সাহিত্য

রাইসুল এইচ চৌধুরীর চারটি কবিতা

চোখ খোলো প্রিয়া

Advertisement

অপেক্ষায় আছি বুনো ঘাসের ন্যায়;হলুদ অবয়ব শুকিয়ে ম্রিয়মান জলাতঙ্ক রোগীর ন্যায় পাণ্ডুর অবয়ব প্রতীয়মানসকল আবেগ যেন ধুয়েমুছে গেছে;মাতৃত্বহীন মৃত হরিণ শাবকের ন্যায়দাঁড়িয়ে আছি আমি মহাকাল থেকে;দেবদারুর সর্পিল দেহের মতোপলে পলে হয়েছি ক্ষত-বিক্ষত;আগ্নেয়গিরির খণ্ডিত লাভার ন্যায়তিলে তিলে গলে গলে পড়ছি; তোমার স্রোতস্বিনী নিষ্প্রভ আঁখির পরচোখ খোলো প্রিয়া;চোখ খোলো।

আর কতো অবগাহন করবো বেদনার নোনা জলে!ক্ষয়িষ্ণু মনের বারান্দা উঁইপোকায় খাচ্ছে দিবানিশি ভালোবাসা মরে গেছে বজ্রপাতে শুকিয়ে যাওয়া;তেমাথায় দাঁড়ানো বুড়ো বটগাছের মতো,অনুভূতির পাঁপড়িগুলো শুকোতে শুকোতে এখন নির্যাসহীন;পরাগায়নের অনুপযোগী মৃতপ্রায়!কষ্টের আঘাতে স্ফীত-পরিস্ফীত হয়েছে ধমনীর শাখা-উপশাখা নিশ্বাস লঘু হতে-হতে হয়েছে ক্ষুদ্র পশুর ন্যায়;বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি নাবালক শিশুর ন্যায়এখন আর স্নায়ুতন্ত্রের বন্দরে নোঙর ফেলে না—অনুভবের সাম্পান;চোখ খোলো প্রিয়া—পরাঙ্মুখ ভঙ্গিতে আর কতোকাল দাঁড়িয়ে থাকবো; তোমার চৌকাঠে!চোখ খোলো।

বিস্তীর্ণ কাঁথার মতো জড়িয়ে রেখেছো তুমিআগুনের লেলিহান শিখায়বিশ্বাস পুড়ে পুড়ে হয়েছে এখন সতীর সিঁদুরের মতো লাল টকটকে!পিঙ্গল বসন এখন রেখা ফেলেছে চোখের রেটিনায়;বেহিসেবী আঘাতে-আঘাতে গোলাপি চঞ্চু,বিধ্বস্ত নবজাতকের নাভির ন্যায়আনাড়ি ভালোবাসা ধুঁকছে গাভিন ধানের মতো;সকালে-বিকেলে সাঁওতাল রাতের জমকালো ক্যানভাসে,এবার চোখ খোলো প্রিয়াচোখ খোলো।

Advertisement

****

আঁখিজল

আজীবন কেঁদেছি যেননিজেই কেবল দু’চোখের জলে শুধু পুড়েছে কমলছলনার স্রোতে বধূমিছে মরীচিকা ধূ-ধূঝরেছে বাদল।

হৃদয়ে ঘুণের বাসাভেঙেছে মনের আশাহরিয়ান বিলে আজওখুঁজেছি যে তোমারে প্রিয়োঝিঙে ফুল দোলে দোলেমায়াবী চোখের ছলেএঁকেছে কাজল।

Advertisement

ভাবি বুঝি কাছে পাবোশিশিরের জলে ছোঁবো মেঘের মতো আঁখি কী করে যে মন রাখিদূর হতে ভেসে আসেআফ্রোদিতির বেশেকেশেরও আঁচল।

বন মৃগ কেন এলে!হৃদয়ের অঞ্চলে যাপিত জীবনে দ্বিধা বাড়ালে মনের ক্ষুধাকালের স্রোতে ভেসেঘুরেছি দেশে-বিদেশে হয়ে যে পাগল।

আজীবন কেঁদেছি যেননিজেই কেবল...

****

ভালোবাসা বোঝো না তুমি

বুকের ভেতরে জমানো ভালোবাসা জ্বলে দাউ-দাউ নিরবধি, কোনো সাগরের জলেই নেভেনি তা অদ্যাবধিনা পাবার জ্বালায় বেদুঈন প্রেম;ঘুরেফিরে প্রতিধ্বনিত হয়েছে সুগুতের টিলায়—ভাসমান প্রৌঢ় স্পর্শ জমেছে;কালো মেঘের ন্যায় ললাটের কোণেফিরে-ফিরে আসে তোমার সুনিপুণ চোখের দ্যুতি;বসফরাসের জলের ন্যায় খুমের সাগরে।

ভালোবাসা বোঝো না তুমি মেঘবালিকা!ঘোড়ার পায়ের শব্দে মিশে যাওয়া আলেপ্পেরঅলিগলি-রাজপথে, দূর থেকে ভেসে আসা স্পর্শের রিনিঝিনি শব্দেআমার বুকের পাঁজরে সেঁটে থাকাপ্রেমের আলখাল্লা দেখতে কি পাও না তুমি রাজকন্যা!

চোখের জলে ভেসে যাওয়া কায়াদের ডেরায়ভালোবাসা উঁকি দেয় মধ্যরাতে, চোখের বারান্দায়; ভালোবাসা বোঝো না তুমি সেলজুক রাজকন্যা তাই, পিষে পিষে বলি দাওভেড়ার পালের ন্যায় ধারালো খঞ্জরেকষ্টের ফেরিওয়ালা হয়ে ঘুরেফিরি এ বোবা রাস্তায়,অনাদরে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা সাঁওতাল নদীর জলে,আমার কষ্টের শুক্রাণু নিযুত সাঁতার কেটেওপায় না কো তোমার দেখা।

ভালোবাসা বোঝো না তুমি মেঘবালিকাতুমি বোঝো না—

****

একফোটা সুখ

যদি পারো সুখ দিওএকফোটা সুখ!একফালি চাঁদের ন্যায়একবিন্দু সর্ষের ন্যায়ভোরের শেষে মেঘের শেষেএকবিন্দু জলের ন্যায়যদি পারো সুখ দিওএকফোটা সুখ।

যদি পারো স্বপ্ন দিওএকপুকুর সুখের স্বপ্ন একরত্তি সুখের জন্য;একবেলা আধপেটেচোখের জলে বুক ভাসিয়ে বসে আছি এই শহরেযদি পারো মুছে দিওবুকের খাতার কষ্টগুলোশিরার মাঝের বর্জ্যগুলোধুয়েমুছে বিরান করোযদি পারো সুখ দিওএকফোটা সুখ।

দুঃখ-দুঃখ খেলতে খেলতেআমি বড় ক্লান্ত এখন! পথের মাঝে পথ হারিয়ে আমি বড় শ্রান্ত এখন!যদি পারো সোহাগ দিওনদীর সাথে জলের যেমনদীঘির সাথে শরের যেমনআমায় একটু সোহাগ দিওএক আজলা জলের ন্যায়একবিন্দু পলের ন্যায়আমায় একটু সোহাগ দিওঅবাক করা সোহাগ!

যদি পারো সুখ দিও একপলক সুখ!একপশলা বৃষ্টির ন্যায়একঝলক রোদের ন্যায়স্নানের শেষে জলের বানেঅশ্রুঝরা চোখের কোণে বুকের পাশেযতন করেআমায় একটু সুখ দিওঅবাক করা সুখ।

এসইউ/জেআইএম