মতামত

হেনা ও আয়েশা : ফ্যাশনে মুসলিম নারীদের অনুকরণীয় দুই তারকা

পুরনো আঁধারকে দূরে সরিয়ে কর্মজীবনে আলো ছড়াচ্ছেন মুসলিম নারীরা। সফলভাবে অতিক্রম করছেন প্রতিটি বাধা। এরমধ্যে সবচেয়ে চমৎকার দিক হচ্ছে, তারা সমাজ বা পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেনি, বরং পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে কাজ ও পরিবারের সাথে সূক্ষ্ম সেতুবন্ধন তৈরি করে নিয়েছেন। এ কারণে একদিকে যেমন তারা হয়েছেন স্বাবলম্বী, অপরদিকে তারা পেয়েছেন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।

Advertisement

উদ্যোক্তার মানসিকতা ধারণ করা এই মুসলিম নারীরা নিজেদের দক্ষতায় পেশাদারদের মতো নাম কামিয়েছেন রাজনীতি, প্রশাসন, উচ্চ শিক্ষা, খেলাধুলা, ব্যবসা, সামাজিক সক্রিয়তা ও স্টার্ট-আপেও।

এই মুসলিম নারীরা নিজেদের পরিচিত করেছেন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে। পণ্য বিক্রিতে দেখিয়েছেন অনুকরণীয় দক্ষতা। এ কারণে তাদের পণ্য শুধু বাজার দখল করেনি, আকৃষ্ট করেছে বিদেশি ক্রেতাদেরও। ভারতের এমন দুই নারীর কথা জানাবো আজ। যারা সফলতার সিঁড়িতে উঠে নিজেদের তুলে ধরেছেন অনুকরণীয় দুই তারকা রূপে।

হিনা রাহিল জোহারিবিশ্ব জুড়ে সাশ্রয়ী মূল্যে নারীদের মধ্যে ফ্যাশন কোর্সসহ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কোর্স পৌঁছে দিতে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের (আইএসকিউ) নিবন্ধিত ভার্চুয়াল একাডেমি ফর ফ্যাশন অ্যান্ড ফাইন আর্টস (ভিএএফএফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন হিনা রাহিল জোহরি।

Advertisement

নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি চালুর পরে এর মাধ্যমে তিনি এক সপ্তাহ থেকে এক মাস মেয়াদী মডেল কোর্স চালু করেন। এই কোর্সে যোগ দিয়ে অভিজ্ঞ ও পেশাদার টিউটরদের কাছ থেকে ঘরে বসে উপার্জনের উপায় খুঁজে পান প্রান্তিক নারীরা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের পরামর্শ ও পেশাগতভাবে প্রশিক্ষণের জন্য সাপ্তাহিক কর্মশালা করে। কোর্স শেষে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তাদের। যাতে তারা ব্যবসা শুরু করতে বাণিজ্যিক ঋণের জন্য আবেদন করতে পারে।

গত ১৩ বছর ধরে ফ্যাশন শেখানোর কাজ করছে তার এই প্রতিষ্ঠান। এ সময় তিনি স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী অনেক নারীর দেখা পান। ফলে এই কোর্স চালিয়ে যেতে আরও উৎসাহ পান তিনি। এ জন্যে প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেট নিয়ে ঘরে বসেই যাতে নারীরা আয় করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেন হিনা রাহিল। এভাবে মুসলিম মহিলাদের ক্ষমতায়নে নতুন দ্বার উন্মোচন করেন হিনা রাহিল জোহরি।

ফ্যাশন শিল্পে দক্ষতা ছড়িয়ে দিতে বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন জোহরি। এসব থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতায় তিনি তার প্রতিষ্ঠানের কোর্সের সিলেবাস তৈরি করেছেন। নিজের পরিকল্পনা ও চাওয়ার বিষয়ে জোহরি বলেন, আমি নারীদের ভেতরকার সৃজনশীল দক্ষতা তুলে আনতেই এই একাডেমিটি শুরু করেছি। সাশ্রয়ী মূল্যের কোর্সে তারা যাতে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারে সেদিকে নজর দিয়েছি। এতে করে তারা আরও স্বাধীন ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। আমি ও আমার সঙ্গীরা এটা বিশ্বাস করি বলেই একসাথে কাজ করছি। এমনকি ভবিষ্যতে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে চাইলে আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাবো।

আয়েশা ফাইয়াজ মেমনমাত্র কয়েক বছর আগেই প্রসাধনী ব্যবসা শুরু করে সফলতার মুখ দেখেছেন আয়েশা ফাইয়াজ মেমন। ত্বক ও চুলের যত্নের পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। তার পণ্যগুলো অ্যারোমাথেরাপির ওপর ভিত্তি করে জৈব ভেষজ উপাদান তৈরি করা হয়।

Advertisement

তিনি জানান, কলেজ জীবন থেকেই নিজের ব্যবসা করতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। কিন্তু অল্পবয়সে বিয়ে হওয়ায় তাকে পরিবারের দিকে মনোনিবেশ করতে হয়েছে। তবে বিয়ের সাত বছর পরে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ব্যবসার চিন্তা করেন তিনি। এরপর ছোট আকারে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন।

২০১৭ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ব্র্যান্ড ফ্যাব অ্যালুর চালু করেন আয়েশা। এরপর ধীরে ধীরে সেটি পরিচিতি পেলে মহিলাদের ফ্যাশন সৌন্দর্যবর্ধক পণ্য সম্পর্কে পরামর্শ দিতে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি নিয়মিত নারীদের চুল ও তাদের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, জন্মগতভাবে সকলের চামড়া ফর্সা হয় না, চকচকে চুল থাকে না। তবে চুল পড়া, রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বক, চোখের চারপাশে কালো বৃত্ত এবং খুশকির মতো সমস্যাগুলি বেশ সহজে নিরাময় করা যেতে পারে। একারণে এসব সমস্যা সমাধানে আমি এমন পণ্যের ব্যবসা শুরু করি।

বর্তমানে আয়েশা সফল একজন ব্যবসায়ী। একইসঙ্গে তিনি নারীদের ব্যবসা ও উদ্যোক্তা হওয়ার এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বও। তিনি বলেন, সব নারীকে জীবনে কিছু করা উচিৎ। ব্যবসা সেখানে সবচেয়ে বড় উপায় হতে পারে। এতে করে তাদের ভেতরকার নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর ও ইতিবাচক চিন্তা করার মানসিকতা তৈরি করবে। ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে সফল হতে ইতিবাচক মানসিকতার গুরুত্ব অপরিসীম।

এ ছাড়া ব্যবসার মাধ্যমে যে যোগাযোগ তৈরি করবে সেটাও জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

এইচআর/জেআইএম