সাহিত্য

তাইজুল ইসলামের অনুগল্প: মেয়াদোত্তীর্ণ

বারান্দায় বই পড়ছে কল্পিতা। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। বই বন্ধ করে ছুটে যায় দরজায়।‘আরে আরে, আপনি এই রাত্রিবেলায়!’ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা ভিক্ষুক প্রায়ই তার চালের পুটলিটা কল্পিতাদের বাসায় রেখে যায়। সেটা নিতেই এসেছে। আঁচলে পেঁচিয়ে প্রায়ই এটা-ওটা নিয়ে আসে। আজ নিয়ে এসেছে দুটো সাবান; এক ভদ্রমহিলা দিয়েছে তাকে।‘সাবান দুইডা নিয়া আমারে একশ টাহা দিবি বু?’লাইফবয় এবং কসকো সাবান কল্পিতার ভীষণ পছন্দের। ও অমনি বইয়ের ভেতর থেকে একশ টাকার কচকচে একটি নোট বের করে। বুড়ির হাতে নোটটা ধরিয়ে দিয়ে সাবান দুটো নিয়ে নেয়।

Advertisement

দরজার আড়াল থেকে সবটা দেখছেন বাবা। বুড়ি চলে যেতেই বেরিয়ে আসেন। সাবান দুটোর মোড়ক দেখতে বেশ পুরোনো লাগছে বলে হাতে নিয়ে ভালো করে দেখেন কল্পিতার বাবা।‘আরে মা! এই সাবানের তো আরও পাঁচ বছর আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তাছাড়া দামও মাত্র ছিয়াত্তর টাকা। তুমি দেখে নাওনি?’‘আমি দেখেই নিয়েছি বাবা।’‘তাহলে?’‘দেখো বাবা, জিনিসপত্রের মেয়াদ থাকে তাই উত্তীর্ণ হতেই পারে। কিন্তু মানুষের আশার তো কোনো মেয়াদ বাঁধা থাকে না, তাই না? বুড়ি বড্ড আশা করে এসেছে, সাবান দুটো বেচে কিছু টাকা আয় করবে। এমনি এমনি তো আর নিতে চায়নি! মেয়াদের দোহাই দিয়ে বুড়িকে নিরাশ করি কী করে, বলো তো?’

মেয়ের দিকে অবাক চোখে চেয়ে থাকেন কল্পিতার বাবা নিপেন বাবু। আর মনে মনে বলতে থাকেন, ‘পৃথিবীতে সব জিনিসপত্রের মতো মানুষের বিবেকেরও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, তবে সবার বিবেক নয়।’

লেখক: সম্মান ৪র্থ বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, গোপালগঞ্জ।

Advertisement

এসইউ/এমএস