মতামত

নও পাকিস্তানি ও বাংলাদেশ

পুনম মুখার্জি ও মৃদুল হক তরুণ দম্পতি। শিক্ষকতা ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। থাকেন কলকাতায়। পুনম আমাদের গণহত্যা আর্কাইভ ও জাদুঘরের জন্য আর্কাইভ সমৃদ্ধ করার কাজ করছেন। পদ্মা সেতু যেদিন খোলা হলো (২৫ জুন) সেদিন আমাকে ফোনে বললেন, আপনাদের ওখানে তো আজ ঈদ, তাই না?

Advertisement

আমি বললাম, ঈদ তো রুটিন ব্যাপার। আজ ঈদের থেকেও বেশি। এতো উচ্ছ্বাস গত দশ ঈদেও দেখা যায়নি। পুনম জানালেন, ভারতের পত্রপত্রিকাও খবরটিকে এড়িয়ে যেতে পারেনি।

‘জাগো নিউজে’ কয়েকদিন আগে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছে। সেখানে আমাদের বয়সী বা আমাদের আগের জেনারেশনের পাকিস্তানিরা বাঙালদের সম্পর্কে যা ভাবতেন তার বিবরণ ছিল। পুনম সেটি পড়ে আমাকে জানালেন, আপনি কি জানেন পাকিস্তানের তরুণরা কী ভাবছে বাংলাদেশ সম্পর্কে। বললাম, না। পুনম বললেন, আমি আপনাকে কিছু ভিডিও পাঠাচ্ছি। বলে, একগাদা ভিডিও পাঠালেন।

পাকিস্তানের ইউটিউব চ্যানেল যেগুলো পরিচালিত হচ্ছে তরুণদের দ্বারা সেগুলো পাঠিয়েছেন পুনম। এদের বয়স ত্রিশ-পঁয়ত্রিশের বেশি নয়। এদের কথাবার্তা শুনে বোঝা গেল, ১৯৭১ সালের বোঝাটা তাদের কাঁধে নেই বা ১৯৭১ সম্পর্কে তারা তেমন কিছু জানে না। বা জানলেও সেগুলো নিয়ে তারা মাথা ঘামাতে চায় না কারণ বিষয়টি গৌরবজনক কিছু নয়। তবে, পদ্মা সেতু সম্পর্কে মন্তব্য শেষে কয়েকজন বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ একসময় পাকিস্তানের সঙ্গে ছিল। পাকিস্তানের হিস্যা ছিল। এখন সেটা আলাদা মুলুক।

Advertisement

যে দৃশ্যটি আমাকে অবাক করেছে তা হলো, কয়েকটি নিউজ চ্যানেলের অ্যাংকরের পরনের টি-শার্টে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পতাকার ছাপ। পাকিস্তানের পতাকাযুক্ত টি-শার্ট পরে আছে এখানে ঘুরে বেড়াবার ইচ্ছা হতে পারে হেজাবিদের। তবে, তারা এখনও সে সাহস করেনি। ধোলাই খাবার ভয়ে। পাকিস্তানি তরুণরা বিষয়টি অতিক্রম করতে চায়। তরুণ অ্যাংকররা খুবই হাসিখুশি। যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে তারাও স্মার্ট, আধুনিক। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগে ও পরের খবর আছে সংবাদগুলোতে।

একটি ভিডিওতে দেখি, দুজন তরুণ-তরুণী পদ্মা সেতুর খবর দেখাচ্ছে। মিনিট কয়েক শুধু সেতুর নির্মাণযজ্ঞ দেখানো হলো। মিউজিকের তালে তালে দুজনই মাথা নাড়ছেন। তরুণীটি খানিকটা বিষণ্ণ। যেন তার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে এমন একটি কাজ হলো, পাকিস্তানে হলো না। তরুণ অ্যাংকর বারবার জানালেন, সেতুর দৈর্ঘ্যের কথা। নদী তো নয় যেন সমুদ্র। তার ওপর এই ব্রিজ। কী পরিশ্রমের সাক্ষ্য! কী জবরদস্ত ডিজাইন! রাতে কী অপূর্ব দেখাবে ব্রিজটি। পরিশ্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এরকম দেশে থাকলে তো আরাম লাগে।

