অপটিমাক্স মূলত কী নিয়ে কাজ করে?ইকবাল বাহার : অপটিমাক্স ন্যাশনাল ওয়াইড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে সংশ্লিষ্ট সব সেবা নিয়েই কাজ করছে।জাগো জবস : শুরুতে অনেকেই বাধার সম্মুখীন হন; আপনার এমন কোনো অভিজ্ঞতা আছে কি? ইকবাল বাহার : সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডে যোগ দেয়ার ৬ মাসের মাথায় এবং অপটিমাক্সের শুরুর দিকে মারাত্মক সমস্যায় পড়ি। এসময় আমার প্রিয় বাবা মারা গেলেন। আমার চারিদিকে যেন শুধু অন্ধকার। তারপর থেকে আমার মা আমার কাছে। বাবা-মায়ের দোয়া আমার জীবনের সফলতার চাবিকাঠি। সবশেষে বলবো, আমার স্ত্রী চামেলি আমার জীবনে না এলে এবং ওর সহযোগিতা না পেলে আমার জীবনে অনেক কিছুই হতো না। সুতরাং আমি যা-ই পেয়েছি, সব মিলিয়ে আমি হ্যাপি। জাগো জবস : একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার যোগসূত্র কীভাবে?ইকবাল বাহার : একেবারেই শখ করে নিউজে আসা। সত্যি কথা বলতে, নিউজে আসার ইচ্ছে ছিল আরও ১০ বছর আগে। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে বুকের ভিতরে স্বপ্নটা লুকিয়ে রেখেছিলাম। যখন দেখলাম সবকিছু মোটামুটি গোছানো হল, তখন নিউজে এলাম। জাগো জবস : একই পরিবারের দু’জন কীভাবে সংবাদ পাঠ শুরু করলেন?ইকবাল বাহার : এটা ঠিক, বাংলাদেশে নিউজ প্রেজেন্টার হিসাবে মাত্র পাঁচ দম্পতি আছে। আমরা তাদের মধ্যে এক দম্পতি। তাই বিষয়টাকে খুব উপভোগ করি। জাগো জবস : আপনারা সংবাদ উপস্থাপনা কেমন ইনজয় করেন?ইকবাল বাহার : নিউজের সঙ্গে আমরা যুক্ত হই পুরোটাই শখের বসে। আমি আগে জব করতাম। এখন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আছি। যতদিন নিউজটাকে এনজয় করবো, ততদিন নিউজটা করবো। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে এনজয় করা উচিৎ ভালো কাজ দিয়ে। নিউজটাকে মনে হয়েছে একটা ভালো কাজ তাই করছি।জাগো জবস : এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনুভূতি যদি শেয়ার করতেন-ইকবাল বাহার : অবশ্যই, এটা একটা সম্মানজনক পেশা ও খুবই দায়িত্বপূর্ণ একটা কাজ। আমার কাছে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার সবচেয়ে প্রথম এবং প্রধান যোগ্যতা হল- একজন ভালো মানুষ হওয়া। আপনি দেখতে ভালো, উচ্চারণ ভালো, ডেলিভারি ভালো; কিন্তু মানুষ হিসাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নন; তাহলে কোন লাভ নেই, কোন আত্মতৃপ্তি নেই। আসলে প্রতিটি নিউজ প্রেজেন্টার যেন এক একটি গল্প, এক একটি উপন্যাস। কি পরিমাণ আত্মত্যাগ ও পাগল করা ভালোবাসা এদের জীবনে এই সংবাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে, তা বাইরে থেকে বোঝা যায় না।জাগো জবস : কার অনুপ্রেরণায় উপস্থাপনা পেশাটিকে ভালোবেসে ফেললেন?ইকবাল বাহার : স্কুলজীবন থেকেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে জড়িত থাকতাম। গান করতাম, উপস্থাপনা করতাম। চাকরি করার সময় সব কর্পোরেট প্রোগ্রাম উপস্থাপনা করতাম, বিভিন্ন বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দিতাম। রাজনীতি করি না, কিন্তু আমি খুবই রাজনীতি সচেতন, তাই সবসময় নিউজ দেখতাম। ওখান থেকে ভালোলাগা, তারপর নিউজের প্রতি ভালোবাসা।জাগো জবস : অনেকেই প্রশিক্ষণ কোর্স বা উপস্থাপনার সামান্য কিছু শিখেই উপস্থাপনা শুরু করেন; বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?ইকবাল বাহার : যারা নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার জন্য ১-৩ মাসের বিভিন্ন কোর্স করে আসেন, তারা যে সমস্যাটাতে ভোগেন তাহলো, নিউজ শুরু করার পর তারা আর অনুশীলন করেন না। সবচেয়ে জরুরি যে বিষয়টা তাহলো- আত্মবিশ্বাস এবং চর্চা।  নিউজ যখন শুরু হয় অর্থাৎ আমরা যখন অন-এয়ার মানে হট সিটে থাকি- তখন এ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। ওই সময়টুকুতে খুবই ব্যস্ত থাকতে হয়, ফাঁকির কোন সুযোগ নেই।জাগো জবস : উপস্থাপনা ছাড়াও অনেক কিছুতে জড়িত আছেন, কীভাবে এতগুলো কাজ মেইনটেন করেন?ইকবাল বাহার : এর জন্য দরকার- সময়টাকে ভাগ করে নেয়া। আমি যতক্ষণ জেগে থাকি তার পুরোটা সময়ই আমি কোনো না কোনো কাজ করি। আমি রাতেও অফিসের কাজ করি, আমার কাজের কোনো সময়সীমা নেই। মাঝে মাঝে লেখালেখিও করি। সামাজিক কিছু কাজ করি।জাগো জবস : আপনাদের মতো যারা হতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?ইকবাল বাহার : আমরা সবাই শিখছি প্রতিনিয়ত। আসলে, পরিবারে বোঝাপড়াটা ভালো থাকলে সব কাজই একসঙ্গে করা যায়। এক্ষেত্রে মজবুত বিশ্বাসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিবারের সব মেয়েরাই বাইরে কাজ করেন, আমি সবসময় তাদের উৎসাহ দেই।জাগো জবস : আপনার জীবনে টার্নিং পয়েন্ট কী?ইকবাল বাহার : পরিশ্রমের মাধ্যমেই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। আবার লিফটের মতো কেবল উপরে উঠলেই সফলতা পাওয়া যায় না। এর জন্য প্রত্যেকের জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট থাকে। যেমন আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছাসত্ত্বেও পড়া হয়নি। তবে এখন মনে হয় হয়তো প্রকৌশলী না হওয়াটাই ছিলো আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।জাগো জবস : সফলতা বলতে কী বোঝেন?ইকবাল বাহার : ভালো মানুষ হওয়া, ওটাই শেষ পর্যন্ত সফলতা। সততা, দক্ষতা ও লেগে থাকা- এই তিনটি হল সফল হওয়ার প্রধান চাবিকাঠি। জাগো জবস : আপনাকে ধন্যবাদ।ইকবাল বাহার : আপনাকে ও জাগো নিউজকে ধন্যবাদ।এসইউ/পিআর

Advertisement