ফিচার

স্মারক নোট বা মুদ্রা দিয়ে কি কেনাকাটা করা যায়?

আমরা জানি, বিভিন্ন সময়ে স্মারক নোট বা মুদ্রা উন্মুক্ত করা হয়। এই স্মারক নোট বা মুদ্রা আসলে কী? সাধারণভাবে বলতে গেলে, স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশে রচিত বা নির্মিত কোনো কিছুকেই স্মারক বলা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানের স্মারক নোট বা মুদ্রা অবমুক্ত করে। আসুন তাহলে জেনে নিই এর আদ্যোপান্ত—

Advertisement

স্মারক নোট বা মুদ্রা কী?কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, স্থান ও ঘটনাসমূহকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যে প্রতীকী মুদ্রা বা নোট ছাপে, তা-ই হচ্ছে স্মারক নোট বা মুদ্রা।

বাংলাদেশের স্মারক নোট বা মুদ্রাবাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন উপলক্ষে স্মারক মুদ্রা বা নোট প্রকাশ করা হয়েছে—১. বাংলাদেশের ২০তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯৯১ সালে (ফাইন সিলভার) ১ টাকার মুদ্রা২. বিশ্ব অলিম্পিক গেমসের ২৫তম আসর উপলক্ষে ১৯৯২ সালে (ফাইন সিলভার) ১ টাকার মুদ্রা৩. বাংলাদেশ ব্যাংকের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৬ সালে (ফাইন সিলভার) ১০ টাকার মুদ্রা৪. বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৬ সালে (ফাইন সিলভার) ১০ টাকার মুদ্রা৫. বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ১৯৯৮ সালে (১০০% নিকেল) ১০ টাকার মুদ্রা৬. বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ১৯৯৮ সালে (৯০% ফাইন সিলভার ও ১০% নিকেল) ২০ টাকার মুদ্রা৭. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২০০০ সালে (২২ ক্যারেট স্বর্ণ) ২০ টাকার মুদ্রা৮. আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে ২০১১ সালে (ফাইন সিলভার) ১০ টাকার মুদ্রা৯. বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে ২০১১ সালে (ফাইন সিলভার) ১০ টাকার মুদ্রা১০. বাংলাদেশের বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১১ সালে (ফাইন সিলভার) ৪০ টাকার মুদ্রা১১. বাংলাদেশের বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১১ সালে ৪০ টাকার নোট১২. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ৯০ বছর উপলক্ষে ২০১১ সালে (ফাইন সিলভার) ১০ টাকার মুদ্রা১৩. ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১২ সালের ৬০ টাকার নোট১৪. দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৩ সালে ২৫ টাকার নোট১৫. বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শত বছরপূর্তি উপলক্ষে ২০১৩ সালে ১০০ টাকার নোট ১৬. বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া উপলক্ষে ২০১৮ সালে ৭০ টাকার নোট১৭. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালে ১০০ টাকার নোট১৮. বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালে ৫০ টাকার নোট১৯. পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে ২০২২ সালে ১০০ টাকার নোট।

নোটের মান অনিয়মিত হয়বাজারে প্রচলিত মুদ্রা থেকে স্মারক নোট বা মুদ্রাকে আলাদা করার জন্য এ নোট বা মদ্রার মান সাধারণত অনিয়মিত হয়। যেমন- ২৫, ৪০, ৬০, ৭০ প্রভৃতি। তবে কখনো কখনো প্রচলিত মানের নোটও ছাপা হয়ে থাকে। যেমন- ১০, ২০, ৫০, ১০০ প্রভৃতি।

Advertisement

কোথায় পাওয়া যায়বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করতে যেসব সম্মানিত অতিথি আসেন, তাদের এ স্মারক নোটগুলো উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসসহ অন্যান্য শাখা অফিসের ক্যাশ বিভাগের নির্দিষ্ট কাউন্টার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা থেকে সর্বসাধারণের কাছে নগদে বিক্রি করা হয়।

মূল্য কতস্মারক মুদ্রা বা নোট বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। কখনো কখনো নোটে উল্লেখিত মানেই বিক্রি হয়ে থাকে। যেমন- ২৫ টাকা মানের নোট ২৫ টাকাই বিক্রি হয়। তবে এগুলো যখন ফোল্ডার আকারে বিক্রি হয়, তখন দাম একটু বেশি হয়। যেমন- ৪০ টাকার নোটের স্মারক ফোল্ডার মূল্য ১৬০ টাকা। এমনকি ২০ টাকা মানের মুদ্রা ৫০,০০০ টাকাও বিক্রি করা হয়।

কী কাজে লাগেস্মারক নােট বিনিময়যোগ্য নয়। এ নোট দিয়ে কোনো প্রকার কেনাকাটা করা যায় না। এ ধরনের নােট কেবল সংগ্রহ করে রাখা যায়। এগুলো স্মৃতি হিসেবে বা অনেক সংগ্রাহক তার সংগ্রহশালা সমৃদ্ধ করার জন্য কিনে থাকেন। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন মুদ্রা জাদুঘরে বাংলাদেশের স্মারক নোটগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে।

এসইউ/এএসএম

Advertisement