আরেকটি চ্যানেল জানালো, পত্রপত্রিকায় পদ্মা ব্রিজের খবরও কলাম ছাপা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনা ওয়াজেদের আত্মবিশ্বাস ও দূরদর্শিতার ফল পদ্মা ব্রিজ, সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে অনেকে বিশ্বব্যাংকসহ পাশ্চাত্য ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানে অসম্মতি ও কানাডিয় কোর্টের মামলার কথাও উল্লেখ করছেন। বারবার অ্যাংকর এ কথাই জানালেন, গত দশ বছরে বাংলাদেশ তার সক্ষমতা অর্জনের ক্ষমতা দেখালো বারবার।

আরেকটি চ্যানেলের অ্যাংকর, হাসিখুশি তরুণ। বাংলাদেশের পতাকার ছাপ তার টি-শার্টে। পদ্মা সেতুর একটা ছবি নিয়ে রাস্তাঘাটে, পার্কে তরুণ-তরুণীদের প্রশ্ন করছেন। প্রথমেই ছবিটি দেখিয়ে জানতে চাচ্ছেন, এটি কোন দেশের। কেউ উত্তর দিতে না পারলে জানাচ্ছেন এটি বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর। তারপর জানতে চাচ্ছেন পদ্মা সেতু সম্পর্কে তাদের মতামত। অনেকে আবার ছবি দেখে বলছেন, এটি পদ্মা সেতুর, এ ছবি তারা দেখেছেন ইন্টারনেটে। এক তরুণী এটি পদ্মা সেতু জেনে বললেন-*এটা সত্যি বাংলাদেশের? যদি হয় ভালো কথা। মানতেই হবে অনেক ডেভেলপ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম যখন ভারত বিভক্ত হলো তখন বাংলাদেশ আমাদের অংশ ছিল। পরে বাংলাদেশ আলাদা হয়ে যায়। কারণ তারা নিজেদের এক আলাদা পরিচয় তৈরি করতে চেয়েছে, বাঙালি যে এক আলাদা সত্তা, তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-প্রথাকে জীবিত রাখতে চেয়েছে এবং বাংলাদেশ তা করতে পেরেছে।

Advertisement

নিঃসন্দেহে আজ আমাদের থেকে তারা অনেক এগিয়ে গেছে। অনেকেই বলে বাংলাদেশকে বিভক্ত করেছে ভারত এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নে সহযোগিতা করে এগিয়ে দিচ্ছে ভারত কিন্তু এটা ঠিক নয়। পাকিস্তান এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি। বাংলাদেশ আমাদের থেকে আলাদা হয়ে তাদের টেকনোলজি, কারেন্সি, এডুকেশন সব দিক থেকেই পাকিস্তান থেকে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। আপনি যদি দেখেন আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় তাহলে বিষয়টা বুঝবেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে, বাংলাদেশের মূল্য কী? তাদের বিনিয়োগ পলিসি অনেক ভালো তাই অনেক বিদেশি রাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের দিকে আকর্ষিত হচ্ছে। তাদের নেতৃত্ব অনেক ভালো। তারা যে পলিসি তৈরি করে তাতে দেখুন বাংলাদেশ আজ কোথায় পৌঁছে গেছে। আজ আপনি আমাকে প্রশ্ন করছেন আর আমি ছবি দেখে ভাবছি এটা ইউরোপের একটি কান্ট্রি কিন্তু এটা আসলে বাংলাদেশ।

