কিশোরগঞ্জের চাঞ্চল্যকর শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার আজ ৬ বছর। ঈদের দিনে ওই হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন ৫ জন। বর্বরোচিত এ হামলার ঘটনায় এখনও আতংক কাটেনি এলাকাবাসীর। অভাব অনটনে দিন কাটছে নিহতদের স্বজনদের।
Advertisement
এদিকে দীর্ঘ ৬ বছরেও মামলার কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। আসামিদের আদালতে হাজির করতে না পারায় মামলা আটকে আছে চার্জ গঠনেই। দীর্ঘ ৬ বছরেও শুরু হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই। ঈদুল ফিতরের দিন। ঈদের দিন সকালে দলে দলে মুসল্লিরা যাচ্ছিলেন ঈদগাহের দিকে। মুসল্লিদের প্রবেশ পথে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ সদস্যরা। জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৩ লাখ মুসল্লি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে ঈদের জামাত। কিন্তু তার আগেই ঘটে বিপত্তি।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঈদগাহের কাছে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মুফতি মুহাম্মদ আলী মসজিদের সামনে তল্লাশির সময় পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালায় শসস্ত্র জঙ্গিরা। ওই হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন মোট পাঁচজন। ঈদগাহ মাঠ কিছুটা আড়ালে থাকায় এবং মাঠে মাইকের শব্দ থাকায় পাশে কী ঘটছে তা বুঝতে পারেননি মুসল্লিরা। তাই বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পায় লাখো মুসল্লি।
Advertisement
সেই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও শোকে বিহ্বল নিহত ও আহতদের স্বজনরা। এখনও রয়ে গেছে সেদিনের নৃশংসতার ক্ষতচিহ্ন। এখানে-সেখানে লেগে আছে গুলির দাগ। আসামিদের সময় মতো আদালতে হাজির করতে না পারায় বিচার কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে।
হামলার পর পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের দীর্ঘ সময় বন্দুকযুদ্ধ চলে। সেদিন জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন পুলিশের দুই কনস্টেবল ও এক গ্রহবধূ। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি।
এ সময় নিজের ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ঈদগাহের পাশের এলাকার বাসিন্দা ঝর্ণা ভৌমিক নামে এক গৃহবধূ। গোলাগুলির সময় আতঙ্কে স্বামী আর দুই ছেলেকে নিয়ে ঘরের মেঝেতে শুয়ে ছিলেন ঝর্ণা। এক সময় ওপর থেকে গামছা নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই জানালার স্টিলের পাত ভেদ করে একটি বুলেট এসে তার মাথায় বিদ্ধ হয়। মুহূর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। এখনও শোকে কাতর তার স্বজনরা।
টিনশেড ঘরের যেদিক দিয়ে গুলি ঘরের ভেতর ঢুকেছিল সেখানে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে গৃহবধূ ঝর্ণার ছবি। প্রতি বছর সেখানে পরিবারের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকেও।
Advertisement
ঝর্ণার স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিক বলেন, প্রতি বছর এ দিনটি আমাদের পরিবারে আসে বেদনা হয়ে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী বড় ছেলেকে একটি ব্যাংকে চাকরি দেন। ছোট ছেলেটির লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর হয়নি। অভাব অনটনে চলছে সংসার। জঙ্গিদের হাতে আমার মতো আর যেন কারও স্বজন হারাতে না হয়।
ঝর্ণার ছোট ছেলে শুভদেব ভৌমিক জানায়, এখনও মায়ের কথা মনে হলে মন খারাপ হয়। ঘুমের মধ্যে মাকে স্বপ্নে দেখে চিৎকার করে উঠি। মাকে খুব মনে পড়ে।
শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় ওই বছরের ১০ জুলাই কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় পরিদর্শক শামসুদ্দীন বাদী হয়ে হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করেন। ঘটনার পর শোলাকিয়া ও ঢাকার হলি আর্টিসান হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীকে আটক করা হয়।
তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে সারাদেশে শুরু হয় অভিযান। আটক করা হয় শীর্ষ জঙ্গিদের। হামলার সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। আহত অবস্থায় আটক করা হয় শফিউল ইসলাম ডন নামে আরেক জঙ্গিকে। পরে সেও মারা যায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে।
হলি আর্টিসানের পর নৃশংসতা বিবেচনায় এ হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে অন্যতম বর্বরোচিত ঘটনা। দুটি হামলাই চালায় একই জঙ্গিগোষ্ঠী। মামলার তদন্তে শোলাকিয়া হামলায় ২৪ জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় শীর্ষ পাঁচ জঙ্গিসহ ১৯ জন।
এফএ/জিকেএস