আরেক তরুণীর মতামত, এরকম ব্রিজ তো ইউকে-আমেরিকায় দেখা যায় কিন্তু এটা বাংলাদেশের। তবে এটি আমেরিকার নয়। আমেরিকার ব্রিজগুলো তারে ঝোলানো। তবে দুর্ভাগ্যবশত এটা বাংলাদেশের। আর আমি ফেসবুকে দেখেছি তাই বলতে পারছি, তবে এটা ভালো কথা কোন দেশ যদি তার জনগণ এবং দেশের প্রতি সিনসিয়ার থাকে তো যা আয় করে সেটা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগায়। এটা খুব ভালো সামর্থ্য। আর বাংলাদেশের জন্য আমার বার্তা হলো-দেখেন আপনার রাষ্ট্র আপনার উন্নয়নে কাজ করছে, দেশকে সহায়তা করুন। কারণ আরও বড় বড় রাস্তা বা অন্য কিছু যাতে দেশ আপনাকে দিতে পারে এতে আপনারই সুবিধা হবে।

-পদ্মা সেতুর ছবি দেখে আরেকজন বলছে- যে রকম পরিষ্কার পানি, যেরকম গঠন তা দেখে এশিয়ার তো মনে হচ্ছে না। এটা জাপান, প্যারিস কোনো ইউরোপ দেশের মনে হচ্ছে।

-আরেক তরুণও বলছে, এটা এশিয়ার তো মনে হচ্ছে না। এটা ইউরোপের। একজন বললো, আমেরিকা বা কানাডার হতে পারে।

-এক তরুণী বলল, এটা কোনো উন্নত দেশের। জাপান, চীন, ইংল্যান্ডের হবে কোনো ডেভেলপ কান্ট্রির। কিন্তু এটা বাংলাদেশের মনে হচ্ছে না। আর যদি হয়েই থাকে তো আর কি বলা যায়!

এক ছাত্রের বক্তব্য, মাশাআল্লাহ এটা বাংলাদেশের অনেক বড় অর্জন। দেখে খুব খুশি লাগছে। এরকম কনস্ট্রাকসন, আর্কিটেকচার তো পশ্চিমা বিশ্বের ট্রেন্ড ছিল। বাংলাদেশের এই অর্জন এখন পশ্চিমা বিশ্বকে হিট করছে। বাংলাদেশের অনেক ডেভেলপ হয়েছে। বাংলাদেশ একটা আইডিয়াল সোসাইটি তৈরি করছে। তারা আমাদের অংশ ছিল এখন এত ডেভেলপ করছে খুব ভালো।

আরেক তরুণ বললেন, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এর খোঁজখবর আমার কাছে ছিল। বাংলাদেশের মধ্যে এটা সবচেয়ে কমপ্লেক্স স্ট্রাকচার, যা চায়নার কো-অর্ডিনেশনে এখন তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর পাকিস্তানের জন্য আমার বক্তব্য এটাই যে, পাকিস্তানও যেন তার রোড-ইনফাস্ট্রাকচারের দিকে নজর দেয় এবং সামনে এগিয়ে যায়।

আরেকজন ছাত্র বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। এটা বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কমপ্লেক্স স্ট্রাকচার আর ব্রিজের মধ্যে যে রেল এবং বাসের আলাদা রোড ফ্লাই করছে এটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন এবং পাকিস্তানও যেন তা ফলো করে।

পাকিস্তানি জনপ্রিয় টিভি মিডিয়া দ্য টুডে’র সংবাদদাতার বক্তব্য-আজকে কথা বলব পদ্মা সেতু নিয়ে। করোনা মহামারির ফলে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি যখন খারাপ প্রভাব ফেলছে ঠিক ওই সময়ে বাংলাদেশ পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করে উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু জুনের ২৫ তারিখ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের এক আবেগের নাম। বাংলাদেশীদের প্রয়োজনীয়তার আরেক নাম পদ্মা সেতু। পাকিস্তানে সিকাপ প্রকল্পকে যেভাবে দেখা হয়, পদ্মা সেতু বাংলাদেশীদের কাছে সে রকম, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পরিবর্তন করে দেবে। পাকিস্তান যেখানে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ ভিক্ষা চাচ্ছে আইএমএফ-এর কাছে, পাকিস্তান যেখানে আইএমএফ-এর চক্রজালে আবদ্ধ, বাংলাদেশ সেখানে কারও সহযোগিতা ছাড়াই মেগা প্রজেক্ট তৈরি করছে।

ইউরোপ এবং অন্যান্য রাষ্ট্র যখন চাপ তৈরি করেছিল পদ্মা সেতু যাতে না বানায় সেখানে শেখ হাসিনা ওয়াজিদ সব চাপ অগ্রাহ্য করে এগিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমাদের দেখাতে চেয়েছিলেন যে তাদের সাহায্য ছাড়াও বাংলাদেশ মেগা প্রকল্প তৈরি করতে পারে। এতে বাংলাদেশের সম্মান বিশ্ববাজারে বেড়েছে। কোন দেশ এবং কোন ব্যাংক বাধা সৃষ্টি করেছে তা এখানে দেখাবো।

তবে আগে এর সুবিধা দেখাবো- ৭০ মিলিয়ন লোক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যাতায়াত করতে পারবে, সময় অনেক বেঁচে যাবে এবং কৃষকের প্রচুর মুনাফা হবে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লোকজনের মনে খুশির জোয়ার তৈরি হয়েছে। আমাজন নদীর পরে দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী হলো পদ্মা। যার স্রোত এত বেশি যে বলার নয়। একশ বছরে পদ্মা তার বহু রূপ দেখিয়েছে, যার ফলে এখানে সেতু নির্মাণ ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে কাজ শুরুর কথা থাকলে পরে তা হয়নি। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ চাইলে বিশ্বব্যাংক ইউরোপীয় দেশসমূহের প্ররোচনায় বাংলাদেশের নামে দুর্নীতির অভিযোগ আরোপ করে। পরে কানাডিয়ান আদালতে সেটার মীমাংসা হয় যে পদ্মা সেতু নিয়ে শেখ হাসিনা কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নেয়নি। শেখ হাসিনা সেটার মোকাবিলা করে ২০১৪ সালে ঘোষণা করে কারও সহযোগিতা ছাড়াই বাংলাদেশ পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারবে।

২০১৪ সালে এর কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ দাবি করেছিল বিশ্বব্যাংক যেন বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায়। এরপর যখন বিশ্বব্যাংকের প্রধান ঢাকা সফর করেন তখন তিনি এই বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। এর সাথে জাপানি রাষ্ট্রদূতও আফসোস করে বলেন আমরা বাংলাদেশের এই মেগা প্রকল্পের সাথে যুক্ত না হতে পারাটা দুঃখজনক।

কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর বিশ্বব্যাংক ও অন্য দাতা সংস্থাগুলো পুনরায় অর্থ সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করে অফার করেছিল কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে নিজের অর্থায়নেই সেতুর কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর কাজ শুরুও হয়ে যায়। এখানে অনেকেই মনে করে পদ্মা সেতু চীনা সরকার করে দিচ্ছে। আসলে চীনা কোম্পানিকে বাংলাদেশ সরকার এই সেতু তৈরির কাজ দিয়েছে। সেতু তৈরির পুরো ৪ বিলিয়ন অর্থ জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

পাকিস্তানে হামিদ মীর বিখ্যাত সাংবাদিক। তাঁর বাবাও ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ওয়ারেস মীর। এক ইউটিউবার জানাচ্ছেন, মীর এক টুইট করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর। সেখানে ডলারের দাম ৯৩ টাকা। পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছে ৭৫ বছর। এখানে ডলারের দাম ২০০ রুপির বেশি? বাংলাদেশ কীভাবে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে গেল। প্রচুর মন্তব্য এসেছে সেখানে। সঞ্চালক তার কয়েকটি পড়ে শোনালেন-

১. বাংলাদেশে মোল্লাদের দৌড় মসজিদ পর্যন্ত আর সেনাবাহিনী থাকে ক্যান্টনমেন্টে। বাংলাদেশের আইন আদালত আলাদা। সেজন্য বাংলাদেশ তরিক্কি করছে আর পাকিস্তানকে আইএমএফের সামনে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।

২. শেখ মুজিবকে যে ১১ জেনারেল হত্যা করেছিল (সঠিক নয়) তাদের বিচার করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে (পাকিস্তানের কথা ভেবেই তিনি এরকম উত্তর দিয়েছেন) হাসিনা বলেছেন, কাকুলে প্রশিক্ষিতদের হটিয়ে পার্লামেন্টকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ৩. আরেকজন ঠাট্টা করে লিখেছেন- বাংলাদেশে জারদারি ও নওয়াজ শরিফ নেই। তাই তরিক্কি হয়েছে বাংলাদেশের। ৪. একজন লিখেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে তার সীমানা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তাই বাংলাদেশ এগিয়েছে। ৫. সেখানে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ আছে, সোলার প্যানেলে সস্তা বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে তাই সব চলছে। এক কওম, এক জবান তাই উন্নতি হচ্ছে। ৬. নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। জেনারেলদের সাইড লাইনে রাখা হয়েছে।

আকারে ইঙ্গিতে সবাই পাকিস্তানের দুর্গতির জন্য জেনারেলদের কথা বলছেন, যা মিথ্যা নয়। এক প্রবীণ বলছেন, পাকিস্তানে সেনাদের জন্য জিডিপির ৫ ভাগ আর বাংলাদেশে খরচ হয় ১ ভাগ। এখানেই তো পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া পাকিস্তানে নীতি ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। তো বিদেশিরা কেন এখানে বিনিয়োগ করবে?

এরকম অনেক ইউটিউব পাওয়া যাচ্ছে। একটি কথাই বারবার ধ্বনিত হচ্ছে- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক অন্য বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে। তারা মোবারকবাদ জানাচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভেতরে একটা চাপা কষ্ট আছে। প্রায় পঁচিশ বছর আগে যখন পাকিস্তান যাই তখন করাচিতে এক নৈশভোজে আহমেদ বাওয়ানীর পরিবারের একজন আমাকে বলেছিলেন, পাকিস্তান ভেঙে ভালো করেছেন। এগিয়ে যান।

সে কথা মনে হচ্ছে আজ। হ্যাঁ, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু একটা চাপা কষ্টও আছে সবার মনে। শেখ হাসিনা জানমান সব দিচ্ছেন কিন্তু সাংস্কৃতিক জিডিপি বাড়ছে না। দুর্নীতির মতো অজ্ঞতা, কুসংস্কার বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারি, ঋণখেলাপিদের যাবতীয় সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, শিক্ষার মানের দ্রুত অবনতি হচ্ছে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখুন। ১০ শতাংশও পাস করেনি)|

উর্দু সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক ছিলেন সাদত হোসেন মান্টো। ভারত ভাগের পর অনেক মুসলমান লেখক থেকে গিয়েছিলেন ভারতে। মান্টো চলে এসেছিলেন পাকিস্তান। নানা নিগ্রহ সহ্য করে দুস্থ অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগে তাঁকে একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনার দেশের খবর কী?’‘কারাগারে জুমার নামাজে যে দৃশ্য হয় অবস্থা ঠিক তেমন’ বললেন মান্টো। [এ অভিজ্ঞতা আমার আছে]। ‘সেটি কেমন?’ আবার প্রশ্ন।‘আজান দেয় বাটপার, ইমামতি করে খুনি, পেছনে নামাজ পড়ে সব চোরের দল।’পাকিস্তানের অবস্থা এখনও এরকম। ফেসবুকে কেন যেন এই মন্তব্যটা বারবার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। আল্লাহ যেন বাংলাদেশকে হেফাজত করেন। শেখ হাসিনাকে সুস্থ রাখেন।

লেখক: ইতিহাসবিদ। বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/ফারুক/এএসএম